ঢাকা শহরে সিএনজি চলাচলের ভুয়া রুট পারমিট ও আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র সৃজনের নামে ধাপে ধাপে ব্যবসায়ীর ৯১ লক্ষ টাকা আত্মসাতের মামলায় সাহেদ করিম প্রকাশ সাহেদকে শোন অ্যারেস্টের পাশাপাশি তার চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর আগে রিমান্ড শুনানির সময় আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অকপটে দোষ স্বীকার করেন করোনো টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে সারাদেশে আলোচিত রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ। যদিও তার আইনজীবীরা তাকে ‘মিথ্যা’ মামলায় ফাঁসিয়েছেন বলে দাবি করেছিলেন।
গতকাল রোববার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শফি উদ্দিন ও ৫ম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার জাহানের পৃথক আদালতে আসামি সাহেদকে হাজির করা হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ধৃতিমান আইচ জানান, সাহেদের বিরুদ্ধে ডবলমুরিং থানায় দায়ের হওয়া প্রতারণার মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্মকর্তা দুটি আবেদন করেছিলেন। প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় সাহেদকে শ্যোন অ্যারেস্টের আবেদন ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার জাহানের আদালত মঞ্জুর করেছেন। পরবর্তীতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালত রিমান্ডের আবেদনের ভিত্তিতে চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। পুলিশ তাকে দশদিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন। এর আগে আসামি সাহেদ আদালতে দাঁড়িয়ে তার দোষ স্বীকার করেছেন বলে জানান ধৃতিমান আইচ। গত ১৩ সেপ্টেম্বর মো. সাইফুদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী ডবলমুরিং থানায় সাহেদ করিমের পাশাপাশি মো. শহীদুল্লাহ নামে আরও একজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ঢাকা উত্তরার সিরাজুল করিমের ছেলে সাহেদ রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান। অন্যদিকে শহীদুল্লাহ ফেনী ছাগলনাইয়া এলাকার বাসিন্দা। পুলিশ বলছে, আসামি শহীদুল্লাহ বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। তার সাথে সাহেদের আত্মীয়ের সম্পর্ক রয়েছে।
আদালতে প্রতারক সাহেদের নিজ থেকে দোষ স্বীকার : গতকাল নির্ধারিত সময়ে আদালতে সাহেদের রিমান্ড শুনানির আগে রাষ্ট্রপক্ষের ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছিল। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা দাবি করেন, তাদের মক্কেল সাহেদের বিরুদ্ধে মামলাটি ‘গায়েবি’ মামলা। তাকে ‘মিথ্যা’ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তবে ওই মুহূর্তে আসামি সাহেদ নিজেই দোষ স্বীকার করে আদালতকে এ বিষয়ে জানান, ‘এক আত্মীয়ের মাধ্যমে মেগা মোটরসের সাথে তার ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে উঠে। সেই আত্মীয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির সাথে সিএনজি’র ব্যাপারে তার ২০/২৫ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে।’
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ডবলমুরিং থানার এসআই মো. মোস্তাফিজুর রহমান আজাদীকে বলেন, ‘আদালতে সাহেদ প্রাথমিকভাবে নিজের প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন। এ সময় সাহেদ প্রাথমিকভাবে ২০/২৫ লক্ষ টাকা মেগা মোটরসের সাথে লেনদেনের কথা বলেন।’ এটা তদন্তের মাধ্যমে পরবর্তীতে বিস্তারিত জানা যাবে বলে জানান তিনি।
এর আগে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারগার থেকে বেলা একটায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাহেদকে তোলা হয়। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণ ঘিরে পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা যায়। গত শনিবার তাকে ডবলমুরিং থানার এই মামলায় হাজিরা দিতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে আসা হয়।
মামলার এজাহারে সাহেদের বিরুদ্ধে সাইফুদ্দিন অভিযোগ এনেছেন, গাড়ির টায়ার ও যন্ত্রাংশ আমদানিকারক চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠান মেগা মোটরস’র আমদানিকৃত সিএনজি থ্রি-হুইলার গাড়ি ঢাকা সিটিতে চলাচলের ক্ষেত্রে রুট পারমিটসহ আনুষাঙ্গিক কাজের অনুমতি নিয়ে দেওয়ার কথা বলে আসামিরা আশ্বস্ত করেন। একটি পর্যায়ে ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি সাহেদ করিমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘রিজেন্ট কেসিএস লিমিটেড’র প্রিমিয়ার ব্যাংক ঢাকার এভিনিউ গেট শাখার হিসাবে ৩০ লক্ষ টাকা, ২৫ জানুয়ারি প্রিমিয়ার ব্যাংক চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ ব্রাঞ্চে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ৩০ জানুয়ারি ৫ লক্ষ টাকা, ১ ফেব্রুয়ারি ৫ লক্ষ টাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি ৬ লক্ষ টাকা, ১৬ ফেব্রুয়ারি সাড়ে তিন লক্ষ টাকাসহ ওই বছর ৭ মার্চ পর্যন্ত ধাপে ধাপে ব্যাংক হিসাবে ও নগদ ৯১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা গ্রহণ করে। ২০১৭ সালের ৫ মার্চ বিআরটিএ চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র মেসার্স মেগা মোটরস্ বরাবরে প্রদান করা হয়। সেখানে ২০০টি থ্রি-হুইলার সিএনজি ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় চলাচলের রেজিস্ট্রেশন অনুমোদন দেয়ার কথা উল্লেখ ছিল। এ ব্যাপারে বিআরটিএ কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে সাহেদের দেয়া বিআরটিএ’র পরিপত্রটি ভুয়া ও জাল বলে প্রমাণিত হয়। এই বিষয়ে পরে সাহেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালক্ষেপণ করার পাশাপাশি বাদীর বড় ভাই ও মেগা মোটরসের প্রোপাইটর জিয়া উদ্দিন মো জাহাঙ্গীরকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখান। এক পর্যায়ে বাদীর বড় ভাই অসুস্থ হয়ে পড়েন।