দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর পর চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই দিন তিনি নিজের ফরম পূরণ করে ফিও জমা দেন কেন্দ্রে। এরপর দল থেকে সারা দেশে সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রাথমিক সদস্য নবায়নের জন্য তাগিদ দেওয়া হয়। কিন্তু চার মাস পেরুলেও এ কার্যক্রম চলে ‘শ্লথ’ গতিতে। এ অবস্থায় কেন্দ্র নতুন করে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, প্রাথমিক সদস্য নবায়নের পাশাপাশি নতুন সদস্য করা যাবে। তবে ‘ফ্যাসিবাদী সরকার’ ও তাদের ‘দোসর’দের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিভাগে আজ শনিবার থেকে প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপি’র সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলে। এর আগে ২০০৯ সালে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও শেষ হয়নি। এরপর ২০১২ সালে তা আবারো শুরু হয়। সেটিও বন্ধ হয়ে যায় মাঝপথে। এদিকে চট্টগ্রামের তিন সাংগঠনিক ইউনিট; মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, নগরে ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন সদস্য আছেন। ওই হিসেবে নগরে ১২ হাজার ৯০০ থেকে ১৫ হাজার সদস্য আছেন বর্তমানে। এদের সদস্যপদ নবায়ন করা হবে। উত্তর জেলা বিএনপি ইতোমধ্যে ৪৭ হাজার ফরম সংগ্রহ করেছে। দক্ষিণে প্রায় ১০ লক্ষ সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য করা হবে। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামের তিন সাংগঠনিক ইউনিটে সাড়ে ১০ লক্ষের অধিক প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য করার লক্ষ্য আছে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের।
কেন্দ্রীয় নির্দেশনা : গত বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী চট্টগ্রামসহ সারা দেশের জেলা ও মহানগরের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক–সদস্য সচিবকে সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। দাপ্তরিক চিঠিতে দেয়া ওই নির্দেশনায় বলা হয়, স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক সদস্য ফরম ছাপানো কড়াকড়িভাবে নিষিদ্ধ। বিএনপি চেয়ারপার্সনের স্বাক্ষর সম্বলিত সদস্য বই নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করতে হবে। সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের প্রাথমিক সদস্য নবায়ন অথবা নতুন সদস্য ফরম পূরণ করে ফরমের অফিসের অংশটুকু কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দিতে হবে।
বাংলাদেশের নাগরিক নারী অথবা পুরুষ বিএনপির সদস্য লাভের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। প্রাথমিক সদস্যের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর হতে হবে। নিষিদ্ধ সংগঠন, সমাজবিরোধী এবং সন্ত্রাসীরা দলের সদস্য হওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী জানান, প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য ১৫ মে থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান শামীম আজাদীকে বলেন, পুরনো সদস্য নবায়ন এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ; দুটোই করা হবে। সারা দেশে এ কার্যক্রম চলবে। চট্টগ্রাম বিভাগে শনিবার (আজ) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। নিজ নিজ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জেলা এবং মহানগর নেতৃবৃন্দ পার্টি অফিস থেকে ফরম সংগ্রহ করবেন। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট কেউ সদস্য হতে পারবে না। ফ্যাসিস্টকে কেউ সদস্য করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার আজাদীকে বলেন, যে সকল সদস্য ‘ফ্যাসিবাদী সরকার’র চিহ্নিত সহযোগী ছিলেন, তারা সদস্য নবায়নের সুযোগ পাবেন না। দলীয় সাংগঠনিক শাস্তির আওতায় যারা প্রাথমিক সদস্যপদ হারিয়েছেন, তারা নবায়নের সুযোগ পাবেন না। কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশনা এবং নিয়মাবলী না মেনে যদি কোনো সদস্যকে নবায়ন করা হয়, সংশ্লিষ্ট ইউনিটের নেতৃবৃন্দ এ জন্য দায়ী থাকবেন এবং প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চট্টগ্রাম মহানগরের চিত্র : জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির উদ্যোগে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে একবার নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। ওই সময় ৪০ হাজার সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। মাঝপথে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে এর আগেই ২০ হাজার সদস্য সংগ্রহ করা হয় বলে ওই সময় জানান নগর বিএনপির তৎকালীন সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন।
এরপর দেশজুড় ২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নগরে ৫০ হাজার সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য থাকলেও টার্গেট পূরণ হয়নি। পরবর্তীতে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসেও একবার সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। তখন কেন্দ্র থেকে সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যে একটি ‘তথ্য সংগ্রহ ফরম’ও সরবরাহ করে। এর প্রেক্ষিতে সদস্য সংগ্রহ ফরম ছাপায় নগর বিএনপি। পরবর্তীতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নগর বিএনপির সাংগঠনিক বিষয়ে প্রতিবেদন সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করলে আটকে যায় পুরো প্রক্রিয়া। এর পাঁচ মাস পর ২০২২ সালের মার্চ মাসে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। কিছুদিন পর তাও বন্ধ হয়ে যায়।
আজ শনিবার থেকে নতুন করে শুরু হতে যাওয়া সদস্য সংগ্রহ অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ আজাদীকে বলেন, পুরনো সদস্যদের নবায়ন করব। নতুন সদস্য এখন করবো না। নতুন সদস্য করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় গাইডলাইন নেই। বর্তমানে কি পরিমাণ সদস্য রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাড়া শুধু বিএনপির হিসাব করলে প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন সদস্য আছেন।
উত্তরে ৪৭ হাজার, দক্ষিণে ১০ লক্ষ : উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার আজাদীকে বলেন, উত্তর জেলার উদ্যোগে সদস্য নবায়ন কার্যক্রম আমরা গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু করেছি। প্রতিটি উপজেলা ও থানায় নবায়ন কার্যক্রম চলমান আছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ সদস্য নবায়ন করেছেন।
উত্তর জেলায় কি পরিমাণ সদস্য আছে জানতে চাইলে বলেন, আমরা কেন্দ্র থেকে ৪৭ হাজার সদস্য ফরম এনেছি। ‘নতুন করে সদস্য করা হবে কী না’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ১ জুলাই শুরু হওয়া সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমে যারা সদস্য পদ লাভ করেছেন, তারাই কেবলমাত্র সদস্য নবায়নের আওতাভুক্ত হবেন। তবে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেউ যদি বিএনপি করতে চায় তারা পূরণ করতে পারবে। অর্থাৎ ছাত্রদল–যুবদলের কোনো সদস্য যদি বলে, সে আর ছাত্রদল–যুবদল করবে না, বিএনপি করবে; তারা পূরণ করতে পারবে।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন বলেন, কাল (আজ শনিবার) বিভাগের উদ্বোধন হবে। এরপর আমরা দক্ষিণ জেলার আওতাধীন ১৫টি ইউনিটে নবায়ন এবং সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করবো।
কী পরিমাণ সদস্য সংগ্রহ এবং নবায়ন করার লক্ষ্য আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১৬ সালে ৭ লাখের মত হয়েছিল। এবার আমাদের টার্গেট থাকবে সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য করা। নবায়ন এবং নতুন সদস্য মিলিয়ে ১০ লক্ষ ফরম পূরণের টাগের্ট আছে আমাদের। নতুন সদস্য করার ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ কেউ পূরণ করা সুযোগ পাবে না। এতদিন অন্য দলের রাজনীতি যারা করেছে তাদেরও পূরণ করতে দেয়া হবে না।