দীর্ঘ বিরতির পর চট্টগ্রামবাসী আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পেতে যাচ্ছে। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়েছিল চট্টগ্রামে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। সে ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে গিয়েছিল ৩ উইকেটে। আট মাস পর আবার চট্টগ্রামে শুরু হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। এবার বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান।
তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর পরই শুরু হবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান টেস্ট সিরিজ। আগামী ২৬ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রামে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট ম্যাচ। সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যথারীতি এই টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম টেস্ট ম্যাচকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে দলের অধিকাংশ ক্রিকেটার ইতিমধ্যেই চট্টগ্রাম পৌঁছে গেছেন। তারা শনিবার চট্টগ্রামে এসে গতকাল অনুশীলনও শুরু করে দিয়েছেন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। তবে বিসিবি তাদের আন অফিসিয়ালিই পাঠিয়ে দিয়েছে অনুশীলনের সুবিধার্থে। ক্রিকেটাররা নিজেদের উদ্যোগে গতকাল অনুশীলন করেছেন। বাংলাদেশের দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে আছেন টেস্ট অধিনায়ক মোমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, নাইম হাসান, সাদমান ইসলাম, এবাদত হোসেন, লিটন দাশ, আবু জায়েদ রাহি, খালেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ। টি-টোয়েন্টি থেকে বিশ্রামে থাকা মুশফিকুর রহিম আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন ভালো টেস্ট প্রস্তুতির জন্য তিনি আগেভাগেই চট্টগ্রাম গিয়ে অনুশীলন শুরু করবেন। সে হিসেবে তিনি চলে এসেছেন চট্টগ্রামে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার ফজলে বারী খান রুবেল গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানান, ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও মাঠে বসে খেলা দেখার সুযোগ থাকবে দর্শকদের জন্য। এ জন্য অনুমতি দেয়া হবে। তবে দর্শকসংখ্যা থাকবে পঞ্চাশ শতাংশ। তিনি বলেন, পাঁচ হাজারের মতো দর্শক মাঠে ঢুকতে পারবেন খেলা দেখতে। খেলার দিন টিকিট পাওয়া যাবে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের কাউন্টারে। তবে যারাই খেলা দেখতে আসবেন তাদেরকে ভ্যাকসিন কার্ড দেখাতে হবে। করোনার টিকা নেওয়ার প্রমাণ হিসেবে এই ভ্যাকসিন কার্ড ছাড়া কোন দর্শক স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে পারবেন না। অনেক আগে থেকেই খেলোয়াড়রা বায়ো বাবেল বা জৈব সুরক্ষায় আছেন। তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই কঠোর এই ব্যবস্থা বলে জানান তিনি।
এদিকে আরো জানা গেছে যারা টি-টোয়েন্টি দলের বাইরে আছেন তাদের আজ কোভিড টেস্ট হবে। এরপর কোভিড টেস্ট নেগেটিভ সাপেক্ষে তাদের আগামীকাল ২৩ নভেম্বর বায়ো বাবেলে প্রবেশ করতে হবে। এদিন বিকেলে পাকিস্তান দলও চট্টগ্রামের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবে। বিকেলে তারা চট্টগ্রামে পৌঁছাবেন। একই দিন বাংলাদেশের বাকী খেলোয়াড় এবং কর্মকর্তারাও চট্টগ্রামে চলে আসবেন। সবার অবস্থান হবে হোটেল র্যাডিসন ব্লুতে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ চট্টগ্রাম টেস্টের জন্য ইতিমধ্যে সাত স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করেছে। হোটেলে তিন স্তর এবং জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। ৯০০ পুলিশ এই নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কাজ করবেন। টেস্ট ম্যাচ শুরুর আগে ২৪ এবং ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান দুই দল সকাল-বিকাল দুই সময়ে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুশীলনে অংশ নেবেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আওতায় সাগরিকার অবস্থিত বিটাক এর মোড় থেকে গাড়ী থামিয়ে দেয়া হবে। আগের মতোই দর্শকদের হেঁটেই মূল স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে হবে।
এদিকে বিটাক এর মোড় থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মাঠে যাওয়া অনেকের কাছে বিড়ম্বনার মতো মনে হলেও এবারো তা থেকে মুক্তি পাবেন না দর্শকরা। নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা চিন্তা করে এ ব্যাপারে কিছু করার নেই বলে জানান নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে ক্রীড়া সংগঠক এবং ব্যাংকার তৌফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, দর্শকদের জন্য নিরাপত্তার বিষয়টি একটু বাড়াবাড়ির মতোই মনে হয়। এমনিতে শহর থেকে অনেক দূরে সাগরিকার এই ভেন্যুতে একটা কম্যুনিকেশন গ্যাপ রয়েছে। তার উপর নিরাপত্তা। অনেক দূর হেঁটে যাওয়া সবমিলে বেশিরভাগ দর্শকের কাছেই বিষয়টি ভোগান্তির মতো। এন্ট্রি পাস যাদের আছে তারাই গাড়ী নিয়ে সুবিধা করতে পারে। নয়তো তা দূরে রেখেই স্টেডিয়ামে ঢুকতে হয়। আবার গাড়ী ভাড়া, স্টেডিয়াম থেকে ফিরে আসার সময় ঠিকমতো গাড়ীর ব্যবস্থাও থাকেও না। স্টেডিয়ামে ঢুকেও শান্তি নেই। তিন চারগুণ বেশি দামে পানি-খাবার ইত্যাদি কিনে নিতে হয়। যা সাধারণ দর্শক বিশেষ করে গ্যালারির দর্শকদের জন্য মোটেও সম্ভব হয় না। অথচ এরাই মাঠে বেশি যায় খেলা উপভোগ করতে, খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিতে। তার কাছে এই স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে যাওয়া মানেই প্রচুর ভোগান্তি। তিনি এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সহৃদয় সহযোগিতা কামনা করেন।