চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার বাড়ছে। সাথে বাড়ছে মৃত্যুর হারও। গত ৩১ মার্চ থেকে গতকাল ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট ১৪ জন মারা গেছেন।
বিডিনিউজ জানায়, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় বিশেষায়িত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১ নারীসহ ৫ জন রোগী মারা গেছেন। সোমবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এ ৫ জন রোগী মারা যান বলে জানান হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট আবদুর রব মাসুম। তিনি জানান, মারা যাওয়াদের বয়স ৫০ থেকে ৮৫ বছরের মধ্যে। করোনাভাইরাস ছাড়া তাদের অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও ছিল। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছে ৯৫ জন। জেনারেল হাসপাতালে মারা যাওয়া ৫ জনের মধ্যে একজনের তথ্য গত ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে আছে। বাকিদের তথ্য পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার হিসাবে যুক্ত হবে।
চট্টগ্রামে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৩ এপ্রিল। এরপর থেকে সংক্রমণের হার বাড়ছে, আবার কখনো কমছে। গত শীতে সংক্রমণের হার কম ছিল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে শুরু হওয়ার পর সংক্রমণ বাড়ছে। গত ৩ এপ্রিল একদিনে শনাক্তের সংখ্যায় রেকর্ড ছাড়াল চট্টগ্রামে। এদিন ৫১৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। একদিনে শনাক্তের এ সংখ্যা চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। গতকাল শনাক্ত রোগীর সংখ্যা একদিনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৯৪ জন শনাক্ত হয়। এর আগে ২ এপ্রিল ৪৬৭ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এটি চট্টগ্রামে তৃতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ। চট্টগ্রামে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৪২ হাজার ৩০১ জন। সরকারি হিসেবে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩৯৬ জন। এর মধ্যে নগরীতে ২৯২ জন এবং উপজেলায় ১০৪ জন। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ জন। গত ৫ এপ্রিল চট্টগ্রামে মারা গেছেন ২ জন। এই সপ্তাহে ৪ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৪ জন মারা গেছেন। ৩ ও ২ এপ্রিল মৃত্যুশূন্য ছিল। ১ এপ্রিল ২ জন এবং ৩১ মার্চ ১ জন মারা যান।
এদিকে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধির জন্য মানুষের মাঝে সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষণজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রত্যেককে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।
নতুন শনাক্ত ৪৯৪ : চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৫৪০টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে আরও ৪৯৪ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষাকৃত নমুনায় ১৯.৪৪ শতাংশের পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে এদিন। শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তদের মাঝে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এই ১ জনসহ আক্রান্তদের মাঝে এ পর্যন্ত ৩৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৫৪০টিসহ এ পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ৬১ হাজার ৭২০টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে ৪২ হাজার ৩০১ জনের। চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তের গড় হার ১২ শতাংশ। নতুন ৬৬ জনসহ এ পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৪১০ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্তদের ৮১.৩৪ শতাংশ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ৪৯৪ জনের মধ্যে ৩৩৯ জন নগরীর ও ৫৫ জন উপজেলার বাসিন্দা। মোট আক্রান্তের মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৩৩ হাজার ৮২১ জন এবং গ্রামের ৮ হাজার ৪৮০ জন। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন গতকাল আজাদীকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলায় আক্রান্তদের মাঝে হাটহাজারীতে সর্বোচ্চ ১৫ জন, রাউজানে ১২ জন, ফটিকছড়িতে ১০ জন, পটিয়ায় ৫ জন, সীতাকুণ্ড ও বোয়ালখালীতে ৩ জন করে, রাঙ্গুনিয়া ও মীরসরাইয়ে ২ জন করে এবং লোহাগাড়া, বাঁশখালী ও আনোয়ারায় ১ জন করে রয়েছেন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ১ হাজার ২৫৯ জন।
পতেঙ্গা-ইপিজেড ফিল্ড হাসপাতালের উদ্যোক্তা ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হোসেন আহম্মদ আজাদীকে বলেন, করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ মতো কোভিড পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করলে মৃত্যুর হার অনেক কমে যাবে। অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে আমরা দেখি, করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়ার ৭/৮ দিন পর ডাক্তারের কাছে আসেন। ডাক্তার যদি বলেন আপনার করোনা হয়েছে। তখন রোগী বলেন, না আমার করোনা হয়নি। এভাবে আরও কয়েকদিন পার করার পর যখন রোগীর জ্বর আসে তখন পরীক্ষা করার পরপর করোনা শনাক্ত হয়। এভাবে আরও কয়েকদিন পর হয়ে গেলে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তখন হাসপাতালে সিটের জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে। উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা করা উচিত নয়।
মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির ব্যাপারে তিনি বলেন, এখন মানুষের স্বভাব এমন হয়ে গেছে, আল্লাহ যেটা করে সেটাই। করোনা আর কী করবে? এই কারণে মাস্ক পরার ব্যাপারে অনীহা, লকডাউন মানছে না। সরকার বললে সব করব এই চিন্তা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মানতে হবে।
করোনা চিকিৎসক ডা. অঞ্জন দাশ বলেন, আমরা যদি নিজ নিজ ঘর থেকে সচেতনা সৃষ্টি করি, মাস্ক পরার চেষ্টা করি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করি, তাহলে শুধু চট্টগ্রামে নয় সারা দেশে করোনা আক্রান্তের হার এক সপ্তাহের মধ্যে কমে আসবে। তিনি বলেন, সরকার এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন দিয়েছে। আমরা এক সপ্তাহ ঘরে থাকতে পারছি না। তাহলে কেমন করে হবে? ঘর থেকে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। তাহলে সংক্রমণের হার কমে আসবে।