চট্টগ্রামে প্রস্তুত ১৯২৫ আশ্রয়কেন্দ্র

২৯৫টি মেডিকেল টিম গঠন চসিক ও জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৬ মে, ২০২৪ at ৭:২২ পূর্বাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানলে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামে। গতকাল বিকালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাইকিং করে নগরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়। মাইকিং করা হয় ছয় উপকূলীয় উপজেলায়ও। এছাড়া জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নগর ও জেলায় প্রস্তুতি করা হয়েছে ১ হাজার ৯২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র। গঠন করা হয় ২৯৫টি মেডিকেল টিম। এছাড়া চসিক ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পৃথক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে বিতরণের জন্য শুকনো খাবারের ত্রাণও প্রস্তুত করেছে চসিক। চসিক সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন বলেন, রেমালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর নির্দেশে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। রেমালের ঝুঁকি না কমা পর্যন্ত কন্ট্রোল রুম থেকে নাগরিকদের তথ্য সেবা দেওয়া হবে। এছাড়া আমরা রেড ক্রিসেন্টের সহায়তায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে মাইকিং শুরু করেছি, যাতে ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকরা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে বিতরণের জন্য শুকনো খাবারের ত্রাণও প্রস্তুত করা হয়েছে।

চসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ বলেন, দুর্যোগ না কাটা পর্যন্ত চালু হওয়া এ কন্ট্রোল রুম থেকে ২৪ ঘণ্টা দুর্যোগ কবলিত জনগণকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করা হবে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০১৮১৮৯০৬০৩৮।

জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি : চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৭৮৫টি আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও ১১৪০টি বিদ্যালয় ও নয়টি মুজিব কেল্লা আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া সিভিল সার্জন চট্টগ্রাম কর্তৃক ইউনিয়ন পর্যায়ে ২০০টি, প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫টি, ৯টি আরবান ডিসপেনসারিতে ৯টি এবং ৫টি জেনারেল হাসপাতালে ৫টিসহ মোট ২৯৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য প্রায় তিন লাখ ট্যাবলেট ও চার লাখ খাবার স্যালাইন মজুদ রয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সমন্বয়ের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে, যার নাম্বার ০২৩৩৩৩৫৭৫৪৫।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ ও সমন্বয়ের জন্য গতকাল জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা প্রশাসক ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সকলকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন। বিশেষ করে সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, মীরসরাই, সীতাকুণ্ড ও কর্ণফুলী উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে বিশেষভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দেন। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে চট্টগ্রামে ব্যাপক বর্ষণ ও পূর্ণিমার কারণে তীব্র জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা থাকায় উপকূলবর্তী এলাকাসমূহ ও পাহাড়ি এলাকা থেকে লোকজনকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট ইউএনও এবং এসিল্যান্ডদের নির্দেশনা দেন। এ সময় সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার, মোমবাতি, ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন মজুদ রয়েছে বলে অবহিত করেন।

সভায় চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ ফসল কাটা হয়েছে। এ সময় জেলা প্রশাসক মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশু ও অন্যান্য প্রাণীর সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সকলকে নির্দেশনা প্রদান করেন। জেলা আনসার কমান্ডেন্ট জানান, প্রতিটি গ্রামে আনসার প্লাটুন দুর্যোগ প্রতিরোধে প্রস্তুত রয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সমস্ত মাছ ধরার নৌকা ইতোমধ্যে তীরে চলে এসেছে। কোনো জেলে যেন সমুদ্রে মাছ ধরতে না যায়।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার বলেন, সব ধরনের প্রস্ততি সম্পন্ন করেছি আমরা।

রেড ক্রিসেন্ট : ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় চট্টগ্রাম সিটি যুব রেড ক্রিসেন্ট কার্যালয়ে জরুরি ভিত্তিতে একটি কন্ট্রোল রুমের কাজ শুরু করে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর হচ্ছে ০১৬০৩৯০০৯৭৭। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কন্ট্রোল রুমে রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা সহযোগিতা প্রদান করেন। নগরের ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪১ নং ওয়ার্ডে জনগণকে সচেতনতা করার জন্য চসিকের সহযোগিতায় মাইকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে রেড ক্রিসেন্ট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেদিন হত্যার পরিকল্পনা ছিল না মৃত্যু ক্লোরোফরমের প্রভাবে
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ ব্যাংকের নজর এড়িয়ে কীভাবে অর্থ পাচার হয়, প্রশ্ন দুদকের