এক দাবিতে আগামী ৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে বিএনপির রোড মার্চ সুনামি সৃষ্টি করবে বলে ঘোষণা দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, রোড মার্চে কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে একটি করে দুইটি বড় জনসভা হবে। মাঝখানে হবে পথসভা। আমাদের পথসভাগুলো জনসভার মতই। আমরা বগুড়া থেকে যখন যাচ্ছিলাম পথসভাগুলো জনসভায় রূপ নিয়েছিল। রাস্তাঘাট সব বন্ধ হয়ে গেছে। আশেপাশে দোকান পাট, মানুষের বাড়িঘর এমন অবস্থা ওগুলো জনসভা থেকে বেশি হয়ে গেছে। আগামীকাল থেকে চট্টগ্রামে ঝড় তুলতে হবে। ৫ অক্টোবর হবে সুনামি। চট্টগ্রাম আগেও ঝড় তুলেছে। এবারও ঝড় তুলতে পারবে। গতকাল বুধবার বিকেলে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে রোড মার্চ কর্মসূচি সফল করতে আয়োজিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সরকারের পদত্যাগ ও দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির এক দফা দাবিতে আগামী ৫ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে ফেনী, মীরসরাই হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এ রোড মার্চ হওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের সভাপতিত্বে প্রস্তুতি সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন।
আমীর খসরু বলেন, এক দফা দাবির জন্য এ রোড মার্চ হচ্ছে। আমাদের এক দফা দাবি হচ্ছে সরকারের পদত্যাগ। রোড মার্চের উদ্দেশ্যও সেটাই। এটা নিয়ে রাস্তায় নেমেছি। দাবি না মানা পর্যন্ত বাড়ি ফিরে যাব না কেউ। ভোট চোরদের দিন শেষ, জনগণের বাংলাদেশ। ভোটাধিকার ফিরিয়ে দাও। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ভোট চোরদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। এদের এবার ছাড় দেওয়া যাবে না।
খসরু বলেন, নির্বাচন কমিশন বাতিল করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একটি নির্বাচিত সংসদ হবে, সরকার হবে। যে সরকারের জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকবে এবং দায়বদ্ধতা থাকবে। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। উনাকে বিনা বিচারে, মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দিয়ে ভোট চুরি প্রকল্পের অংশ হিসেবে জেলে নিয়ে গিয়েছিল। এখন বাড়িতে আটকে রেখেছে। উনার অসুস্থতার কারণ নিয়ে অনেক সন্দেহ আছে। বাংলাদেশের জেলখানায় বর্তমানে কি হচ্ছে সে ব্যাপারে জনগণের সন্দেহ জেগেছে। বেগম খালেদা জিয়ার শরীর কি পর্যায়ে এভাবে এসেছে এটা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। অনেকেই জেলখানায় মারা যাচ্ছে। অনেকে জেলখানা থেকে বের হয়ে মারা যাচ্ছে। তাহলে বাংলাদেশের জেলের ভেতরে কি হচ্ছে? এই প্রশ্নগুলো জনমনে এসেছে আজ। এসময় তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার এই গুরুতর অসুস্থতার কারণে যদি কোনো কিছু হয় এই অবৈধ ফ্যাসিস্ট রেজিমকে বাংলাদেশের জনগণের সম্মুখীন হতে হবে। কেউ রেহাই পাবে না।
আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, বাংলাদেশের জনগণের মুখে এখন একটাই স্লোগান। সরকারের বিদায়। এই স্লোগান এখন প্রত্যেক ঘরে ঘরে। আমাদের এক দফার আন্দোলন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ও তারেক জিয়ার নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা আন্দোলনে এগিয়ে যাব।
নোমান বলেন, নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হতে হবে। আন্দোলনের শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে। শেষপর্যন্ত লড়তে হবে। আমরা প্রয়োজনে প্রতিরোধ করব। জীবন দিয়ে হলেও এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। দুর্নীতিবাজদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করব।
বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করেনি, দুর্নীতি, লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকেও ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকার বিদ্যুৎ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পিটিয়েছে। কিন্তু আজকে সারাদেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত। বাংলাদেশ এখন চরম সংকটে পতিত হয়েছে। এ সংকট থেকে উদ্ধার করতে হলে অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকারকে পতন করতে হবে।
মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন বলেন, সরকার দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে হত্যা করে দেশবাসীকে উন্নয়নের কথা বলছে। মূলত তারা উন্নয়নের নামে দুর্নীতি লুটপাটে ব্যস্ত। আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতায় বসে মানুষের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আজকে মানুষের ভোটাধিকার নাই। বিগত দুটি নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকার আবার নতুন খেলা শুরু করেছে।
মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বাংলাদেশের অস্তিত্বের সংকট চলছে। ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। স্বাধীনতার মূল চেতনা ধ্বংস করেছে। প্রতিনিয়ত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নষ্ট করছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছে। জনগণ নির্বাচন বিমুখ হয়ে গেছে।
বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, বিএনপি নেতা ম্যা মা চিং, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মীর হেলাল, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, জালাল উদ্দীন মজুমদার, হারুন অর রশিদ, রেহেনা আকতার রানু, আবু সুফিয়ান, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, শাহাজাহান চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন, শেখ ফরিদ বাহার, দীপেন তালুকদার দিপু, শাহাবুদ্দীন সাবু, অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান।