চট্টগ্রামে পরিবেশবান্ধব ১৬ পোশাক কারখানা

লিড প্লাটিনাম ক্যাটাগরিতে প্যাসিফিক ক্যাসুয়াল ও শ্রীলঙ্কার ক্যানপার্ক-২

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৪ জুন, ২০২১ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রে ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) সারা বিশ্বের অনেকগুলো স্থাপনায় পরিবেশবান্ধব সনদ দিয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শিল্প কলকারখানা। নয়টি শর্ত পরিপালনের ওপর ভিত্তি করে তিন ক্যাটাগরিতে লিড (লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন) সনদ দেয় সংস্থাটি। নয়টি শর্তে মোট পয়েন্ট রয়েছে ১১০। এর মধ্যে ৮০ থেকে ১১০ এরমধ্যে হলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০ থেকে ৭৯ হলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ হলে ‘লিড সিলভার’ ও ৩৫-৪৯ হলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ দেয়া হয়। আমাদের দেশে ইতোমধ্যে পোশাক শিল্পের ১৪৩টি কারখানা পরিবেশবান্ধব স্বীকৃতি পেয়েছে। এর মধ্যে ৪১ লিড প্লাটিনাম, ৮৯টি লিড গোল্ড এবং লিড সিলভার ১১টি এবং লিড সার্টিফায়েড হয়েছে দুটি কারখানা। এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রামের ১৬ কারখানা। এর মধ্যে লিড প্লাটিনাম ক্যাটাগরিতে প্যাসিফিক গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক ক্যাসুয়াল লিমিটেড এবং শ্রীলঙ্কার ক্যানপার্ক-২।
অন্যদিকে গোল্ড ক্যাটাগরিতে রয়েছে হাবিব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হেলা ক্লথিং বাংলাদেশ লিমিটেড। এছাড়া রয়েছে প্যাসিফিক গ্রুপের এনএইচটি ফ্যাশন্স লিমিটেড, ইউনিভার্সেল জিন্স লিমিটেড, জিন্স ২০০০ লিমিটেড, প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেড এবং সর্বশেষ তালিকায় যুক্ত হয়েছে ইউনিভার্সেল জিন্স লিমিটেড-৩। অন্যদিকে ক্যানপার্কের ইউনিট-১, ২, ৩, ৪, ৫ এবং ৬ পরিবেশ বান্ধব কারখানা হিসেবে গোল্ড ক্যাটাগরিভুক্ত হয়েছে। এছাড়া সিলভার ক্যাটাগরির একমাত্র প্রতিষ্ঠান হলো-শ্রীলঙ্কার ইউনিভোগ গার্মেন্টস কোম্পানি লিমিটেড।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, তৈরি পোশাক খাতে নিরাপদ, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের অংশ হিসেবে পরিবেশবান্ধব কারখানা ছাড়াও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আরও ৫০০ কারখানা সার্টিফিকেশনের অপেক্ষায় আছে। পানি ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, অপচয় রোধ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ পরিবেশগত মানোন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আইএফসিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে মিলে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে ২০৩০ সাল নাগাদ পোশাক শিল্পে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ৩০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যে বিজিএমইএ বৈশ্বিক প্লাটফর্ম ইউএসএফসিসিসিতে স্বাক্ষর করেছে।
জানতে চাইলে প্যাসিফিক গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিন্সের পরিচালক এবং চট্টগ্রাম চেম্বারের সহ-সভাপতি সৈয়দ মো. তানভির বলেন, আমাদের দেশে এখন লিড প্লাটিনাম, লিড গোল্ড, লিড সিলভার ও লিড সার্টিফায়েড ক্যাটাগরির পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার সংখ্যা বাড়ছে। গত বছরের জুনে লিড প্লাটিনাম ক্যাটাগরিতে যুক্ত হয়েছে প্যাসিফিক ক্যাসুয়ালস লিমিটেড। এছাড়া গোল্ড ক্যাটাগরিতে আমাদের আরো ৫টি কারখানা রয়েছে। পরিবেশের ক্ষতি না করে কারখানার উৎপাদন বাড়িয়ে সর্বোপরি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশী ব্র্যান্ডকে আরো সমৃদ্ধ করাটাই আমাদের লক্ষ্য। এখন বিদেশী ক্রেতারাও অনেক বেশি সচেতন। সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর থেকে আন্তর্জাতিকভাবে আমরা অনেক বেশি সমালোচিত হয়েছি। সেই জায়গা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আমাদের পরিবেশবান্ধব বা গ্রিন ফ্যাক্টরির সংখ্যা বাড়ছে। যেসব কারখানা পরিবেশবান্ধব হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, স্বাভাবিকভাবে বিদেশী ক্রেতাদের কাছে তাদের আলাদা গ্রহণযোগ্যতা থাকবে। পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরির যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, সেটি ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে আমরা অনেকদূর এগিয়েছি।
হাবিব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হেলা ক্লথিং বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভির হাবিব দৈনিক আজাদীকে বলেন, কমপ্লায়েন্স এবং কারখানার নিরাপত্তা ইস্যুতে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্র্তন মোকাবেলায় পোশাক বান্ধব কারখানার বিকল্প নেই। বিশেষ করে বলতে হয়, আমাদের কারখানায় অনেক নিত্য নতুন সুরক্ষা সরঞ্জাম এনেছি। ফায়ার হাইড্রেন্ট এবং ফায়ার এঙটিংগুইসারসহ যাবতীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম নিয়মিত বিরতিতে চেক করার একটি কোম্পানির সাথে দুই বছরের চুক্তি করেছি। কোম্পানির লোকজন এসে এসব সরঞ্জাম ঠিক আছে কিনা সেটি দেখে যান। শ্রীলঙ্কায় এখন সোলার প্যানেলে কারখানা চলে। ধাপে ধাপে আমাদেরও সেই পথে যেতে হবে। বর্তমানে আমরা কারখানায় এলইডি লাইট ব্যবহার করছি। প্রাথমিক অবস্থায় সোলার প্যানেল কিংবা পরিবেশবান্ধব যেকোনো সেটআপ ব্যয়বহুল হলেও পরবর্তীতে কারখানার পরিচালন ব্যয় কমে যায়।
উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালে ইউএসজিবিসি প্রতিষ্ঠিত হয়। সংস্থাটি ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমিতুর দুই সন্তানকে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হাজির করার নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধসড়ক বিভাগই করবে ছয় লেনের কাজ