চট্টগ্রামে দুদিনের ব্যবধানে সংক্রমণ বেড়ে ৫ গুণ

করোনা শনাক্তের হার ছাড়াল ৫ শতাংশ জ্বর-কাশিতে টেস্ট করানোর পরামর্শ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৮ জুন, ২০২২ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

সারা দেশের পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ বাড়ছে চট্টগ্রামেও। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহ ধরে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। এর আগে কয়েক মাস করোনা শনাক্তের হার শূন্যের কোটায় থাকলেও চলতি মাসের ১০ তারিখের পর থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে চট্টগ্রামে। এর মাঝে মাত্র দুদিনের ব্যবধানে সংক্রমণ ৫ গুণ বেড়েছে। ক’দিন আগেও শনাক্তের হার যেখানে শূন্যের কোটায় ছিল, সেখানে শনাক্তের হার বেড়ে এখন ৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৬ জুন ৪৫৭টি নমুনা পরীক্ষায় ২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। ২৬ জনই মহানগরের। শনাক্তের হার ৫.৬৮ শতাংশ। ১৪ জুন ১৮১ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয় ৫ জনের। শনাক্তের হার ছিল ২.৭৬ শতাংশ। হিসেবে মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে ৫ গুণ। অবশ্য ১৫ জুন ৫১৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ছিল ৩.০৮ শতাংশ। এর আগে বেশ কয়েক মাস সংক্রমণ শূন্যের কোটায় ছিল চট্টগ্রামে। গত ৩০ মে ২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ১ জুন ১ জন, ২ জুন ২ জন ও ৩ জুন ২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। মাঝখানে বেশ কয়দিন শনাক্তের সংখ্যা ছিল শূন্যের কোটায়। ১১ জুন পর্যন্ত আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে ১২ জুন ৫ জন, ১৩ জুন ৪ জন এবং ১৪ জুনের নমুনা পরীক্ষায় ৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এতদিন ২/১ জনের করোনা ধরা পড়লেও শনাক্তের হার ছিল ৩ শতাংশের নিচে। তবে ১৪ জুনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুসারে শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু চট্টগ্রামে শনাক্তের হার এখন ৫ শতাংশের বেশি। এতে করে সংক্রমণ পরিস্থিতি এতদিনের মতো স্বাভাবিক থাকছে না।

মানুষের মাঝে কোনো ধরণের ভীতি কাজ না করায় অল্প সময়ের মধ্যে সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, সংক্রমণ বাড়লে কি করতে হবে, সেটা কিন্তু এখন সবাই জানেন। কিন্তু কেউ মানেন না। এটা দুঃখজনক। স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালনে সবচেয়ে সহজ কাজটি হল মাস্ক পরা। কিন্তু তাও (মাস্ক) মানুষ পরে না। টিকা নেয়ায় মানুষের যেন সাহস বেড়ে গেছে। একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের উদাহরণ দিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, শুক্রবার একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে কম হলেও ৫ শতাধিক মানুষের জটলা। কিন্তু আমিসহ হাতেগোনা ৫/৬ জনের মুখে মাস্ক। আর কারো মুখে মাস্ক দেখতে পাইনি। এ রকম অবস্থা হলে সংক্রমণ অল্প কদিনেই আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে।

এ দিকে, বেশ কিছু দিন ধরে চট্টগ্রামের অধিকাংশ ঘরে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্তের খবর মিলছে। যদিও এটি ভাইরাল (সিজনাল) ফ্লুর কারণেও হতে পারে জানিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনের কারণে মানুষ এই ভাইরাল ফ্লু-তে আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সচেতন হওয়ার পাশাপাশি কিছু সতর্কতা মেনে চললে এই ফ্লু থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। চিকিৎসকরা দাবি করেছেন, এখন ঋতু পরিবর্তনের সময়। এই সময়ে কখনো অতিরিক্ত গরম। আবার কখনো হঠাৎ করে ঝড়-বৃষ্টি। অতিরিক্ত গরম আর ঠাণ্ডার মিশ্রণে মানুষ ভাইরাল জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন।

অবশ্য, জ্বর-কাশির মতো উপসর্গ দেখা দিলে করোনা টেস্ট করানোর পরামর্শ দিয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, জ্বর-সর্দি-কাশি ভাইরাল ফ্লু’র কারণেও হতে পারে। তবে কোনো লক্ষণ/উপসর্গ দেখা দিলে করোনা টেস্ট করাটা উচিত।

সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, টিকা নিলেও সকলকে স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। সচেতন হতে হবে।

জ্বর-কাশি থাকলেও অনেকে করোনা টেস্টের বিষয়ে আগ্রহী নন জানিয়ে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি-কাশি। কিন্তু সেভাবে মানুষকে নমুনা দিতে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। অথচ, এখন র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে ১০ থেকে ১৫ মিনিটেই ফল জানা যায়। আগে নমুনা দিতেও মানুষের অনেক কষ্ট হতো। ফল পেতে সময় লাগতো। কিন্তু এখন সে কষ্টটাও নেই। এরপরও মানুষ কোভিড টেস্ট করতে আসছে না। অথচ উপজেলা হাসপাতালসহ সরকারি সব হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে র‌্যাপিড এন্টিজেন কিট মজুদ রয়েছে। লক্ষণ দেখা দিলে যে কেউ হাসপাতালে গিয়ে মাত্র একশ টাকায় এই র‌্যাপিড টেস্ট করাতে পারে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বলছে, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত (১৭ জুন) মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ৭১৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে নগরীর বাসিন্দা ৯২ হাজার ১৪৬ জন। আর ৩৪ হাজার ৫৪৩ জন উপজেলা পর্যায়ের বাসিন্দা। আক্রান্তদের মাঝে এখন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৩২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে নগরীর বাসিন্দা ৭৩৪ জন এবং ৬২৮ জন উপজেলা পর্যায়ের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধওমিক্রনে দীর্ঘ কোভিডের ঝুঁকি কম
পরবর্তী নিবন্ধএকশ দিন পর দৈনিক শনাক্ত ৪০০ ছাড়াল