চট্টগ্রামে এক সময় দেশ সেরা ক্যান্সার হাসপাতাল হবে

আজাদীর অর্থায়নে ‘মালেকা খাতুন অনকোলজি’ ওয়ার্ড উদ্বোধন অনুষ্ঠানে খসরু হাসপাতালের জন্য ৩০-৩৫ কোটি টাকা তুলে দিয়েছি, আরেকটি মেশিনের জন্য প্রয়োজন ৩০ কোটি, সেটার জন্যও চেষ্টা করব : এম এ মালেক

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৪ মে, ২০২৫ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

দেশের মধ্যে চট্টগ্রামে এক সময় সবচেয়ে সেরা ক্যান্সার হাসপাতাল হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, উদ্যোগ নিলে সব সম্ভব। আজকে মালেকা খাতুন অনকোলজি ওয়ার্ড যেটা উদ্বোধন হলো, এটি যে কত বড় উদ্যোগ, সেটি আমি বলে বোঝাতে পারব না। এই ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে চট্টগ্রামের মানুষ সেবা পাবেন। চট্টগ্রামের চিকিৎসার প্রসঙ্গে উঠলে সবাই বলে ওখানে কোনো চিকিৎসা নেই। ঢাকায় নিয়ে আসো, থাইল্যান্ডে যাও, না হয় ইন্ডিয়া যাও। এই যে কথাটা আমাদেরকে শুনতে হয়, এর চেয়ে দুঃখের আর বেশি কিছু নেই। গতকাল শনিবার দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে দৈনিক আজাদীর অর্থায়নে গড়ে তোলা ‘মালেকা খাতুন অনকোলজি’ ওয়ার্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আমীর খসরু বলেন, আমাদের চট্টগ্রামের মানুষ খুব দয়াবান। আপনি হয়তো কাউকে রিলিফের পণ্য দিলেন, রমজানের সময় শাড়ি দিলেন, এগুলো ব্যক্তিগতভাবে হয়তো ঠিক আছে। মানুষ আপনার সুনাম করতে পারে; কিন্তু এগুলো খুবই ছোটখাটো ব্যাপার। সমাজের যদি সেবা করতে চাই, তাহলে আমাদের ফোকাসটা হতে হবে অনেক বড়। যেটার মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ উপকৃত হবে। বিশেষ করে সমাজের নিম্নআয়ের মানুষের উপকারের বিষয়টা ভাবতে হবে। সেই ভাবনার জায়গা থেকেই মা ও শিশু ক্যান্সার হাসপাতালের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। দৈনিক আজাদী পরিবারের মালেক সাহেব, ভাবী এবং উনার সন্তানেরা মিলে যে এত বড় একটা উদ্যোগ নিয়েছেন, সেই উদ্যোগের ফল আমরা আজকে দেখতে পাচ্ছি। তিনি বলেন, আমার বাবারও ক্যান্সার হয়েছিল। ক্যান্সার শুধু একটা রোগ নয়, এটা একটা পরিবারকে মানসিকভাবে ধ্বংস করে দেয়, আর্থিকভাবে ধ্বংস করে দেয়। পরিবারে শান্তিসুখ বলে কিছু থাকে না। আমি এটার ভুক্তভোগী। আমাদের টাকার অভাব ছিল না। কিন্তু পরিবারের কারো ক্যান্সার হয়েছে, এটাতে পরিবারের সদস্যরা কিভাবে মানসিকভাবে আক্রান্ত হয়, এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। এই জায়গাতে যদি আপনি স্বস্তি দিতে চান, তার একমাত্র পথ হচ্ছে রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে, পরিবারকে আশ্বস্ত হবে, চিন্তার কিছু নাই। এখন ক্যান্সারের কিছুটা চিকিৎসা আছে। অন্তত পরিবারকে আশ্বস্ত করতে পারি, তারা ভালো চিকিৎসা পাবে। আগে একেবারেই চিকিৎসা ছিল না। এখন যদি সময় নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া যায়, দীর্ঘ সময় নিয়ে রোগীরা বেঁচে থাকবে। সেজন্য আজাদী পরিবার ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরিতে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, আমি মনে করি এটি অনেক বড় একটি উদ্যোগ, অনেক বড় একটি কর্মযজ্ঞ। হয়তো চট্টগ্রামে, এক সময় পুরো বাংলাদেশে মধ্যে সবচেয়ে সেরা ক্যান্সার হাসপাতাল হবে। উদ্যোগ নিলে সব সম্ভব। অনেক সময় অনেক উদ্যোগ জায়গার অভাবে করা যায় না।

একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, আল্লাহ যে মেহেরবানি করে আমাদের এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সবচেয়ে বড় রূপ হচ্ছে অন্যকে সেবা দেওয়া। আমি অন্যকে সেবা দেওয়ার সেই চেষ্টা করছি। আমি কেন ক্যান্সার হাসপাতালের সাথে জড়িত হয়ে গেলাম, সেটি আপনাদের একটু শেয়ার করছি। একদিন আমার অফিসে এক লোক এসে বললেন, আমি উনাকে চিনি কিনা। আমি বললাম চিনি না। ওই লোক তখন বললেন, ডাক্তার বলছেন আমার ক্যান্সার হয়েছে, আমি পরিবারের কাউকে বলব না। শুধু আপনার সাথে কথা বলে আমার মনটা হালকা করতে এসেছি। আমি বললাম, এটা কোনো কথা না। আপনার কোনো সাহায্য সহযোগিতা লাগলে বলুন। ওই লোক ‘সাহায্য লাগবে না’ বলে উঠে চলে গেলেন। এর কিছুদিন পরে বর্তমান সভাপতি মোরশেদ এবং সাধারণ সম্পাদক আজাদ আমাকে ফোনে বললেন, আমার সাথে একটু কথা আছে। ওদেরকে ফোনে বলতে বললে ওরা বলেন, আমার সাথে দেখা করতে চান। পরে অফিসে এসে বললেন, আমরা চট্টগ্রামে একটা ক্যান্সার হাসপাতাল করতে চাই। আপনি যদি আমাদের সাথে থাকেন, আমরা চট্টগ্রামে ক্যান্সারের জন্য কিছু একটা চেষ্টা করে দেখতাম। তখন আমার হঠাৎ মনে হলো, ওই লোকটা কেন এলেন, আবার কেনইবা চলে গেলেন। নিশ্চয়ই উপরওয়ালা একটা ম্যাসেজ দিয়েছেন। আসলে ম্যাসেজ আমাদের দেন, সেটি আমরা বুঝতে পারি না। তখন আমি বললাম, আপনারা যখন চাইছেন আমি রাজি আছি। আপনারা জানেন, আমার বাবা আমাকে একটা কাগজ দিয়ে গেছেন, দৈনিক আজাদী। আমি ভাবলাম সেটা তো সুন্দরভাবে ব্যবহার করা যায়। আপনাদের দোয়ায় আমি ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা তুলে দিতে সক্ষম হয়েছি। এখন আমাদের আরেকটি মেশিনের প্রয়োজন আছে; সেখানে প্রায় ৩০ কোটি প্রয়োজন। ইনশাআল্লাহ আমি চেষ্টা করব, সেই টাকা যেন তুলে দিতে পারি।

দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. . রমিজ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট তৈরিতে আজাদী পরিবার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আমার বড় ভাই পূর্বকোণ সম্পাদক স্থপতি তসলিম উদ্দিন চৌধুরী দীর্ঘ ২৩ বছর ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে ২০১৭ সালে মারা যান। উনার প্রথম ক্যান্সার ধরা পড়ে ১৯৯৪ সালে। উনার দুইবার ক্যান্সার ধরা পড়ে। আমি আশা করি মা ও শিশু হাসপাতালের ক্যান্সার ইসস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার চট্টগ্রামবাসীর ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল জেলা ৩১৫বি৪ এর সাবেক গভর্নর লায়ন কামরুন মালেক বলেন, আজকে আমাদের জন্য অনেক খুশির একটা দিন। আমি মালেক সাহেব সম্পর্কে একটু বলব। উনার একটা অভ্যাস, উনি যে কাজ ধরেন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই কাজের পিছনে লেগে থাকেন। আমি উনাকে অনেক অনুষ্ঠানে বলতে শুনেছি, আপনারা ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য এক টাকা দেন, সেটিও আমরা নিব।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মা ও শিশু ক্যান্সার হাসপাতালে আজকে রোগীরা সেবা পাচ্ছেএটি দেখে আমার অত্যন্ত ভালো লাগছে। চট্টগ্রামের রোগীরা এখন চট্টগ্রামে বসেই ক্যান্সারের উন্নত চিকিৎসা পাবে।

দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক বলেন, হাসপাতাল শুধু একটি ভবন নয়, এটি আশার প্রতীক। আমাদের লক্ষ্য হলো সাশ্রয়ী, মানবিক ও দক্ষ চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে এই কঠিন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি মা ও শিশু হাসপাতালের সকল বোর্ড মেম্বারের প্রতি, দাতা সদস্যদের প্রতি এবং ডাক্তার, নার্স ও প্রকৌশলীদের প্রতি। তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই ক্যান্সার হাসপাতালকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। আপনাদের অবদান অবিস্মরণীয়।

অনুষ্ঠানে ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের চিকিৎসা সংক্রান্ত একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. শেফাতুজ্জাহান। হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক এবং ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজাদ। বক্তব্য দেন কনফিডেন্স সিমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান লায়ন রুপম কিশোর বড়ুয়া। উপস্থিত ছিলেন কার্যনির্বাহী কমিটির সহসভাপতি ডা. কামরুন নাহার দস্তগীর, যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সাগির, দাতা সদস্য মোহাম্মদ হারুন ইউসুফ, ইঞ্জিনিয়ার লায়ন মো. জাবেদ আবছার চৌধুরী, সদস্য তারিকুল ইসলাম তানভীর, অধ্যাপক ডা. মো. আব্বাস উদ্দিন, মো. সাইফুল আলম, ডা. মো. বেলায়েত হোসেন ঢালী, ডা. মোহাম্মদ সারোয়ার আলম, মোহাম্মদ আবুল হাশেম, মেডিকেল কলেজের উপদেষ্টা প্রফেসর এ এস এম মোস্তাক আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর অসীম কুমার বড়ুয়া, পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. নূরুল হক, পরিচালক (মেডিকেল অ্যাফেয়ার্স) ডা. এ কে এম আশরাফুল করিম, ডা. ফাহিম রেজা প্রমুখ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কার্যনির্বাহী কমিটির সহসভাপতি আবদুল মান্নান রানা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৪১৯ যাত্রী নিয়ে মদিনায় গেল চট্টগ্রামের প্রথম হজ ফ্লাইট
পরবর্তী নিবন্ধসভাপতির যোগ্যতা কী হবে, জানাল মন্ত্রণালয়