বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামে প্রথম শহীদ ওয়াসিম আকরামের নামে চালু করা নগরীর প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে টোল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যান চলাচল শুরু হয়েছে। গতকাল (শুক্রবার)সকালে শহীদ ওয়াসিম আকরাম উড়াল সড়কের টোল আদায়ের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এক্সপ্রেসেওয়েতে প্রথম টোল পরিশোধ করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। গতকাল প্রথম দিনে সকাল দশটা থেকে রাত সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত ৩ লাখ ৬২ হাজার ৬০০ টাকা টোল পরিশোধ করে ৫ হাজার ৬৯৪ টি গাড়ি চলাচল করেছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর ওয়াসা মোড় থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর আগে নগরীতে সিডিএ তিনটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করলেও ওগুলো থেকে কোনো টোল আদায় করা হয় না। এই প্রথম চট্টগ্রামে কোনো ফ্লাইওভার থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে টোল আদায় শুরু হওয়ার পর গতকাল (শুক্রবার) পতেঙ্গা প্রান্তের ৪ টি বুথে টোল আদায় করা হয়। শুরুতে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএর সরাসরি তত্ত্বাবধানে টোল আদায় করা হচ্ছে। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করবে সিডিএ।
২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত নির্মিত এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন হলেও তখন গাড়ি চলাচল শুরু হয়নি। গত বছরের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে পরীক্ষামূলকভাবে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচল শুরু হয়।
ছাত্র–জনতার আন্দোলনে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্ধারণ করা টোলের হার পরিবর্তন করে গত বছরের ৩ নভেম্বর নতুন প্রস্তাব পাঠায় সিডিএ। ২৭ নভেম্বর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় টোলের হার চূড়ান্ত করে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মোটর সাইকেল এবং কন্টেনার ট্রেইলার নিষিদ্ধ রেখে ১০ ধরনের গাড়ি চলাচলের অনুমোদন এবং টোলের হার নির্ধারণ করা হয়েছে।
চূড়ান্ত হওয়া টোলের হার অনুযায়ী, সিএনজি টেক্সিকে টোল দিতে হবে ৩০ টাকা। প্রাইভেটকার ৮০ টাকা, জিপ ও মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, পিকআপ ১৫০ টাকা, মিনিবাস ও ট্রাক ( চার চাকা) ২০০ টাকা, বাস ২৮০ টাকা, ট্রাক (৬ চাকা) ৩০০ টাকা এবং কাভার্ড ভ্যানের জন্য ৪৫০ টাকা হারে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে কোনো র্যাম্প চালু না হওয়ায় এখন শুধুমাত্র একটি টোল হারই ধার্য করা হয়েছে।
২০১৭ সালে অনুমোদিত হওয়া এ প্রকল্পে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ওঠানামার জন্য ১৫টি র্যাম্প নির্মাণ করার কথা ছিল। কিন্তু ইতোমধ্যে ছয়টি র্যাম্প প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে করে নগরীর যান চলাচলে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে নেয়া এই প্রকল্পের কানেক্টিভিটি এবং ব্যবহার সীমিত হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ৯টি র্যাম্প নির্মাণের কথা রয়েছে। এর মধ্যে একটির কাজ শেষ হয়েছে। অন্য আটটির কাজ চলমান। এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।
ব্যবহারকারীরা এখন নগরের পতেঙ্গা প্রান্তে ওঠানামা করতে পারবেন। আর নগরের লালখান বাজারে নামার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া লালখান বাজার থেকে ওঠার সুযোগ নেই। বর্তমানে ব্যবহারকারীদেরকে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের মুরাদপুর ও ২ নম্বর গেটের বেবি সুপারমার্কেট প্রান্ত ব্যবহার করে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে পতেঙ্গায় গিয়ে নামতে হচ্ছে। তবে জিইসি মোড়ের উঠার জন্য নির্মাণাধীন র্যাম্পের কাজ শেষ হলে জিইসি মোড় থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠার সুযোগ তৈরি হবে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় কার্যক্রম উদ্বোধন করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘চট্টগ্রামে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রথম শাহাদাত বরণ করেছিলেন যিনি সেই ওয়াসিম আকরামের নামে এই উড়াল সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। আমরা সারাদেশে যারা এই জুলাই অভ্যুত্থানে শাহাদাত বরণ করেছেন তাদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় স্মৃতি চিহ্ন তৈরি করছি।’
তিনি বলেন, যেন সারাদেশের মানুষ এবং আগামী প্রজন্ম তাদের অবদানের কথা স্মরণ করতে পারে। এই লক্ষ্যেই আজ আসা। চট্টগ্রামের মানুষ যে সংগ্রামে শামিল হয়েছেন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের যেন পরবর্তী প্রজন্ম সবসময় স্মরণ করতে পারে সেজন্য আমরা আমাদের উদ্যোগ চালিয়ে যাব।
এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুল করিম, বোর্ড সদস্য জাহিদুল করিম কচি এবং সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান।
একদিন আগে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নাম পাল্টে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নাম জুলাই–অগাস্টের ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের ‘প্রথম শহীদ’ চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ওয়াসিম আকরামের নামে নামকরণের সিদ্ধান্ত হয়।