চট্টগ্রামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট করে গ্রাহকের ১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি, পরিচালনা পর্ষদসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মর্তুজা আলী নামে এক ব্যবসায়ী।
আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ার আদালতে এ মামলা করেন তিনি। মামলাটি গ্রহণ আদালত সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ হেলাল বিন মঞ্জুর।
ব্যবসায়ী মর্তুজা আলী জানান, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ইস্টার্ন ব্যাংকের চান্দগাও শাখায় ছয়টি স্থায়ী আমানত হিসাবে ১১ কোটি ৯০ লাখ টাকা জমা করেন। একই সঙ্গে এর বিপরীতে সিকিউরড ওভারড্রাফট আবেদন করেন। পরবর্তীতে তাঁর বিদেশে অবস্থানের সুযোগ নিয়ে ব্যাংকের শীর্ষ থেকে শাখা পর্যায়ের কর্মকর্তারা ছয়টি ভুয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নানা সময়ে এসব টাকা তুলে নেন। অথচ এসব বিষয়ে অবগত করা হয়নি গ্রাহককে।
এসব অভিযোগে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদও জড়িত বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী। এসব অর্থ ফেরত পেতে একাধিকবার ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েও কোনো সুরাহা না পাওয়ায় মামলা করেন বলে জানান তিনি। ব্যাংকের সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকের টাকা এভাবে আত্মসাৎ করেন বলেও অভিযোগ করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী হেলাল বিন মঞ্জুর তামিম বলেন, ‘আমার মক্কেল মো. মর্তুজা আলী সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্টসহ এফডি (ফিক্সড ডিপোজিট) অ্যাকাউন্ট খোলেন। এফডিতে তিনি বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা জমা করেন। এ ছাড়া সঞ্চয়ী হিসাবে ৫০ লাখ টাকা জমা ছিল। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদসহ উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে আমার মক্কেলসহ আরও বিভিন্ন নামে এবং ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলেন। সেই অ্যাকাউন্টগুলো ব্যবহার করে আমার মক্কেল বিদেশে থাকা অবস্থায় তারা এফবির বিপরীতে ঋণ নেয়। যা আমার মক্কেল জানতেন না।’
আদালতের নির্দেশনা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আদালতকে ইস্টার্ন ব্যাংকের এই জালিয়াতির বিষয়টি জানিয়েছি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা করেছি। পুরো বিষয়টি আমলে নিয়ে আদালত সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।’
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালে মর্তুজা আলী ইস্টার্ন ব্যাংক (ইবিএল) চান্দগাঁও শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব খুলে ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা জমা করেন।
এ ছাড়া ওই বছর ও পরের বছরে ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার ছয়টি এফডিআর করেন। ইস্টার্ন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তারা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দুটি জাল সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট ও চারটি জাল ঋণ হিসাব খোলার মাধ্যমে প্রায় ১২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তারা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে চেকবই ইস্যু ও গ্রহণের মাধ্যমে জাল স্বাক্ষর দ্বারা চেক ও ফান্ড ট্রান্সফার করে এসব টাকা আত্মসাৎ করেন।
মামলার বাদী মর্তুজা আলী বলেন, ‘ইস্টার্ন ব্যাংকের প্রায়োরিটি হিসাবধারী হওয়ার সুবিধা নিয়ে ব্যাংকটি জাল-জালিয়াতি করে আমার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ জন্য ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ পরিচালনা পরিষদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাদের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর না পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তনের পর আমরা আদালতে এসে মামলা করার সুযোগ পেয়েছি। আদালত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করি, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ব্যাংকের এই জালিয়াতি উদঘাটন হবে।’