বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক স্থাপনা, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, পাহাড়, নদী, সমুদ্রকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করতে বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে বাড়বে দেশি-বিদেশি পর্যটক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের আনাগোনা। তাই আরো অধিক হারে আন্তর্জাতিক মানের হোটেল-মোটেল গড়ে তোলা প্রয়োজন। কেবলমাত্র সরকারি উদ্যোগে পর্যটনকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। সরকার নীতিমালা তৈরি করবে, পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে হোটেল আগ্রাবাদ চট্টগ্রামের হোটেল-মোটেল ব্যবসার পথিকৃৎ হয়ে কাজ করছে এবং আগামীতেও করবে বলে আমার বিশ্বাস।
তিনদিনব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচির মধ্যদিয়ে সুবর্ণজয়ন্তী পালন করেছে হোটেল আগ্রাবাদ। হোটেল কর্তৃপক্ষের আয়োজনে গতকাল শনিবার তৃতীয় দিনের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এমপি উপরোক্ত কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, মাস্টার দা সূর্যসেন ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের হাত ধরে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল এ চট্টগ্রাম থেকে। চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়েছিল। এছাড়াও শেফালী ঘোষ, আইয়ুব বাচ্চু, শ্যাম সুন্দর বৈষ্ণব, কল্যাণী ঘোষদের স্মৃতি বিজড়িত বারো আউলিয়ার পূণ্যভূমি এ চট্টগ্রাম। পাহাড়, সাগর ও নদী পরিবেষ্টিত চট্টগ্রামের মতন সুন্দর শহর পৃথিবীর আর কোথাও নেই। তবে দুর্ভাগা আমরা সেই পাহাড় কেটে ফেলছি, নদী দূষণ করছি। এ বিষয়ে জনসচেতনতা জরুরি।
হোটেল আগ্রাবাদের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এ এইচ এম হাকিম আলীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী সম্পাদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব এম এ মালেক বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাথে হোটেল আগ্রাবাদের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। রেড ক্রিসেন্টের কার্যক্রম হোটেল আগ্রাবাদ থেকে পরিচালিত হতো। একসময় হোটেল আগ্রাবাদ ছিল চট্টগ্রামের মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো এক ব্যাপার। এই হোটেলের ইছামতি হল রুম থেকে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক বিকাশে অনেক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে। বিদেশি রাষ্ট্র প্রধান, রাষ্ট্রদূত, সরকারি উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রী, এমপি, দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা চট্টগ্রামে এলে হোটেল আগ্রাবাদেই অবস্থান করেছেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে একসময় সিংগাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড হয়ে বিশ্বের নানা দেশে যাতায়ত করা যেত। এখন সেই সুবিধা নেই। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ এবং কলকাতা ছাড়া আর কোথাও যাওয়া যায় না। চট্টগ্রামকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে থাই কিংবা সিংগাপুর এয়ারের মতো ফ্লাইট অপারেটরকে আনতে হবে। তা সম্ভব না হলে বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা থেকে যেসব ফ্লাইট থাইল্যান্ড যায় সেগুলোকে চট্টগ্রাম হয়ে পরিচালনা করার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের পরিচালক ও এফবিসিসিআইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি ড. মনোয়ারা হাকিম আলী, এফবিসিসিআইএ’র পরিচলক ড. মুনাল মাহাবুব। এছাড়া অনুষ্ঠানে সাবেক মহিলা সংসদ সদস্য সাবিহা মুছা, হোটেল আগ্রাবাদের পরিচালক (এইচআর এন্ড এডমিন) শাকিল নওয়াব আলী, সিডব্লিউসিসিআইএর প্রথম সহ-সভাপতি আবিদা মোস্তাফা, হোটেলের এজিএম হাসানুল ইসলাম, মানবসম্পদ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক সাইফুর রহমান, রুম ডিভিশন ম্যানেজার রায়হান কায়সার, সিনিয়র ফুড এন্ড বেভারেজ ম্যানেজার মনিরুল আলম সরকার, সিনিয়র হিসাব ব্যবস্থাপক জামাল হোসেন, ফ্রন্ট ডেস্ক ম্যানেজার একেএম শাহরিয়ার, সেলস এন্ড মার্কেটিং ম্যানেজার মোরশেদুল আলমসহ চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, নগরীর অন্যতম অভিজাত হোটেল আগ্রাবাদের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে তিনদিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। গতকাল তৃতীয় দিনের কর্মসূচিতে ছিল চট্টগ্রামের ঐতিহ্য ও কৃষ্টি ভিত্তিক খাদ্য ও পণ্য মেলা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, পুরস্কার বিতরণী, আলোচনা সভা, সম্মাননা প্রদান, অতিথি আপ্যায়ন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।