চট্টগ্রামে এক হাজার আশ্রয়কেন্দ্র

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বন্দর চসিকেরও ব্যাপক প্রস্তুতি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৬ মে, ২০২১ at ৯:৩২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর আঘাত হানার আশঙ্কা কম। তারপরও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রশাসন বলছে, ভিড় এড়াতে আশ্রকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র ৫১১টি থেকে বেড়ে ১ হাজারে দাঁড়িয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ও আশ্রয়কেন্দ্রে আনা ও সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রস্তুত করা হয়েছে ৫৭৯টি টিম। প্রত্যেক টিমে রয়েছেন ১১ জন। উপকূলীয় এলাকাগুলোকে (বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড, কর্ণফুলী ও সন্দ্বীপ) গো খাদ্যের জন্য ১ লাখ টাকা করে সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রীরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণাসহ মাইকিং করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সূত্র আজাদীকে এসব বিষয় নিশ্চিত করেছে।
জেলা প্রশাসন বলছে, গত বছরের ঘূর্ণিঝড় আমপানের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ইয়াস মোকাবেলায় নেওয়া হয়েছে এসব প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে জেলা আইনশৃক্সখলা সভা ও জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভা হয়েছে। উপকূলবর্তী সকল উপজেলার ইউএনও, এসিল্যান্ড, ওসি, পিআইও ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কর্মস্থল না ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ ও অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো ঠিক করা হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে ৫ জন এডিসি উপকূলবর্তী উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে আসছেন। তারা উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন।
জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান আজাদীকে বলেন, দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ‘ইয়াস’ এখানে হিট করবে না। এরপরও আমরা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। করোনা মহামারির কারণে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়েছি। সব মিলে এক হাজার আশ্রকেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ও উদ্ধার তৎপরতার জন্য ৫৭৯টি টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাও প্রস্তুত রয়েছে।
বন্দর
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সাথে বৈঠক করে নিজেদের জাহাজসমূহকে সর্বোচ্চ নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করার অনুরোধ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে সতর্ক সংকেত চার ঘোষণার সাথে সাথে সকল জাহাজ নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বন্দরের ইকুইপমেন্ট ও জাহাজসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রস্তুতি রাখা হয়।
বন্দর কর্তৃপক্ষ ইয়াস মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল বলে জানান বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক। তবে আবহাওয়ার সতর্ক সংকেত তিন নম্বরের বেশি ঘোষণা না হওয়ায় বন্দরের সার্বিক কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে।
ইয়াসের কারণে কর্ণফুলী নদীতে আশ্রয় নিয়েছে কয়েকশ লাইটারেজ জাহাজ ও ফিশিং ট্রলার। নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ প্রত্যাহার করা হলে এসব জাহাজ আবার বহির্নোঙরে চলে যাবে।
ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল সূত্র জানায়, সবগুলো লাইটারেজ জাহাজ সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় আছে। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
চসিকের প্রস্তুতি
ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলা ও ক্ষতি এড়াতে নানা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এর অংশ হিসেবে নগরের উপকূলীয় ১৩টি ওয়ার্ডে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৬০টি আশ্রয়কেন্দ্র। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। গঠন করা হয়েছে মেডিকেল টিম। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতির আলোকে শুকনো খাবার সংগ্রহ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) আওতাধীন স্বেচ্ছাসেবকসহ চার হাজার ভলান্টিয়ার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে গতকাল বিকেলে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভা হয়েছে। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত ওই সভায় বিভিন্ন সেবা সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। মেয়র সভায় চসিকের প্রস্তুতি সম্পর্কে অবহিত করেন এবং বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। এর আগে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণ সভায়ও ভার্চুয়ালি যোগ দেন মেয়র।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরের উপকূলীয় ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে ৫, ৭, ৯, ১০, ১১, ২৬, ৩৪, ৩৫, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪১। ওয়ার্ডগুলোতে বিদ্যমান সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত স্কুল, কলেজ, আরবান হেলথ সেন্টার এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যার সংখ্যা ৬০। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলোর কাউন্সিলরদের সঙ্গেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন মেয়র। এছাড়া নগরবাসীকে যেকোনো জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য দামপাড়ায় কন্ট্রোল রুম (নম্বর : ০৩১-৬৩০৭৩৯ ও ০৩১-৬৩৩৬৪৯) খোলা হয়েছে।
সিটি মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম আজাদীকে বলেন, ১৩টি উপকূলীয় ওয়ার্ডে ষাটটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। মাইকিং টিম প্রস্তুত আছে। সাধারণত সিগন্যাল ৪ না হলে মাইকিং করা হয় না। সতর্ক সংকেত বাড়লে মাইকিং করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে লোকজনকে চলে আসার আহ্বান জানানো হবে। সিপিপিসহ চার হাজার স্বেচ্ছাসেবক আছেন, তারাও সহযোগিতা করবেন। সম্ভাব্য দুর্যোগপরবর্তী সময়ের জন্য শুকনো খাবার, পর্যাপ্ত সুপেয় পানি এবং চিকিৎসা সেবাদানের জন্য মেডিকেল টিম ও পর্যাপ্ত ওষুধপত্র মজুদ করারও চিন্তা আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজার উপকূলে জলোচ্ছ্বাস, সেন্টমার্টিনে ভেঙেছে জেটি
পরবর্তী নিবন্ধউড়িষ্যায় আজ আঘাত হানতে পারে ইয়াস