ভয়াবহ করোনা মহামারী দ্বিতীয়বারের মতো তার কড়াল থাবা বসাচ্ছে ক্রমাগত। এ অবস্থায় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের সব ধরনের দোকান, শপিংমল, রেস্টুরেন্ট সন্ধ্যা ৬ টার পর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে শুধু নিত্যপণ্যের বাজার ও জরুরি ওষুধের দোকান। গতকাল শুক্রবার (২ এপ্রিল) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে দুপুরে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আজাদীকে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। তিনি বলেন, আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে চট্টগ্রামের সব খাবার হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিং সেন্টার, বিপণি কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হবে। শুধু ওষুধের দোকান ও কাঁচাবাজার খোলা থাকবে। নির্দেশনা অমান্য করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ২ হাজার ৫৩৫টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫১৮ জনের। শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ সময়ের মধ্যে করোনায় মারা গেছেন ১ জন। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ হাজার ৮০১ জন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে নগরীর ৪৩৬ জন এবং বিভিন্ন উপজেলার ৮২ জন।
এর আগে গত ১ এপ্রিল বিনোদন কেন্দ্র, পর্যটন স্পট, মেলা ও সিনেমা হল আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া করোনার সংক্রমণ রোধে আরও ১৭ টি নির্দেশনা জারি করেছে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন।
এবারের নতুন নির্দেশনায় সকল ধরনের জনসমাগমও (সামাজিক/ রাজনৈতিক/ ধর্মীয়! অন্যান্য) বন্ধ করা হল। মসজিদসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণ ক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতে আন্তঃজেলা যান চলাচল সীমিত করতে হবে; প্রয়োজনে বন্ধ রাখতে হবে। বিদেশ হতে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক (হোটেলে নিজ খরচে) কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে।
নির্দেশনায় আরও আছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী খোলা/ উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনপূর্বক ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে; ওষুধের দোকানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসমূহে মাস্ক পরিধানসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। সন্ধ্যা ৬ টার আগ পর্যন্ত খোলা থাকা শপিং মলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাদ্রাসা, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। বাইরে গেলে মাস্ক পরিধানসহ সকল ধরনের স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক পরিধান না করলে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি লক্সিঘত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। করোনায় আক্রান্ত/ করোনার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ট সংস্পর্শে আসা অন্যদেরও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে।
জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস/ প্রতিষ্ঠান শিল্প কারখানাসমূহ ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করতে হবে। গর্ভবতী/ অসুস্থ/ বয়স ৫৫ ঊর্ধ্ব কর্মকর্তা/ কর্মচারীর বাড়িতে অবস্থান করে কর্ম সম্পাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে। সশরীরে উপস্থিত হতে হয় এমন যে কোনো ধরনের গণপরীক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। দিনের বেলাতেও হোটেল-রেস্তোরাঁসমূহে ধারণ ক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক মানুষের প্রবেশ বাতিল করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন সর্বদা বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। এসব শর্ত ও নির্দেশনা না মানলে আইনলক্সঘনকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় গতকালের গণ বিজ্ঞপ্তিতে। এক্ষেত্রে তা প্রতিপালনে সন্ধ্যা থেকেই মাঠে নামছে পুলিশ।