চট্টগ্রামে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, সচেতনতা জরুরি

| সোমবার , ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, চট্টগ্রামে ক্যানসার রোগী বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। ২০২১ সালে ক্যানসার আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ২৯৩ জন। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৬২৬। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আলী আসগর চৌধুরী পত্রিকাটিকে বলেছেন, রোগী প্রতিবছর বাড়ছে। এবারও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। তবে নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত প্রায় অর্ধেকের বয়স ৫০ বছরের নিচে। এটা উদ্বেগজনক। এ নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সচেতনতা জরুরি। ছোটখাটো সমস্যাকে বড় হতে দেওয়া যাবে না। চিকিৎসকদের মতে, কম বয়সে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের সঠিক কারণ খুঁজতে এ নিয়ে গবেষণা করা দরকার। তাঁদের সম্ভাব্য কারণের মধ্যে অসচেতনতা এবং জিনগত ব্যাপার থাকতে পারে। আর খাদ্যাভ্যাস, বিশেষ করে ধূমপান, জর্দা, তামাকজাতীয় দ্রব্যসহ নানা কারণে মুখগহ্বর, গলা ও পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
চট্টগ্রাম জেলার ১ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার জন্য হাসপাতালে রয়েছে মাত্র ৪২টি ক্যান্সার বেড। অথচ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক। বিত্তবানরা উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানী এবং দেশের বাইরে ছুটে যেতে পারলেও সাধারণ রোগীদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। তাই স্বল্পআয়ের মানুষ সুযোগের অভাবে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। তবে দিন দিন প্রয়োজন বিবেচনায় চিকিৎসা সেবায় উন্নতি ঘটছে। দৈনিক আজাদীতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, ক্যান্সার চিকিৎসার সুযোগ বাড়ছে। এতে বলা হয়েছে, ক্যান্সারের চিকিৎসা সরঞ্জামের প্রকট অভাব দীর্ঘদিন ধরে। তবে বর্তমানে এ সংকট অনেকটাই দূর হয়েছে। দিন দিন ক্যান্সার চিকিৎসায়ও সুযোগ বাড়ছে চট্টগ্রামে। হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগে বর্তমানে রেডিওথেরাপি ও ব্র্যাকিথেরাপি সেবা চালু রয়েছে। সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক সিটি স্টিমুলেটর মেশিনও। আগে রেডিওথেরাপি মেশিন অকেজো হলেই দীর্ঘ দিন সেবা বন্ধ থাকতো। এতে করে রেওিথেরাপি সেবা নিতে ঢাকায় ছুটতে হতো রোগীদের। তবে বেশ ক’বছর ধরে অনেকটা ধারাবাহিকভাবে এ সেবা পাচ্ছে চট্টগ্রামের রোগীরা। এদিকে, চমেক হাসপাতালে নতুন একটি ক্যান্সার ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। গত ৯ জানুয়ারি ভার্চুয়ালি এ ভবনের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৫ তলা বিশিষ্ট এ ভবনে ৭ম তলা পর্যন্ত থাকছে ১৮০ শয্যার বিশেষায়িত ক্যান্সার ইউনিট। এটি চালু হলে চট্টগ্রামের ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে মনে করেন চমেক হাসপাতাল ক্যান্সার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফ। বিশেষায়িত এই ইউনিটে ক্যান্সারের চিকিৎসায় অত্যাধুনিক সব চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকবে জানিয়ে ডা. সাজ্জাদ বলেন, ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসায় যা প্রয়োজন, এক কথায় সব কিছুই ওখানে থাকবে। দক্ষ চিকিৎসক-নার্সের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জনবলও নিশ্চিত করা হবে। মোটকথা, বিশেষায়িত ক্যান্সার ইউনিটটি চালু হলে চট্টগ্রামে ক্যান্সারের চিকিৎসায় আমূল পরিবর্তন আসবে। কোনো রোগীকে আর রাজধানী ঢাকায় ছুটতে হবে না।
অন্যদিকে, একটি স্বতন্ত্র ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল। ১০০ শয্যার এ হাসপাতালটি নির্মাণে ব্যয় হবে ১২০ কোটি টাকা। চট্টগ্রামের বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও বিত্তবান মানুষদের আর্থিক সহায়তায় এ প্রতিষ্ঠানটি তিন বছরের মধ্যে নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামে এ দুটি ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে উঠলে অল্প খরচে মিলবে দূরারোগ্য এই ব্যাধির চিকিৎসাসেবা। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘চট্টগ্রামে নেই কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল। হার্ট, কিডনি, লিভার, বার্ন চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সেবার জন্য রাজধানীতে আলাদা আলাদা হাসপাতাল থাকলেও সরকারী পর্যায়ে চট্টগ্রামের মানুষের চিকিৎসার জন্য একমাত্র অবলম্বন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সকল ধরনের রোগীকে সেখানেই ছুটতে হয়। এতে সীমিত সক্ষমতার হাসপাতালটির ওপর চাপও বেশি’। জটিল বিভিন্ন ধরনের রোগের জন্য পৃথক পৃথক বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে তোলা চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। আশা করছি, এ দাবি পূরণে সরকার আরো বেশি তৎপর হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে