কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই গতকাল নগরে পালিত হয়েছে বিএনপির আহূত সকাল–সন্ধ্যা হরতাল। নিরুত্তাপ হরতালের শুরুতে সকালে যান চলাচল কিছুটা সীমিত ছিল। এ সময় সড়কে ছোট আকৃতির পরিবহন ছাড়া বাসসহ প্রাইভেট গাড়ি তেমন দেখা যায়নি। ফলে অনেকটা ফাঁকা ছিল সড়ক। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কে বেড়েছে গণপরিবহনের সংখ্যা। তবে সেটা স্বাভাবিক দিনের চেয়ে কম। দিনভর সড়কে ছিল না যানজটও। এছাড়া সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নগর থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। বন্ধ ছিল দূরপাল্লার বাস কাউন্টারও। তবে সকাল থেকে শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন ছেড়ে গেছে। এছাড়া পণ্যবাহী গাড়িও চলেছে।
স্বাভাবিক ছিল চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য উঠানামা। পণ্য খালাসের পর পরিবহনও ছিল স্বাভাবিক। খোলা ছিল দোকানপাট, সরকারি–বেসরকারি অফিস, কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও উপস্থিতি ছিল কম। সকালে যানবাহন সীমিত থাকায় অফিসগামী লোকজনের কিছুটা ভোগান্তি হয়েছে বলে একাধিক কর্মজীবীর সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে। এদিকে সেবাপ্রার্থীদের পথের দুর্ভোগ বিবেচনায় নিয়ে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয় ২টার পর। কোর্ট বিল্ডিংয়ে হরতালের পক্ষে–বিপক্ষে পাল্টপাল্টি মিছিল করেছেন আইনজীবীরা।
হরতাল চলাকালে দিনভর বন্ধ ছিল নগর বিএনপির নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়। সেখানে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি। তবে প্রবর্তক মোড়, শাহ আমানত ব্রিজ এলাকা, স্টেশন রোড, ডিটি রোডসহ কয়েক জায়গায় ঝটিকা মিছিল করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এদিকে বিএনপি কার্যালয়ের সামনেসহ নগরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে সর্তক অবস্থানে ছিল পুলিশ। বিভিন্ন স্পটে হরতালের প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশ করে অবস্থানে ছিল আওয়ামী লীগসহ দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা দাবি করেছে, হরতালকে কেন্দ্র করে তাদের ১৮ নেতাকর্মীকে আটক করে পুরনো বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। এছাড়া সকালে নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের বাটালি রোডের বাসায় তল্লাশি করে বলে অভিযোগ করে বিএনপি।
দিনের চিত্র : ১২টার দিকে প্রর্বতক মোড় ও গোলপাহাড় এলাকায় সড়কে আগুন দেয় মহানগর ছাত্রদল। সেখানে তারা হরতালের সমর্থনে মিছিল করে। এর আগে সকাল ৯টার দিকে শাহ আমানত ব্রিজ এলাকায় দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের নেতৃত্ব হরতালের সমর্থনে মিছিল হয়েছে। দুপুর ২টায় স্টেশন রোডে কোতোয়ালী থানা যুবদল ও ১১টায় ডিটি রোডে হরতালের সমর্থনে মিছিল করে পাহাড়তলী থানা যুবদল। উত্তর জেলা বিএনপিও মিছিল করে নগরে।
এদিকে সকাল পৌনে ১১টার দিকে কাজীর দেউড়ি মোড়ে দেখা গেছে, সড়ক প্রায় ফাঁকা। অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় রিকশা বেশি দেখা গেছে সেখানে। হিউম্যান হলার ও সিএনজিও দেখা গেছে। দুপুর সোয়া ১টার দিকে আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ে টেম্পু, মাইক্রোবাস, হিউম্যান হলার, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহনের জটলা দেখা গেছে। এসময় হাতেগোনো বাসও দেখা গেছে সেখানে। একইসময়ে লাঠি হাতে মোটরসাইকেলে করে কয়েকজন যুবককে যেতে দেখা গেছে। এরা নিজেদের ছাত্রলীগের কর্মী দাবি করে বলেন, হরতালের নামে যারা সহিংসতা করবে তাদের প্রতিহত করতে বেরিয়েছি আমরা। সোয়া ১১টার দিকে দেওয়ানহাট ব্রিজে ছিল সিএনজি, রিকশা, বাসসহ অন্যান্য পরিবহনের দীর্ঘ সারি।
এর আগে সকাল ৮টার দিকে বাঁশখালীর সরকারি আলাওল কলেজের এক প্রভাষক উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, দুর্গাপূজা ও প্রবারণা পূর্ণিমার ছুটি শেষে আজ কলেজ খোলার প্রথমদিন ছিল। হরতাল হলেও কলেজ খোলা। কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। একঘণ্টা অপেক্ষা করে এখন বাসায় চলে যাচ্ছি।
এছাড়া খবর নিয়ে জানা গেছে, সকালে অঙিজেন মোড় থেকে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলাগামী কোনো গণপরিবহন ছেড়ে যায়নি। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। বেশি ভাড়া দিয়ে ছোট ছোট গাড়িতে করে গন্তব্যে পৌঁছান তারা।
সকালে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ–কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, শাহ আমানত সেতু, বাকলিয়া, কাজীর দেউড়ি এলাকায় কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। নগর বিএনপি’র দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইদ্রিস আলী আজাদীকে বলেন, শনিবার রাত থেকে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১৮ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। পরে তাদের পুরনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তিনি বলেন, নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের বাসার রুমে–রুমে গিয়ে তল্লাশি চালানোর পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পুলিশ দুর্ব্যবহার করেছে। এসময় তিনি বাসায় ছিলেন না। ইদ্রিস আলীর দাবি, সাধারণ মানুষই স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল করছে। দূরপাল্লার যানবাহনের সব কাউন্টার বন্ধ আছে। শহরের রাস্তাঘাট ফাঁকা, গাড়ি নেই। এতে প্রমাণ হয়েছে সাধারণ মানুষ হরতালে সমর্থন দিয়েছে।
দুপুরে কাজীর দেউড়ি মোড়ে কোতোয়ালী থানার ওসি জাহেদুল কবির বলেন, জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যাতে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে না পারে সেজন্য আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। কোথাও অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার খবর পাইনি। তিনি আবুল হাশেম বক্করের বাসায় তল্লাশি চালানো হয়নি বলেও দাবি করেন।
সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি মোহাম্মদ মুছা আজাদীকে বলেন, সকাল ৭টা–৮টার দিকে ঢাকার গাড়ি ছেড়ে গেছে। এরপর যাত্রী না থাকায় কাউন্টার ভিত্তিক দূরপাল্লার আর কোনো গাড়ি ছেড়ে যায়নি। উপজেলাভিত্তিক গাড়ি চলেছে। বিকেল ৪টার পর দূরপাল্লার গাড়িও স্বাভাবিক হয়েছে। হরতালে চলাকালে কোথাও কোনো গাড়ি বাধা বা পিকেটিংয়ের শিকার হয়নি বলেও জানান তিনি।