চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের ৬০ শতাংশই গত দেড় মাসে

মোট মৃত্যুর অর্ধেকও এই সময়ে, আক্রান্ত ছড়ালো দুই হাজার সারা দেশে একদিনে মৃত্যু ৬ জনের

জাহেদুল কবির | শুক্রবার , ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত দুই হাজার ছড়ালো। যার মধ্যে গত দেড় মাসে আক্রান্ত হয়েছে ৬০ শতাংশ। এছাড়া মোট মৃত্যুর অর্ধেকই হয়েছে এই দেড় মাসে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চট্টগ্রামে বর্তমানে কখনো মাঝারি ও কখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ভ্যাপসা গরমও রয়েছে। এমন আবহাওয়া ডেঙ্গুর বংশবিস্তারের জন্য বেশ উপযোগী। এছাড়া বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় স্বচ্ছ পানি জমছে। বিশেষ করে ফুলের টব ও ডাবের খোসা, গাড়ির টায়ারসহ বিভিন্ন পরিত্যক্ত বস্তুতে পানি জমার কারণে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা প্রজননে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীও বাড়ছে। তাই সবাইকে বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখাসহ কোথাও যাতে তিনদিনের বেশি পানি না জমে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এছাড়া রাতে ছাড়াও দিনের বেলায়ও মশারি টানাতে হবে। এদিকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে গতকাল পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ১২০ জন। যার মধ্যে গত আগস্টে আক্রান্ত হয়েছেন ৭০৫ জন এবং সেপ্টেম্বরে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪০ জন। এছাড়া এই দুই মাসে মোট মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। অপরদিকে চলতি বছর মোট মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৭ জন, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে ৫ জন, ২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫ জন এবং বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে আরো ৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া গতকাল মারা গেছেন ১ জন। অন্যদিকে সারাদেশে গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত একদিনে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সঙ্গে এই ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন করে ৬৪৭ জন ভর্তি হয়েছেন।

চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কয়েকজন চিকিৎসক জানান, ডেঙ্গু রোগীর মূল চিকিৎসা হচ্ছে ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট। অনেক অনেক রোগী এনএসওয়ান রিপোর্ট হওয়ার সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন। এটি আসলে কোনো দরকার নেই। ডেঙ্গুর প্ল্যাটিলেট কাউন্ট ১০ হাজারের নিচে নেমে গেলে তখন ইন্টারনাল ব্লিডিং শুরু হয়। তখন ক্রিটিক্যাল কেয়ার ম্যানেজমেন্টের প্রয়োজন পড়ে। আবার প্ল্যাটিলেট কমা শুরু হয় জ্বর কমে যাওয়ার পর পর। তখন শারীরিক কিছু অসুবিধা দেখা দেয়। ওই সময় হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে প্ল্যাটিলেট নিয়ে আতঙ্ক লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আসলে প্ল্যাটিলেট যখন বাড়া শুরু হয় তখন দ্রুতই বাড়ে। কাজেই ডেঙ্গু জ্বর হলেই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চট্টগ্রামে গত দুই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। তবে আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে আমরা সফলভাবে ডেঙ্গু মোকাবেলা করে আসছি। ডেঙ্গু মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। বাড়ির ফুলের টব কিংবা বাড়ির ছাদে যাতে পানি জমে না থাকে সেইদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

এদিকে গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ‘র‌্যাপিড রেসপন্স টিম’ নগরীর ছয়টি ওয়ার্ডে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে। জরিপে কীটত্বাত্বিক দলের সদস্যরা নগরীর চট্টেশ্বরী রোড, ও আর নিজাম রোড, আগ্রাবাদ, পাহাড়তলী, হালিশহর এবং ঝাউতলায় এলাকার ১২৮টি বাড়ির মধ্যে ৬২ টিতে এডিস মশার লার্ভা দেখতে পান। পরবর্তীতে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন স্বাক্ষরিত জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে মশা নিধনে তিনটি সুপারিশ করা হয়। সেগুলো হলোডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা। কীটতাত্ত্বিক জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহে অনতিবিলম্বে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং পর্যায়ক্রমে সিটি কর্পোরেশনের অন্যান্য ওয়ার্ডসমূহকে উক্ত কার্যক্রমের আওতায় আনা এবং মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা।

উল্লেখ্য, গত বছর ২০২৪ সালে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৩২৩ জন এবং মারা যান ৪৫ জন। এর আগে ২০২৩ সালে আক্রান্ত ১৪ হাজার ৮৭ জন। এরমধ্যে মারা যান ১০৭ জন। এছাড়া ২০২২ সালে মোট আক্রান্ত ৫ হাজার ৪৪৫ জনের মধ্যে মারা যান ৪১ জন এবং ২০২১ সালে আক্রান্ত হন ২২১ জন এবং মারা যান ৫ জন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছাত্রদল-ছাত্রশিবিরসহ ১০ প্যানেল ঘোষণা
পরবর্তী নিবন্ধসেই বৈলাম গাছটিকে ‘স্মারক বৃক্ষ’ ঘোষণা