চট্টগ্রাম নগরীর আবেদীন কলোনি থেকে নিখোঁজ গৃহবধূর বিবস্ত্র লাশ কর্ণফুলী থানাধীন কালারপুর খাল থেকে উদ্ধারের ঘটনায় মামলা নেওয়া নিয়ে কর্ণফুলী ও কোতোয়ালী থানার মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।
কর্ণফুলী থানা কর্তৃপক্ষ ও কোতোয়ালী থানায় এবং কোতোয়ালী থানা কর্তৃপক্ষ কর্ণফুলী থানায় মামলা দায়ের করার পরামর্শ দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে ভিকটিমের পরিবার।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় কর্ণফুলী কালারপুল ব্রিজ থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে কর্ণফুলী থানা পুলিশ। ওই নারীর নাম দিলরুবা বেগম পিপা। তার এক মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে।
তবে লাশ উদ্ধারের ২/৩ দিন আগে কোতোয়ালী থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করে ভিকটিমের স্বামী আবদুল আলিম প্রকাশ আলিম।
ভিকটিমের পরিবারের অভিযোগ স্ত্রীর লাশ উদ্ধার হওয়া খবরে স্বামীর কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। স্ত্রীর লাশ দেখতে মর্গে না গিয়ে বড় মেয়েকে সাথে নিয়ে কোতোয়ালী থানায় আশ্রয় নেন স্বামী।
পরিবারের অভিযোগ, ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার জন্য ভিকটিমের স্বামী এমন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে। ভিকটিম নিখোঁজ হওয়ার খবরও তাদের জানানো হয়নি। ভিকটিমের পরিবারের সদস্যদের দাবি বিয়ের পর থেকে কলহ চলছে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে দিলরুবাকে।
ভিকটিমের মামা ইয়াকুব আজাদীকে জনান, কালকে মর্গে গিয়ে আমার ভাগিনীর লাশ সনাক্ত করেছি। ভিকটিমের স্বামী, মর্গে স্ত্রীর লাশ দেখতে না গিয়ে তার বড় মেয়েকে সাথে নিয়ে থানায় ঘুরছে। সে যদি নির্দোষ হতো সে কেন স্ত্রীর লাশ দেখতে গেলো না।
এই ঘটনায় মামলা করা নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে। দুই থানা একে অপরের কাছে মামলা রুজু করার পরামর্শ দিচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক।
ভিকটিমের স্বামী আবদুল আলিম প্রকাশ আলিম আজাদীকে জানান, আমি নির্দোষ, আমার স্ত্রী আমার ফ্ল্যাট কিংবা আশপাশে মারা যায়নি। সে বাকলিয়ার বাবার বাসায় যাবে বলে বাসা থেকে বের হয়েছিল। পরে খোঁজ না পাওয়ায় কোতোয়ালী থানায় জিডি করেছি।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানার ওসি মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, কালারপুল খালে এক নারী লাশ ভাসছে স্থানীয়দের এমন খবরে ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। সেখানে লাশের পরিচয় সনাক্ত করে ভিকটিমের পরিবার। পরে জানা যায়, ওই নারী নিখোঁজের ঘটনায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করে ভিকটিমের স্বামী। যেহেতু আগে থেকে ওই থানায় নিখোঁজ ডায়েরি রয়েছে সেহেতু সেই থানা ব্যবস্থা নিতে পারে।
এদিকে কোতোয়ালী থানার ওসি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, এই ঘটনায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করে ভিকটিমের স্বামী। তবে লাশটি উদ্ধার হয় কর্ণফুলী থেকে। স্বামীর কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অধিকতর তদন্ত চলছে। ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ থেকে এজাহার নিয়ে আসতেছে। মামলার জন্য ভিকটিমের পরিবারকে কর্ণফুলী থানায় পাঠানো হচ্ছে।
লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা দায়ের নিয়ে দুই থানার টানাপোড়েন নিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি কাজী মোঃ তারেক আজিজ জানান, দায়ের হওয়া এজাহারের বক্তব্যের উপর নির্ভর করবে মামলাটি কোন থানায় রুজু হতে পারে। এজাহারে যদি নগরী থেকে নিখোঁজ হওয়ার কথা উল্লেখ থাকে সেক্ষেত্রে কোতোয়ালী থানা মামলা নিতে পারে।
আর যদি কর্ণফুলী থেকে উদ্ধারের কথা উল্লেখ থাকে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানা মামলা নিতে পারে। তবে নিখোঁজের ঘটনায় আগে যেহেতু কোতোয়ালী থানায় জিডি হয়েছে সেহেতু ওই থানায় মামলা রুজু করা যাবে। এটি জটিল কিছু নয়।