বাংলাদেশের অটোমোবাইল শিল্প গত এক দশকে যে গতিতে এগিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। দীর্ঘদিন ধরে দেশের গাড়ি বাজার মূলত রিকন্ডিশনড গাড়ির ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের ক্রেতারা এখন বেশি আগ্রহী হচ্ছেন নতুন গাড়ি কিনতে—বিশেষ করে যখন সেই গাড়ি আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বাংলাদেশের কারখানায় তৈরি হয়। এই নতুন সম্ভাবনার শীর্ষে রয়েছে বিশ্বখ্যাত জাপানি ব্র্যান্ড মিতসুবিশি এবং তাদের বহুল জনপ্রিয় মডেল এক্সপ্যান্ডার, যা এখন গাজীপুরের বড় ভবানীপুরে অবস্থিত র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর অত্যাধুনিক কারখানায় অ্যাসেম্বল করা হচ্ছে। এটি শুধু একটি গাড়ি নয়, বরং “প্রাউডলি মেইড ইন বাংলাদেশ” ব্যানারে দেশের গর্বের প্রতীক।
মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডার সার সিটের একটি ফ্যামিলি গাড়ি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে এই গাড়ি ইতোমধ্যেই বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে এক্সপ্যান্ডার ফ্যামিলি কার হিসেবে একটি বিশ্বস্ত নাম। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও এটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দেশের ভৌগোলিক বাস্তবতায় যেমন শহরের ব্যস্ত সড়ক, গ্রামীণ কাঁচা-পাকা রাস্তা কিংবা চট্টগ্রামের পাহাড়ি বাঁকানো পথ—সব জায়গায় সমান দক্ষতায় চলতে সক্ষম এই গাড়ি। এর ২২০ মিলিমিটার গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স এবং ৫.২ মিটার টার্নিং রেডিয়াস চালকদের দেয় বাড়তি আত্মবিশ্বাস। ফলে ব্যস্ত নগর জীবনের পাশাপাশি দূরপাল্লার ভ্রমণেও এটি সমান কার্যকর।
ডিজাইন ও আরামের দিক থেকেও মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডার আলাদা পরিচিতি গড়েছে। সাত আসনের প্রশস্ত কেবিনে রয়েছে সাতজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য ফ্লেক্সিবল সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট, যেখানে ফ্যামিলি ট্রাভেল, অফিস ট্যুর কিংবা গ্রুপ আউটিং—সব কিছুতেই যাত্রীরা পাবেন সর্বোচ্চ আরাম। গাড়ির ভেতরে আধুনিক ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম, একাধিক চার্জিং পোর্ট, বুট স্পেস এবং উন্নত ক্লাইমেট কন্ট্রোল দীর্ঘ ভ্রমণকে করে তুলবে আরও আনন্দময়। এছাড়াও এর কেবিন-নয়েজ একেবারে নেই বলেলেই চলে।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও এক্সপ্যান্ডার আন্তর্জাতিক মানের। ডুয়াল এয়ারব্যাগ, এবিএস, ইবিডি, হিল স্টার্ট অ্যাসিস্ট, ট্র্যাকশন কন্ট্রোল ও শক্তিশালী বডি স্ট্রাকচার যাত্রীদের দেয় বাড়তি নিশ্চয়তা। বিশেষ করে প্রিমিয়াম ভ্যারিয়েন্টে থাকা ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা শহরের জ্যাম কিংবা সরু রাস্তায় পার্কিং সহজ করে তোলে।
চট্টগ্রামের বাজারে এখন এক্সপ্যান্ডার পাওয়া যাচ্ছে চারটি ভ্যারিয়েন্টে—
• এক্সপ্যান্ডার ক্লাসিক (৩৪ লক্ষ টাকা) – বেস মডেল হলেও নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও বাজেট-ফ্রেন্ডলি।
• এক্সপ্যান্ডার ইকো (৩৫ লক্ষ টাকা) – অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এটি অকটেন ও এলপিজি উভয় জ্বালানিতেই চলতে সক্ষম।
• এক্সপ্যান্ডার প্রিমিয়াম (৩৫.৫০ লক্ষ টাকা) – লেদার-র্যাপড ইন্টেরিওর, রুফ রেইল, ইনবিল্ট উইন্ডো শেড, ৩৬০ ক্যামেরা সহ আরও আধুনিক ফিচার।
• এক্সপ্যান্ডার স্পোর্ট (৩৬.৫০ লক্ষ টাকা) – বডি কিটসহ স্পোর্টি লুক পছন্দ করা গ্রাহকদের জন্য আদর্শ।
স্থানীয়ভাবে এক্সপ্যান্ডার অ্যাসেম্বল হওয়ার ফলে এর দাম তুলনামূলকভাবে ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে এসেছে। একই সঙ্গে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, বেড়েছে দক্ষ জনশক্তির ব্যবহার। বাংলাদেশের অটোমোবাইল শিল্পে যে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে, এক্সপ্যান্ডার তার অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। “Made in Bangladesh” ট্যাগটি কেবল একটি প্রতিশ্রুতি নয়—এটি আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং বৈশ্বিক বাজারে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার এক গর্বিত প্রতীক।
শিল্প বিশ্লেষকদের মতে, মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডার-এর উপস্থিতি শুধু বাংলাদেশের গাড়ি শিল্পকেই সমৃদ্ধ করছে না, বরং ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাজারে “বাংলাদেশে তৈরি গাড়ি” রপ্তানির পথও সুগম করতে পারে। স্থানীয় বাজারে এই গাড়ির ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ইতোমধ্যেই প্রমাণ করেছে—বাংলাদেশি ক্রেতারা এখন আন্তর্জাতিক মানের নতুন গাড়িকে সাদরে গ্রহণ করছেন।
বর্তমানে গাড়িটি পাওয়া যাচ্ছে তিনটি আকর্ষণীয় রঙে—জেট ব্ল্যাক মিকা, গ্রাফাইট গ্রে মেটালিক এবং হোয়াইট পার্ল। শিগগিরই বাজারে আরও রঙ যুক্ত করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে মিতসুবিশি।
গাড়ি কেনার পর গ্রাহকের নিশ্চিন্ততার জন্য রয়েছে ৫ বছরের ওয়ারেন্টি এবং ২ বছরে ৬টি বিনামূল্যে সার্ভিসিং। এই সুবিধাগুলো এক্সপ্যান্ডার-কে শুধু একটি গাড়ি নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি পার্টনারে পরিণত করে। চট্টগ্রামের ক্রেতাদের জন্য সম্প্রতি জিইসি ক্রসিং এলাকায় চালু হয়েছে নতুন সেলস ও সার্ভিস সেন্টার। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গ্রাহকরা সেখানে গাড়ি দেখা, বুকিং ও বিক্রয়োত্তর সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।