করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ মোকাবিলায় অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ৫০ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন দেশে এসেছে গতকাল। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সাথে চুক্তি অনুযায়ী ৩ কোটির মধ্যে প্রথম দফায় ৫০ লাখ ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে। গতকাল এসব ভ্যাকসিন দেশব্যাপী সরবরাহের পরিকল্পনা বা বিতরণ সংক্রান্ত তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সবমিলিয়ে ৫ লাখ ৪ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন আসছে চট্টগ্রামে। মহানগরসহ পুরো চট্টগ্রাম জেলায় অগ্রাধিকার তালিকাভুক্তদের এই ভ্যাকসিন দেয়া হবে। আর কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলা পাচ্ছে আরো লক্ষাধিক ডোজ ভ্যাকসিন।
ভ্যাকসিন বরাদ্দ সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার তথ্য আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। রোববার রাতে এ সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন এই দুই কর্মকর্তা।
চিঠির সাথে জেলাভিত্তিক ভ্যাকসিন সরবরাহের তালিকাও দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পর্যায়ের কমিটির কাছে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কার্টন হিসেবে বরাদ্দ দেয়া তালিকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, প্রতি কার্টনে ১২০০ ভায়াল ভ্যাকসিন রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনের প্রতি ভায়ালে ১০টি ডোজ রয়েছে। সে হিসেবে প্রতি কার্টনে ১২ হাজার ডোজ (১২০০ ভায়াল) ভ্যাকসিন থাকছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকায় দেখা যায়, চট্টগ্রামের জন্য ৩৮ কার্টন ভ্যাকসিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে অতিরিক্ত আরো ৪ কার্টনসহ মোট বরাদ্দ উল্লেখ করা হয়েছে ৪২ কার্টন। সে হিসেবে মোট ৫ লাখ ৪ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পাচ্ছে চট্টগ্রাম।
এদিকে, বৃহত্তর চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) প্রতিটিতে ১ কার্টন করে ভ্যাকসিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। হিসেবে ১ কার্টনে মোট ১২ হাজার ডোজ করে ভ্যাকসিন পাচ্ছে এই তিন জেলা। তবে ১ কার্টন অতিরিক্তসহ কঙবাজার জেলায় মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৮ কার্টন ভ্যাকসিন। যাতে ৮৪ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন থাকছে। সবমিলিয়ে কঙবাজার ও তিন পার্বত্য জেলায় মোট ১ লাখ ৩২ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বরাদ্দ সংক্রান্ত চিঠি পেলেও ভ্যাকসিন কখন পাঠানো হবে, সে বিষয়ে এখনো কোন তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী ও চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। যদিও বর্তমানে ঢাকার টঙ্গীতে বেঙ্মিকোর ওয়্যারহাউজে থাকা এসব ভ্যাকসিন যত দ্রুত সম্ভব জেলায় জেলায় পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
ঢাকা বিমানবন্দরে ভ্যাকসিন গ্রহণের পর গতকাল বেঙ্মিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপনও বলেছেন, ওয়্যারহাউজ থেকে প্রতিটি ব্যাচের ভ্যাকসিনের নমুনা পাঠানো হবে সরকারের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে। পরীক্ষার পর সবকিছু ঠিক থাকলে ছাড়পত্র দেওয়া হবে। ছাড়পত্র পাওয়ার পর টিকাগুলো ৬৪টি জেলায় পৌঁছে দেয়া হবে। সবমিলিয়ে ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে এসব ভ্যাকসিন জেলায় জেলায় পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন নাজমুল হাসান পাপন।
বেঙ্মিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের তথ্য অনুযায়ী অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই এসব ভ্যাকসিন জেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সংরক্ষণ করা হবে সিভিল সার্জন অফিসের ইপিআই স্টোরে : ভ্যাকসিন আসলে তা চট্টগ্রামের সিভিল সাজর্ন কার্যালয়ের ইপিআই স্টোরে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য স্টোরেজটি এরই মধ্যে প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এই স্টোরেজে সবমিলিয়ে ১ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন সংরক্ষণের সক্ষমতা থাকলেও কার্টন বা ভায়াল হিসেবে রাখলে সমস্যা হবে না বলে মনে করেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, আমরা পুরো কার্টন ভরে অথবা ভায়াল হিসেবে ভ্যাকসিনগুলো রাখতে পারবো। সেক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত সব ভ্যাকসিনই রাখা যাবে। সমস্যা হবে না।
করতে হবে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন : ভ্যাকসিন পেতে অগ্রাধিকার তালিকাভুক্তদের অনলাইনে বাধ্যতামূলকভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এজন্য ‘সুরক্ষা অ্যাপ’ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। তালিকাভুক্তরা সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে (িি.িংঁৎড়শশযধ.মড়া.নফ) গিয়ে অথবা মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধন করতে পারবেন। অ্যাপটি ফ্রি ডাউনলোড করা যাবে। জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও মোবাইল নম্বর দিয়ে এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। নিবন্ধনের পর সেখান থেকেই জানা যাবে, কবে কখন টিকা নিতে হবে।