একটি অভূতপূর্ব উদ্যোগ। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রামে ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার যাত্রা শুরু হলো বৃহস্পতিবার। বিশ্ব ক্যান্সার দিবসেই শুভ সূচনা হলো চট্টগ্রামের অধিবাসীদের বহুল প্রত্যাশার এই হাসপাতালের। গত ৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘এক মহৎ উদ্যোগের সূচনা’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ জনগণের টাকায় জনগণের জন্য প্রতিষ্ঠাতব্য এই হাসপাতালের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। প্রায় ১২০ কোটি টাকার বিশ্বমানের এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য ভূমিমন্ত্রী ইউনাইটেড কমার্শিয়াল (ইউসিবিএল) ব্যাংকের পক্ষ থেকে পাঁচ কোটি টাকার অনুদান ঘোষণা করেন। এই হাসপাতালের জন্য দৈনিক আজাদী পরিবারের পক্ষ থেকেও দেয়া হয় এক কোটি টাকার অনুদান। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের বহু দানশীল মানুষ হাসপাতালের জন্য অর্থ প্রদান করেছেন। চট্টগ্রামের বহু মানুষের অংশগ্রহণে ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার এই কার্যক্রম সফল হবেই বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেছেন, টাকার জন্য এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম আটকে থাকবে না। এই হাসপাতাল ইনশা আল্লাহ হবেই। চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য সেবায় অনন্য ভূমিকা রাখা চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের একটি প্রকল্প হিসাবে এই ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। হাসপাতালটি চট্টগ্রামে ক্যান্সার চিকিৎসার দৈন্য দশা ঘোচানোর পাশাপাশি বিশ্বের একটি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান হিসেবেও যাতে আত্মপ্রকাশ করে সেদিকে সজাগ থাকতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। এই হাসপাতালটি চালু হলে চট্টগ্রামের রোগীদের ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য আর বাইরে যেতে হবে না। দেশের কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন। শুধু চট্টগ্রামেই ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখেরও বেশি। আর এসব রোগীর মধ্যে ফুসফুস, মুখগহ্বর, রক্তনালি, জরায়ু ও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। নারী রোগীদের মধ্যে শতকরা ৩০ ভাগ স্তন এবং জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ছাড়া তেমন কোনো চিকিৎসা সুবিধা নেই এই চট্টগ্রামে।
আন্তর্জাতিক একটি সংস্থা বলছে, বাংলাদেশে ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যবস্থা যা আছে, তা একদিকে অপ্রতুল এবং অন্যদিকে দীর্ঘ মেয়াদে অনেক ব্যয়বহুল। আক্রান্তদের অনেকে বলেছেন, চিকিৎসা ব্যয় সামলাতে গিয়ে জমিজমা বিক্রি করে পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। ঢাকায় জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট এর ৩০০ শয্যার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ রোগীই নিম্ন আয়ের পরিবারের নারী এবং পুরুষ। সেখানে রোগীরা বলছেন, বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় সরকারি এই হাসপাতালে খরচ কিছুটা কম। কিন্তু লম্বা সময় ধরে সেটাও সামাল দিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন নারীর বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকান্তরে। তিনি বলেছেন, সময়মতো হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা পাওয়ার জন্যও তাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। আমি ঢাকার বাইরে থেকে আসি। কিন্তু এখানে সময়মতো সিরিয়াল পাই না। বলা হয়, ১০দিন পরে আসেন। আবার কয়েকদিন পর আসতে বলে। আমি সময়মতো চিকিৎসা পাই না। টাকাও অনেক খরচ হয়। সেটা যোগাড় করাও আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের সমস্যা, খুব সমস্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসা ব্যয় পরিবারগুলোকেই পঙ্গু করে দিচ্ছে। প্রতিবছর কত মানুষ চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য দরিদ্র সীমার নিচে নেমে যাচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেক মানুষই ধারণা না থাকায়, এই সেবা নিতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন, নিজে মারা যাচ্ছেন, তার পরিবারকেও মেরে রেখে যাচ্ছেন। এই নিষ্ঠুর সত্যটা আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত না বুঝবো, ততক্ষণ পর্যন্ত ক্যান্সার শব্দটা নিয়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি হবেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকটের কারণে বিশেষায়িত হাসপাতাল সেভাবে গড়ে উঠছে না। অস্বীকার করা যাবে না যে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা খুবই কম। শুধু বিশেষজ্ঞ হলেই তো হবে না। হাসপাতালের সুবিধাও দরকার। আশা করছি চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে এই ক্যান্সার হাসপাতাল চট্টগ্রামের অধিবাসীদের, বিশেষ করে রোগীদের সেই প্রত্যাশা পূরণে সচেষ্ট হবে। চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং চিকিৎসা ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সনিষ্ঠ আন্তরিকতায়। তাই চট্টগ্রামে ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার এ উদ্যোগ প্রশংসনীয় ও অভিনন্দনযোগ্য।