চট্টগ্রামে পূরণ হয়নি লক্ষ্যমাত্রা

কম কোরবানি, সাড়ে ৩ লাখ চামড়া সংগ্রহ ।। খুশি আড়তদাররা, আছে শঙ্কাও ।। দাম পাননি কোরবানিদাতারা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৪ জুলাই, ২০২২ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে এবার কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ বছর চট্টগ্রামে ৪ লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও মহানগরীতে টার্গেটের চেয়ে কম কোরবানি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির নেতারা। কোরবানির দিন থেকে গত ১২ জুলাই রাত পর্যন্ত সাড়ে ৩ লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছেন চট্টগ্রামের আড়তদাররা। এর মধ্যে নগরীতে দেড় লাখ এবং উপজেলায় ২ লাখ চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪১ ওয়ার্ড থেকে সংগৃহীত চামড়াগুলো আতুরার ডিপো এলাকার বিভিন্ন আড়তে এবং ১৫ উপজেলায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ উদ্যোগে ২ লাখ চামড়া সংগ্রহ করে লবণ দিয়ে রেখেছেন। এবার টার্গেটের চেয়ে নগরীতে ৫০ হাজার কম কোরবানি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির নেতারা। চামড়াগুলো আড়ত থেকে সরাসরি ঢাকার ট্যানারিতে পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন আড়তদাররা। এদিকে চামড়া সংগ্রহে দামে আড়তদাররা খুশি হলেও কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে কোরবানিদাতারা বিনামূল্যে চামড়া স্থানীয় এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দিয়ে দিয়েছেন। আড়তদারদের দর নির্ধারণের পরও দাম পাননি বলে অভিযোগ কোরবানিদাতাদের। কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে আকারভেদে গরুর চামড়া ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা আর ছাগলের চামড়া ২০-৩০ টাকায় কিনেছেন এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, আমরা একেকটি গরুর চামড়া (২৫ থেকে ২৭ ফুট) ৫শ থেকে ৭শ টাকায় কিনেছি। সর্বশেষ ১৪-১৫ ফুটের একটি চামড়া ৩শ টাকায় কিনেছি। ৩শ টাকার নিচে আড়তদাররা কোনো চামড়া ক্রয় করেননি। কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে প্রথমে তাদের আত্মীয়-স্বজন এবং এলাকার স্থানীয় যুবকরা কিনেছেন। তাদের কাছ থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কিনেছেন। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এলাকার চামড়া ব্যবসায়ীরা কিনেছেন। আমাদের কাছে তিন হাত ঘুরে চামড়াগুলো এসেছে। আমরা কাউকে ঠকাইনি। আমরা ন্যায্যমূল্যে কিনেছি।
তিনি জানান, নগরীতে সর্বশেষ মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত দেড় লাখের মতো চামড়া সংগ্রহ করে লবণ দিয়ে রেখেছি। উপজেলা পর্যায়েও ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা ২ লাখের মতো চামড়া সংগ্রহ করে লবণ দিয়ে রেখেছেন। এবার শেষ মুহূর্তে গরুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আগে যারা একটি করে গরু কোরবানি দিতেন তারা দুই-তিনজনে মিলে একটি কোরবানি দিয়েছেন। এই কারণে নগরীতে কোরবানি কিছুটা কম হয়েছে। তবে এবার কোনো চামড়া নষ্ট হয়নি। আগের মতো রাস্তায় চামড়া ফেলে দিয়ে চলে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেনি। আমাদের সমিতিভুক্ত ১১২ জন আড়তদারের মধ্যে কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করেছেন ৪০ থেকে ৪৫ জন। সমিতির বাইরে শহরে আরো ১৫-২০ জন চামড়া ব্যবসায়ী চামড়া সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া গ্রামে সংগ্রহ করেছেন আরো ৫০ থেকে ৬০ জন।
গত ১০ জুলাই কোরবানি ঈদের পর বিকালে নগরীর আগ্রাবাদ, বহদ্দারহাট মোড়, দেওয়ানহাট, চৌমুহনী, হালিশহর, বউবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় অলিগলি থেকে চামড়া সংগ্রহ করে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা পিকআপে, ভ্যানে করে বিবিরহাট আড়তগুলোতে নেয়া শুরু করেন। ওইদিন গভীর রাত পর্যন্ত আড়তে চামড়া নিয়ে যান চামড়া ব্যবসায়ীরা। কিছু চামড়া চৌমুহনী এলাকার আড়তে নেয়া হয়। কোরবানির পরদিনও বেশ কিছু এলাকায় কোরবানি হয়েছে। সোমবার ও মঙ্গলবার বিবিরহাট আড়তে চামড়া গেছে।
দামের ব্যাপারে সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যানারি মালিকদের নির্ধারিত দামে আমরা চামড়া কিনেছি। এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যানারি মালিকরা ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছেন ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। ঢাকার জন্য নির্ধারণ করেছেন ৪৭ থেকে ৫২ টাকা। লবণের দাম দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। লেবারের দামও বাড়তি। তারপরও আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ট্যানারি মালিকদের নির্ধারিত দামেই চামড়া কিনেছি। এখন যদি ট্যানারি মালিকরা লবণ দেয়া চামড়ার ন্যায্য দাম না দেন তাহলে শুধু লোকসান নয়, অনেকের ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যাবে।
এদিকে ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে ভালো দাম পেয়ে অতীতের লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন চট্টগ্রামের আড়তদাররা। তবে ঢাকার অসংখ্য ট্যানারির মধ্যে চট্টগ্রামের আড়তদারদের সঙ্গে শুধুমাত্র এ্যাপেঙ ও খোকন লেদারসহ কয়েকটি ট্যানারি যোগাযোগ করেছে বলে জানা গেছে। তাই সরকার নির্ধারিত দরে চামড়া বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় আছেন চট্টগ্রামের ৪০-৪৫ জন আড়তদার।
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির নেতারা জানান, আগে প্রতি বছর ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ পিস কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকত। লবণের দাম ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে চামড়া খাতে সংকট কাটছে না। ফলে দিন দিন কমেছে লক্ষ্যমাত্রা।
চামড়া খাতের সংকট প্রসঙ্গে আড়তদাররা জানান, গত বছর ঢাকার এতগুলো ট্যানারির মধ্যে অধিকাংশই চট্টগ্রামের আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া নেয়নি। ছোটখাটো দু’চারটা ট্যানারির প্রতিনিধি এসে সামান্য কিছু চামড়া কিনেছেন। ট্যানারির মালিকদের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন চামড়া কেনার সময় ন্যায্য দামটুকু দেন।
বর্তমানে রিফ লেদার নামের একটি ট্যানারির ওপর ভিত্তি করে চামড়া সংগ্রহ করেন আড়তদাররা। এবার চট্টগ্রামের আড়তদারদের কাছ থেকে রিফ লেদার প্রায় এক লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ করবে বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা। গত বছরও এই প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রামের আড়তদারদের কাছ থেকে এক লাখের মতো চামড়া সংগ্রহ করেছিল। এই প্রতিষ্ঠানটিই এখন চট্টগ্রামের আড়তদারদের একমাত্র ভরসা। বাকি চামড়াগুলো ঢাকাসহ অন্যান্য ট্যানারিতে বিক্রি করতে হয়। এতে অনেক সময় প্রত্যাশিত মূল্য পাওয়া যায় না। এতে করে লোকসানও গুণতে হয় অনেক আড়তদারকে। লোকসান গুণতে গুণতে চট্টগ্রামের ১১২টি আড়তের মধ্যে বর্তমানে ৪৫টির মতো টিকে আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত
পরবর্তী নিবন্ধতিন অস্থায়ী ওয়ার্ড বয় গ্রেপ্তার