বছর শেষ হতে চললেও ডেঙ্গুর প্রকোপ এখনো শেষ হচ্ছে না। সাধারণত মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমাদের দেশে বৃষ্টিপাতের মৌসুম। এ সময় বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে। এই জমে থাকা স্বচ্ছ পানি ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বংশবিস্তারের জন্য উপযোগী। কিন্তু চলতি বছর দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। গত নভেম্বর থেকে বলতে বৃষ্টি নেই। আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, চলতি বছরের মধ্যে চট্টগ্রামে গত মাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই ডিসেম্বরের শীত মৌসুমেও গতকাল বুধবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে আক্রান্ত হয়েছে দুই শতাধিক এবং মৃত্যু হয়েছে দুইজনের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ডেঙ্গুর প্রবণতা এখন সারাবছর ধরে চলতে থাকবে। বিশেষ করে ডেঙ্গুর ভ্যারিয়েন্ট ডেন–২ এর সাব ভ্যারিয়েন্ট কসমোপলিটনে আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এক্ষেত্রে যাদের ক্রনিক ডিজিজ বা দীর্ঘমেয়াদি রোগ রয়েছে তাদের ঝুঁকি বাড়ে কয়েকগুণ বেশি। এছাড়া জ্বরকে পাত্তা না দিয়ে অবহেলা করে। যখন শারীরিক অবস্থার খারাপের দিকে যায় তখন তাড়াহুড়ো করে হাসপাতালে ছুটেন। বলা যায়, দেরিতে হাসপাতালে ভর্তিই মৃত্যুর অন্যতম কারণ। এছাড়া ডেঙ্গু ভাইরাস হয়তো মিউটিউশন ঘটিয়ে আরো শক্তি সঞ্চয় করছে কিনা সেটিরও গবেষণার দরকার আছে।
এদিকে গতকাল সিভিল সার্জন কার্যালয় প্রাপ্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চট্টগ্রামে গতকাল নতুন করে আরও ২২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া টুম্পা নামের ১০ বছর বয়সী এক শিশু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। নগরীর বায়েজিদ এলাকার বাসিন্দা বাসিন্দা টুম্পা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে মারা যায় বলে চিকিৎসকরা মৃত্যু সনদে উল্লেখ করে।
এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে পাঁচজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া চলতি বছরে গতকাল পর্যন্ত ৪ হাজার ১৭১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে নগরীতে ২ হাজার ৬৭৬ জন এবং উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৯৭ জন। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪৩ জনের। চলতি ডিসেম্বরে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২০৮ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২ জনের।
গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে বর্তমানে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১৫ জন, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে ২ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৩ জন এবং চট্টগ্রাম সিএমএইচ হাসপাতালে ১ জন। চলতি বছর মোট আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ২ হাজার ২১০ জন পুরুষ, ১ হাজার ১৯৬ জন নারী এবং ৭৬৫ জন শিশু রয়েছে।
জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এএসএম জাহেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ডেঙ্গু মোকাবেলায় আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। এখন বৃষ্টি নাই, তারপরেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। এখন বৃষ্টিই এডিস মশার বংশবিস্তারের একমাত্র প্রভাবক নয়। বিশেষ করে এখনো যে পরিমাণ শীত পড়ার কথা সেভাবে শীত পড়ছে না। এছাড়া ডেঙ্গু ভাইরাসটি মিউটিশন হচ্ছে কিনা সেটিও গবেষণার দরকার আছে। ইতোমধ্যে ডেন–২ ভ্যারিয়েন্টের আক্রান্তের খবর গবেষণায় উঠে এসেছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হলে সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে। বাড়ির আশপাশ পরিস্কার রাখা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কর্মসূচি আরো বেগবান করা এবং সর্বোপরি মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা কীটতত্ত্ববিদ মোছাম্মৎ এনতেজার ফেরদাওছ দৈনিক আজাদীকে বলেন, শীত বাড়ার সাথে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসবে। এডিস মশার বংশবিস্তারের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হচ্ছে ২৬ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। আশা করছি, আর এক সপ্তাহ পর থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমবে।
চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ ধীরে ধীরে কমে আসছে। সামনে আরো কমবে।