করোনায় আক্রান্তদের মাঝে বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) পর্যন্ত ৩৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। মৃতদের মাঝে ২৭৮ জন পুরুষ। আর ৮২ জন নারী। হিসেবে করোনায় মোট মৃত্যুর ৭৭ ভাগই পুরুষ। নারীর ক্ষেত্রে এ হার ২৩ ভাগ। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়- করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ষাটোর্ধ্ব বয়সীদের। এ বয়সীদের মৃত্যুর সংখ্যা মোট মৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ষাটোর্ধ্ব বয়সী ১৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। শতকরা হিসেবে এটি মোট মৃত্যুর ৫৪ শতাংশ। ষাটোর্ধ্ব বয়সী মৃতদের মাঝে ১৬২ জনই পুরুষ। আর নারী রোগীর সংখ্যা ৩৩ জন। মৃত্যুর সংখ্যায় এরপরই অবস্থান ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ বয়সী ৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এখন পর্যন্ত। যা মোট মৃত্যুর ২৫ শতাংশ। ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী মৃতদের মাঝে পুরুষ মারা গেছেন ৬৬ জন। আর নারী মারা গেছেন ২৪ জন।
করোনায় মৃতদের মাঝে ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের সংখ্যাও কম নয়। মৃত্যুর সংখ্যায় ৩য় অবস্থানে এই বয়সীরা। এখন পর্যন্ত মোট ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এই বয়সীদের। যা মোট মৃত্যুর ১৩ শতাংশ। ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী মৃতদের মাঝে ৩৪ জন পুরুষ। আর ১২ জন নারী। এর বাইরে ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী মোট ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন পুরুষ। আর নারী ৮ জন। ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মাঝেও মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। এর মধ্যে ৪ জনই পুরুষ। আর ১ জন নারী। ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী মোট ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৩ জনই নারী। এছাড়া ১০ বছরের কম বয়সী মোট ৪ শিশুর মৃত্যু হয়েছে করোনায়। এর মধ্যে ৩ জন ছেলে শিশু। আর ১ জন মেয়ে শিশু।
পুরুষের মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার কারণ তুলে ধরে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া আজাদীকে বলেন, নারীদের তুলনায় পুরুষরা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের জটিলতায় বেশি ভোগেন। এর পিছনে ধূমপান অনেকাংশে দায়ী। কিন্তু নারীদের মাঝে ধূমপানের আসক্তি নেই বললেই চলে।
করোনাকালীন দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে সাধারণের চিকিৎসা সেবায় গড়ে তোলা চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহী ছিলেন ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া।
এই চিকিৎসকের মতে- বেশির ভাগ সময় বাইরে থাকতে হয় বলে পুরুষরা বায়ু দূষণের কবলে পড়েন। এর ফলে দূষিত বায়ু শরীরে প্রবেশের কারণে পুরুষদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেদিকটায় নারীরা অনেকটা নিরাপদে থাকেন। এছাড়া ঘরের কর্তার ভূমিকায় থাকতে হয় বলে ছোটখাট কোনো অসুখ বা শারীরিক জটিলতাকে অনেকটা অবহেলা করে থাকেন পুরুষরা। যা পরবর্তীতে বড় ধরণের জটিলতায় রূপ নেয়। সব মিলিয়ে ডায়াবেটিস-উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিলতায় পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হন। আর আগে থেকেই এসব জটিলতায় ভুক্তভোগী রোগীরা করোনায় আক্রান্ত হলে, সেক্ষেত্রে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকিটা তুলনামূলক বেশি বলে জানান ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বিও বলছেন, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে পুরুষরা বাইরে বেশি ঘোরাফেরা করেন। যার কারণে পুরুষরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। আর আক্রান্তদের মাঝে একটু বেশি বয়সী এবং আগে থেকেই ডায়াবেটিস-উচ্চ রক্তচাপসহ অন্যান্য জটিলতা রয়েছে, এমন রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি। যার কারণে করোনায় মৃতদের মাঝে ষাটোর্ধ্ব বয়সীদের সংখ্যা আমরা বেশি দেখতে পাচ্ছি।
করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হলে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্য বিধি মানার বিকল্প নেই মন্তব্য করে সিভিল সার্জন বলেন, মানুষের মাঝে কিন্তু এ বিষয়ে সচেতনতার খুব অভাব। স্বাস্থ্য বিধি মানা তো দূরের কথা মাস্ক পরতেও যেন চরম অনীহা। প্রশাসনের বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমেও মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময় জরিমানাও করা হচ্ছে। তবুও মাস্ক পরানোটা যেন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এতে করে সংক্রমণ কিন্তু থামছে না। মানুষ বুঝে-না বুঝে নিজের পাশাপাশি অন্যেরও ঝুঁকির কারণ হচ্ছেন। সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন বয়স্করা। কারণ আক্রান্তদের মাঝে বয়স্কদের মৃত্যুর হারই সবচেয়ে বেশি।
বেশি মৃত্যু মহানগরে : সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, করোনায় মৃতদের ৭১ শতাংশই মহানগরের। মহানগরে এ পর্যন্ত ২৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে মৃত্যু হয়েছে ১০৩ জনের। হিসেবে করোনায় মোট মৃত্যুর ২৯ শতাংশ উপজেলাগুলোতে।
উপজেলাগুলোর মধ্যে হাটহাজারী ও সীতাকুণ্ডে মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। হাটহাজারীতে ১৭ জনের, সীতাকুণ্ডে ১৬ জন এবং রাউজানে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে এ পর্যন্ত। বাকি উপজেলাগুলোতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ১০ জনের কম।
অন্যদিকে, মহানগরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হালিশহর ও কোতোয়ালী এলাকায়। হালিশহরে ২৭ জন এবং কোতোয়ালী এলাকায় ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। এছাড়া পাঁচলাইশ এলাকায় ১৫ জন, খুলশী ও চকবাজার এলাকায় ১৪ জন করে, চান্দগাঁও এলাকায় ১৩ জন, পাহাড়তলী এলাকায় ১১ জন এবং আকবরশাহ ও আগ্রাবাদ এলাকায় ১০ জন করে করোনায় আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। মহানগরের বাকি এলাকাগুলোতে মৃতের সংখ্যা ১০ জনের কম।