যুগে যুগে চট্টগ্রাম সর্বক্ষেত্রে নবধারার সূচনা করেছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলা সংস্কৃতির বিকাশ ও বিন্যাসে চট্টগ্রামের অবদান চির অম্লান। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের এক তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা সৃষ্টি করেছেন ইতিহাস। নাম তার আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আসর ৭৪ তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে অফিশিয়াল সিলেকশনে নির্বাচিত হয়েছে তার নির্মিত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমাটি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন ঘটনা ঘটল। এবারের আসরে ‘আঁ সাতা রিগা’ বিভাগে ১৫ টি দেশের ১৮ টি ছবি মনোনীত হয়েছে। তালিকার ১৩ নম্বরে আছে সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবিটি। ছবিতে নারীর শক্তি ও ক্ষমতাকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৬ সালের ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ চলচ্চিত্রের পর এটি সাদের দ্বিতীয় সিনেমা।
এর আগে ২০০২ সালে ৫৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্যারালাল ডিরেক্টরস ফোর্ট নাইটের অফিশিয়াল সিলেকশনে স্থান করে নিয়েছিল চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ পরিচালিত ‘মাটির ময়না’। কিন্তু কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা এবং ‘আঁ সাতা রিগা’ নামের যে দুটি মূল পর্ব রয়েছে, সাদের চলচ্চিত্রটি জায়গা করে নিয়েছে তার একটিতে।
‘রেহানা মরিয়ম নূর’- এর গল্প বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক রেহানা মরিয়ম নূরকে নিয়ে। সেখানে রেহানা একজন মা, মেয়ে, বোন ও শিক্ষক। ঝঞ্জা বিক্ষুব্ধ তার জীবন। এক সন্ধ্যায় কলেজ থেকে বের হওয়ার সময় রেহানা এক অপ্রত্যাশিত ঘটনার সাক্ষী হয়। এর পর থেকেই সে এক ছাত্রীর পক্ষ হয়ে সহকর্মী শিক্ষকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ঘটনার প্রতিবাদ করতে থাকে, ক্রমেই একরোখা হয়ে ওঠে। কিন্তু একই সময়ে তার ছয় বছর বয়সী মেয়ের বিরুদ্ধে স্কুল থেকে রূঢ় আচরণের অভিযোগ করা হয়। এ পরিস্থিতিতে অনড় রেহানা তথাকথিত নিয়মের বাইরে থেকে সেই ছাত্রী ও তার সন্তানের জন্য ন্যায়বিচারের খোঁজ করতে থাকে। ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন সাদ নিজেই। এতে প্রধান চরিত্রে (রেহানা) অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন।
১৯৮৫ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সাদ। মেধাবী এই তরুণ চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা শুরু করেন। ছাত্রাবস্থার শেষভাগে এসে তিনি টিভি নাটকের চিত্রনাট্য লেখা শুরু করেন। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তিনি। প্রায় এক যুগের ক্যারিয়ারে কোনও সাক্ষাৎকার, টকশোতে দেখা যায়নি সাদকে। জানা গেছে, ফেসবুকসহ কোনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই তার অ্যাকাউন্ট নেই; এমনকি ইন্টারনেটে তার দুয়েকটার বেশি ছবিও খুঁজে পাওয়া যায় না।
২০১৬ সালে ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ চলচ্চিত্র দিয়ে যাত্রা শুরু পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের। ২৭ তম সিঙ্গাপুর ফিল্ম ফ্যাস্টিভ্যালে সেরা পরিচালকের পুরস্কার ‘সিলভার স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছিল ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’।












