দুপুর ১২টার কিছুটা পর হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল পা রাখলেন চট্টগ্রাম জেলা স্টেডিয়াম। যেটি সাবেক এম এ আজিজ স্টেডিয়াম নামে পরিচিত। মাঠে পা দিয়েই যেন নস্টালজিক হলেন। কারণ দীর্ঘ কতদিন পর যে এই মাঠে আসলেন সেটা তিনি মনে করতে পারলেন না। তবে সবশেষ তিনি এই মাঠে টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তবে কোন দিক থেকে মাঠে নামতেন, লোকজন হাত তালি দিতেন আর কখনো কখনো গালমন্দও করতেন সে সব মনে আছে তার। একইভাবে হাবিবুল বাশার সুমন কিংবা বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিয়ান মেহরাব হোসেন অপি কিংবা স্টেডিয়ামের আঙ্গিনায় যার ঘর সেই আকরাম খানরাও নস্টালজিক হলেন। নস্টালজিক হওয়ারই কথা। তারা যখন বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন তখন এতো সুযোগ সুবিধা ছিল না ক্রিকেটে। তারপরও তারা মন প্রাণ উজাড় করে খেলেছেন। এখন খেলা ছেড়ে তারা সবাই সংগঠক। বুলবুল বোর্ড সভাপতি, আকরাম পরিচালক, সুমন হেড অব গেম ডেভেলপম্যান্টে। অপি পালন করছেন কোচের দায়িত্ব।
ক্রিকেটে তাদের যুগকে স্বর্ণ যুগ বলা হয় বলেই আবার সে যুগ ফিরিয়ে আনতে চাইছে সবাই মিলে। যার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গতকাল চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে রিজিয়নাল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। দেশে প্রথমবারের মত আয়োজিত হলো এই টুর্নামেন্ট। মুলত দেশের ক্রিকেটকে বিকেন্দ্রীকরনের অংশ হিসেবে এই আয়োজন। আমিনুল ইসলাম বুলবুল মনে করছেন এই আয়োজন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। তিনি এটাকে দেশের ক্রিকেটে উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করাতে চান।
গতকাল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে আমিনুল ইসলাম বুলবুল তার একটি পরিকল্পনার গ্রাফ উপস্থাপন করেন। যেখানে সবার উপরে রয়েছে জাতীয় দল। এরপর ‘এ’ দল, এইচপি, বাংলাদেশ টাইগার্স। এরপর পরে বিভাগীয় দল, জেলা দল এমনকি উপজেলা লেবেল। কিন্তু এতকাল এতসব নিয়ে কেউই ভাবেননি। তবে বুলবুল বলেন, চট্টগ্রামের এই আয়োজন সফল হতো না যদি আকরাম খান, মনজুর আলম কিংবা যারা টিম স্পন্সর করেছেন তারা সহযোগিতা না করতেন। তিনি জানান এবং টিম ওনাররা বলছেন তারা যে দলগুলো পেয়েছেন সেগুলো যেন তাদেরকে অন্তত ৫ কিংবা দশ বছরের জন্য দিয়ে দেওয়া হয়। এটাকে বিশাল একটা বিষয় হিসেবে দেখছেন বুলবুল। তিনি বলেন, আমরা যে লক্ষ্য নিয়ে নেমেছি আশা করছি সেটাতে সফল হতে পারব। চট্টগ্রামের এই আয়োজনকে উদাহরণ হিসেবে ধরে নিয়ে দেশের অন্য সব বিভাগেও এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হবে।
যদি কোন বিভাগে স্পন্সর পাওয়া না যায় তাহলে বোর্ড নিজেদের অর্থে সেটা আয়োজন করবে। তিনি এই টুর্নামেন্টকে ক্রিকেটারদের জন্য উপরে উঠার সিঁড়ি হিসেবে দেখছেন। স্কুল ক্রিকেটকে বলা হতো বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভিত। সে ভীত এখন নড়বড়ে হয়ে গেছে। বুলবুল আবার সে ভিতকে আরো মজবুত করতে চান। তবে তিনি একটু ভিন্ন পদ্ধতিতে এগুতে চান। সেটি হচ্ছে দেশের হাজার হাজার স্কুলকে একত্রে না করে বাছাই করা কিছু স্কুল নিয়ে স্কুল ক্রিকেটটা আবার ফেরাতে চান স্বরুপে। যাতে মান সম্মত খেলোয়াড় সৃষ্টি হয়। বুলবুল–আকরামরা যখন জেলা স্টেডিয়ামে প্রবেশ করছিলেন সেখানে তখন অনুশীলন করছিল চট্টগ্রাম জেলা দল। তিনি ক্রিকেটারদের কে কোন পজিশনে খেলে কে কোন বল করে জানতে চাইলেন। দিলেন কিছু পরামর্শও। একজন বোর্ড প্রেসিডেন্ট যখন এখন উদ্যোগ নিয়ে মাঠের মানুষ হয়ে যান তখন দেশের ক্রিকেট নিশ্চয়ই উন্নতি না হয়ে পারে না।
চিটাগাং রিজিয়নাল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট মূলত যার মাথা থেকে এসেছে সেই আকরাম খান জানালেন, এ ধরনের টুর্নামেন্ট যত হবে ততবেশি জেলা পর্যায়ের ক্রিকেটার ঢাকা লিগ, জাতীয় লিগ, বাংলাদেশ লিগ এমনকি বিপিএলেও খেলার সুযোগ বাড়বে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের যেসব মানুষ আমরা বাছাই করেছি তারা দীর্ঘদিন ধরে ফুটবল ক্রিকেটসহ দেশের নানা খেলাধুলার সাথে সম্পৃক্ত। সে কারণে আমাদেরকে খুব বেশি বুঝাতে হয়নি তাদেরকে। এক কথাতেই তারা সবাই রাজি হয়ে গেছেন। এখন তারা সবাই দীর্ঘ মেয়াদের জন্য দলগুলো নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। তিনি বলেন, এভাবে রিজিয়নাল অনুর্ধ্ব–১৯ ক্রিকেট হবে এমনকি নারী ক্রিকেটও হবে। এগুলো সঠিকভাবে চালু রাখতে পারলে ক্রিকেটার বেরিয়ে আসাটা মোটেও কঠিন কোন কাজ হবে না।
আমিনুল ইসলাম বুলবুল যেমন বলেছেন তিনি সামনের বোর্ডে না থাকলেও যেসব পরিকল্পনা তিনি বা তারা নিয়ে যাচ্ছেন সেগুলো অব্যাহত থাকবে বলেও মনে করেন তিনি। বিসিবির আরেক পরিচালক মনজুর আলম মঞ্জু বলেন, সভাপতি হিসেবে আমিনুল ইসলাম বুলবুল দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি নতুন কিছু করার পরিকল্পনা করছেন। যে পরিকল্পনার অংশ এই টুর্নামেন্ট। চট্টগ্রাম সবকিছুতে এগিয়ে থাকে। এখানেও আমরা এগিয়ে। তবে আমাদের প্রচেষ্টা স্বার্থক হবে যদি আমরা আমাদের লক্ষ্যে সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারি।












