চট্টগ্রামে বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটারদের বাছাই সহস্রাধিক ক্ষুদে ক্রিকেটারদের মিলন মেলা

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বুধবার , ৯ অক্টোবর, ২০২৪ at ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামকে এক সময় বলা হতো ক্রিকেটের চারণ ভূমি। কিন্তু কালের আবর্তে সেটা যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন জাতীয় দলে চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্ব বলতে গেলে একেবারেই শূন্যের কোটায়। কেন চট্টগ্রাম থেকে ক্রিকেটার বেরিয়ে আসেনা সে প্রশ্ন সবার। অনেক আলোচনা হয়, সমালোচনা হয়। কিন্তু সুফল মেলেনা। অথচ চট্টগ্রামের কিশোরতরুণদের মাঝে ক্রিকেটার হওয়ার যেন দারুণ বাসনা। এই যেমন গতকাল ছিল বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটারদের বাছাই। যেখানে গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছে অনূর্ধ্ব১৪ এবং অনূর্ধ্ব১৬ বছর বয়সী ক্রিকেটারদের বাছাই। এই দুই বয়স ভিত্তিক গ্রুপের বাছাই পর্বে অংশ নিতে প্রায় সহস্রাধিক ক্রিকেটার হাজির হয়েছিল এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে। সবার চোখে মুখে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন। প্রখর রোদে দাড়িয়ে থেকেও পরীক্ষায় পাশ করার অদম্য বাসনা এই সব ক্ষুদে ক্রিকেটারদের মধ্যে। একটা প্রবাদ সব সময়ই শোনা যায় বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট মানে বয়স চুরি। তবে গত কয় বছরে চট্টগ্রামে সবচাইতে বড় অভিযোগটি ছিল তা হচ্ছে চট্টগ্রামের যে সব ক্রিকেট একাডেমি রয়েছে তাদের মধ্যে একটি অলিখিত সমঝোতা থাকে। তাদের একাডেমির বাইরে তেমন কাউকে নেওয়া হয়না। আবার এমনও অভিযোগ রয়েছে যে, কিছু কিছু একাডেমির কর্মকর্তারা জোর খাটিয়ে নিজ একাডেমির ক্রিকেটারদের দলে নেওয়ার চেষ্টা করে থাকে। তবে এবারে সে সবে যেন পরিবর্তন এসেছে। গতকাল বাছাই পর্বে অংশ নেওয়া ক্ষুদে ক্রিকেটারদের মাঝেও যেন স্বস্তির হাওয়া। তার অবশ্য কারণও আছে। আগের অপবাদ থেকে বেরিয়ে আসতে এবারে সরাসরি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ দলের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিয়ান মেহরাব হোসেন অপিকে। দেশের সাবেক এই ক্রিকেটার বাছাই কার্যক্রমটা বেশ সতর্কতার সাথে সম্পন্ন করার চেষ্টা করেছেন। তিনি নিজে সরাসরি পরিচালনা করেছেন বাছাই পর্ব। গতকাল অনূর্ধ্ব১৪ এবং অনূর্ধ্ব১৬ বছর বয়সী ক্রিকেটারদের বাছাই থাকলেও অণূর্ধ্ব১৬ বছর বয়সীদের বাছাই শেষ করতে পারেনি। এই গ্রুপের বাকিদের বাছাই শুরু হবে আজ। পাশাপাশি অনূর্ধ্ব১৮ গ্রুপের বাছাই পর্বও অনুষ্ঠিত হবে আজ।

গতকাল অনূর্ধ্ব১৪ বছর বয়সী বাছাই পর্বে মোট ৫৭ জন নির্বাচিত হয়েছে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য। ব্যাটেবলে পরীক্ষার পাশাপাশি ডাক্তারী পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক এই বাছাই সম্পন্ন করা হয়েছে। পরবর্তী ধাপে আবার মাঠের পারফরম্যান্স এবং ডাক্তারী পরীক্ষা করে নির্বাচিতদের সংখ্যা আরো কমিয়ে আনা হবে। এরপর আরো পর্যবেক্ষণ আর অনুশীলনের পর চট্টগ্রাম জেলা দলের চুড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণা করা হবে। যাদের নিয়ে বিসিবি আয়োজিত বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নেবে চট্টগ্রাম জেলা দল। আজ অনূর্ধ্ব১৬ গ্রুপের বাকি অংশ এবং এরপর অনূর্ধ্ব১৮ গ্রুপের বাছাই সম্পন্ন করে প্রাথমিক বাছাই শেষ হবে। গতকাল মেহরাব হোসেন অপির সাথে কাজ করেছেন বিসিবির চট্টগ্রাম জেলা কোচ মাহবুবুল করিম মিঠু, মেডিকেল পরীক্ষায় সহযোগিতা করেছেন বিসিবির চট্টগ্রাম বিভাগীয় কোচ মোমিনুল হক। এছাড়া স্থানীয় কোচ কাজি কামরুল ইসলাম, আবু নেওয়াজ লিখন, কাজল দেব নাথ, মোমিন খন্দকাররা। গতকাল আবহাওয়া ছিল বেশ গরম। প্রখর রোদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ক্ষুদে ক্রিকেটারদের। তারপরও কেমন যেন রঙিন স্বপ্ন তাদের চোখে মুখে। অনেকেই এসেছিলেন অভিভাবককে সঙ্গে নিয়ে। চট্টগ্রাম শহরের বাইরে থেকেও এসেছে ক্রিকেটাররা। স্বন্দীপ থেকে এসেছে তিনজন। তারা তিনজনই অনূর্ধ্ব১৬ গ্রুপে। তাদের বাছাই হবে আজ। আনোয়ারা থেকেও এসেছে অনেকেই। বাঁশখালী, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি থেকেও এসেছে ক্রিকেটাররা। সবার স্বপ্ন ক্রিকেটার হওয়া। কিন্তু ক্রিকেটার হতে হলে যে কঠোর অনূশীলন করে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে সেটাও অবশ্য জানা এইসব ক্রিকেটারদের। প্রাথমিক বাছাই পর্বে কেবল বেসিকটাই দেখেছে নির্বাচকরা। কথায় আছেনা ‘জহুরী জহর চেনে’। তাই একজন ছেলের ব্যাট ধরা কিংবা তার দাড়ানো দেখলেই বুঝতে পারেন নির্বাচকরা কেমন খেলবে ছেলেটি।

প্রশ্ন উঠেছিল এত স্বল্প সময়ে বিপুল সংখ্যক ক্রিকেটারদের মধ্য থেকে ৫০ জন ক্রিকেটার বাছাই করতে গিয়ে সত্যিকারের মেধাবীরা আসবে কিনা। নির্বাচকরা জানালেন এখানে মুলত বেসিক বিষয়টা দেখা হয়। কারণ যে পরিমান অংশগ্রহণকারী তাদের খাতা কলমে পরখ করতে হলে অনেক সময়ের ব্যাপার। তাই বেসিক নিয়েই মূলত ধারণাটা পাওয়া যায়। আর ডাক্তারী পরীক্ষাতো ডাক্তাররা দেখেন। সারা দিন প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে অপেক্ষায় তাকা ক্রিকেটারদের অনেকেই বাদ পড়েছেন বাছাই পর্ব থেকে। মন খারাপ হওয়াটা স্বাভাবিক।

তবে পরের বারের জন্য তারা নিজেদের আরো প্রস্তুত করে তুলতে চায় এসব ক্রিকেটাররা। তবে বরাবরের মত এবারেও প্রশ্ন উঠেছে চট্টগ্রামে যারা ক্রিকেট একাডেমি চালায় তাদের যোগ্যতা নিয়ে। বেশিরভাগ একাডেমিতে যারা কোচ হিসেবে ক্রিকেট শেখায় বাচ্চাদের তাদের অনেকেরই নেই কোন ক্রিকেটীয় ব্যাকগ্রাউন্ড। ফলে সঠিক শিক্ষাটা পাচ্ছেনা তারা। অনেকেই তৃতীয় বিভাগ বা দ্বিতীয় বিভাগে ক্রিকেট খেলেও এখন কোচ। তবে এই গড্ডালিকা প্রবাহ থেকে বেরিয়ে আসারও কথা বলছেন অনেকেই। না হয় যে পরিমাণ ছেলে ক্রিকেট শিখছে চট্টগ্রামে এতদিনে অনেক ক্রিকেটার বেরিয়ে আসার কথা। কিন্তু মান সম্পন্ন কোচ না থাকায় সঠিক ক্রিকেটটা শিখতে পারছেনা ছেলেরা। তারপরও ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা আশাবাদি চট্টগ্রামের ক্রিকেট আবারো আগের দিনে ফিরবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনারীদের র‌্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি হয়েছে ফাহিমা-রাবেয়ার
পরবর্তী নিবন্ধআরও একটা ভুল, বুঝতে দেরি হলো পরীমণি!