আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, চট্টগ্রামবাসীর একটি দাবি আছে মেট্রোরেল। আমরা চট্টগ্রামে মেট্রোরেল করব। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কাজ খুব দ্রুত করব। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হবে দেশের দ্বিতীয় এক্সপ্রেসওয়ে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ফিজিবিলিটি স্টাডি একবার করেছিল। এখন দ্বিতীয়বার করছি। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ চট্টগ্রাম মহানগরের ভার্চুয়াল সম্মেলন গতকাল শনিবার নগরীর লালখান বাজার মোড় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ঢাকার নিজ বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কাদের বলেন, চট্টগ্রামকে ঢেলে সাজাতে আমাদের নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি) বদ্ধপরিকর। কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ ৬৯ শতাংশ শেষ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী বছরের শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এইচ এম জিয়াউদ্দিনের সভাপতিত্বে বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত সম্মেলন উদ্বোধন করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি অংশ নেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন প্রমুখ। প্রধান বক্তা ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু।
মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকের বাংলাদেশ ১২ বছর আগে পিছিয়ে পড়া একটি বাংলাদেশ। আজ ১২ বছর পরে এই বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশের চেহারা বদলে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। যে বাংলাদেশ ছিল একটি ঋণগ্রস্ত দেশ, আজ সেই বাংলাদেশ ঋণদাতা দেশ। ভাবতে পারেন, বাংলাদেশ আজকে তিন তিনটা দেশকে ঋণ দিয়েছে। বাংলাদেশকে আজ সারা বিশ্ব সমীহ করে।
শ্রীলংকাকে ২০০ মিলিয়ন ডলার, সুদানকে ৭ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত অর্থবছরে দেশে রেমিটেন্স এসেছে ৭ বিলিয়ন ডলার। আজ বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। শুধুমাত্র পরমাণু বোমা ছাড়া সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে।
কাদের বলেন, প্রত্যকটি সূচকে আমরা আজকে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। পাকিস্তানকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছি। কাজেই বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশের তকমা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একটা মহল এই উন্নয়ন দেখতে পারে না। এই দলটি দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে। এই দলটি পূর্ণিমার ঝলমলে আলোতে অমাবস্যার অন্ধকার দেখে। এই দলটি হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।
তিনি বলেন, দেশের এই অমিত সম্ভাবনা, উন্নয়ন ও অর্জন বিএনপির গাত্রদাহ। তাই তারা দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন-অর্জন তাদের গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চলমান উন্নয়নকাজের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এসব উন্নয়নকাজ যখন শেষ হবে তখন বিএনপির আর কথা বলার মতো কিছু থাকবে না। আমাদের কাছে তাদের আমলের এমন কোনো উন্নয়নচিত্র দিন, যেটা দেখিয়ে তারা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে। নেতিবাচক রাজনীতি ও সামপ্রদায়িক রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতা করে বিএনপি দিনে দিনে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। দেশটা অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হোক-এটাই তাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য সামনে রেখেই দেশকে অস্থিতিশীল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায় বিএনপি। তারা সামপ্রদায়িক শক্তিকে নিয়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ ভয়ঙ্কর মাত্রায় পৌঁছে গেছে। আমাদের সীমান্ত এলাকার সমস্যা প্রকট। ঢাকায়ও বিশেষজ্ঞরা আরও ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছেন। ভারতে তৃতীয় যে ওয়েভের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা, ইতিমধ্যে ভারতীয় মিডিয়ায় খবর এসেছে। কাজেই সামনের দিনগুলো খুব ভালো যাবে না-এটাই সত্য। এ সময় আমাদের নিজেদেরও রক্ষা করতে হবে, মানুষকেও বাঁচাতে হবে।
তিনি বলেন, আজকে আমাদের সামনে দুটি বড় চ্যালেঞ্জ। একটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে করোনা প্রতিরোধ করা, আরেকটি হচ্ছে উগ্র সামপ্রদায়িকতাকে মোকাবেলা করা। এই দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ সুশৃক্সখলবদ্ধ, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থেকে এগিয়ে যাবে-এটাই আমি প্রত্যাশা করি।
সম্মেলন নিয়ে তিনি বলেন, নতুন নেতৃত্ব বাছাই একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। এর সাথে কারো পরাজয়ের সম্পর্ক নেই, তেমনি কারো বিজয়ের উল্লাস নেই। যারা নির্বাচিত হবেন তাদের ওপর বড় দায়িত্ব বর্তায়। দেশপ্রেমিক কর্মীরাই কিন্তু দেশনেত্রী শেখ হাসিনার শক্তি, আওয়ামী লীগের শক্তি।
সম্মেলনে চট্টগ্রাম অংশে যুক্ত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ফারুক আমজাদ খান, ড. জমির সিকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আজিম, সাংগঠনিক সম্পাদক নাফিউল করিম নাফা, কেন্দ্রীয় নেতা আশিষ কুমার সিংহ, রাহুল বড়ুয়া, ডা. উম্মে সালমা মুনমুন, তারেক মাহমুদ পাপ্পু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কে বি এম শাহজাহান, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যকরী সদস্য মো. আজগর আলী, জাবেদুল আযম মাসুদ, মোহাম্মদ বোখারী আযম, মো. হানিফ চৌধুরী ও মো. সাইফুল্লাহ আনছারী।
বিকাল ৩টায় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হওয়ার পর ৪টায় সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন (কাউন্সিলর) অনুষ্ঠিত হয়।










