চট্টগ্রামে চলতি বছরের নভেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মারা যান ৪১ রোগী। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডেঙ্গু কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের নভেম্বর মাসে ১৬, অক্টোবরে ৯, সেপ্টেম্বরে ১১, আগস্টে ১, জুলাইয়ে ১, মার্চে ১ ও জানুয়ারিতে ২ জনের মৃত্যু হয়। গত বছর ১০৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৮ জন মারা যান আগস্ট মাসে। সেপ্টেম্বরে ২১, নভেম্বর ও জুলাইয়ে ১৬ জন করে, অক্টোবরে ১২, জুনে ৬ জন, ডিসেম্বরে ৫ এবং জানুয়ারিতে ৩ জন মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া ২০২২ সালে ৪১ ও ২১ সালে ৫ জন মারা যান। গত চার বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম থাকে। খবর বাসসের।
এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ বছর এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৯৪৯ রোগী সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা ছিল প্রায় তিন গুণ, ১৪ হাজার ৮৭ জন। ২০২২ সালে ৫ হাজার ৪৪৫ ও ২১ সালে ২৭১ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।
ডেঙ্গু কন্ট্রোল রুম গতকাল জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের ১৬ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ২ জন ক্যান্টনমেন্ট সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এবং বেসরকারি হাসপাতালে ২ জনকে ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৮২ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩ হাজার ৮৬৭ জন।
তবে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে আশার বাণী শুনিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন অফিসের কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদৌস। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমতে শুরু করেছে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে এ রোগের প্রাদুর্ভাব আরো কমবে। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, তাপমাত্রা কমার সাথে সাথে এডিস মশা কমে যাবে। এ জাতীয় মশা ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না। ফলে প্রাকৃতিক কারণে এডিস মশা মারা যায়। তবে এ সময়ে কিউলেঙ মশার বংশ বৃদ্ধি ঘটে।
নভেম্বরে দেশেও সর্বোচ্চ মৃত্যু : বিডিনিউজ জানায়, দেশে গত একদিনে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে এ বছর মোট ৪৮৮ জনের প্রাণ কাড়ল মশাবাহিত এ রোগ। এর মধ্যে এক মাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু নিয়ে শেষ হলো নভেম্বর; ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৭৩ জন। এ বছর এক মাসে এটাই সর্বোচ্চ মৃত্যু।
এ বছর সবচেয়ে বেশি ৩০ হাজার ৮৭৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছে অক্টোবর মাসে; মত্যু হয়েছিল ১৩৫ জনের। অপরদিকে নভেম্বরে ২৯ হাজার ৬৫২ জন রোগী ভর্তি হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১৭৩ জনের। এ রোগে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৬৭৫ জন। এতে এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯১ হাজার ৪৬৯ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩১৯ জন, ঢাকা বিভাগে ৬৯ জন, ময়মনসিংহে ১৮ জন, চট্টগ্রামে ৭২ জন, খুলনায় ৬৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৭ জন, রংপুর বিভাগে ৬ জন, বরিশাল বিভাগে ৯৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন তাদের সবাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গতকাল পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৮৭৯ জন রোগী। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩১০২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ১৩৩৮ জন এবং ১৭৬৪ ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে। এ বছর মোট ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৫৪ হাজার ৮২২ জন ঢাকার বাইরের রোগী। ঢাকার দুই মহানগর এলাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৬ হাজার ৬৪৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখে ২০০০ সাল থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এ রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৭০৫ জনের মৃত্যুও হয় ওই বছর।