চট্টগ্রামে আমনের বাম্পার ফলন, ছাড়াবে লক্ষ্যমাত্রা

কৃষকের ঘরে উৎসবের আমেজ

| মঙ্গলবার , ১৮ নভেম্বর, ২০২৫ at ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম জেলার ১৫টি উপজেলাজুড়ে চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এখন চট্টগ্রামের দিগন্তজোড়া মাঠে দোল খাচ্ছে পাকা ও আধাপাকা আমন ধানে। সোনালি ধানে মাতোয়ারা কৃষক। শুরু হয়েছে ধান কাটা। কৃষকের ঘরে ঘরে এখন উৎসবের আমেজ।

এবার আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪৩৬ মেট্রিক টন। তবে ফসল ভালো হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে বলে ধারণা কৃষি বিভাগের। ইতোমধ্যে স্বল্প ও মধ্যম মেয়াদি আমন জাতের ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। আমন ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের ঘরে ঘরে এখন উৎসবের আমেজ।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বছর বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী উপজেলায় বীজতলা এবং রোপা আমন ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া ভারী বৃষ্টি ও বন্যার কারণে বিভিন্ন উপজেলায় মার খেয়েছিলেন আমন চাষিরা। এতে আমন চাষাবাদে দুশ্চিন্তায় ছিলেন কৃষক। সেই দুশ্চিন্তা কাটিয়ে আমন চাষাবাদ বাড়াতে এ বছর কৃষকদের সার ও বীজ সহায়তা দেয় সরকার।

এখন আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ধান কাটা চলবে। এবার প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে ভালো ফলনের আশা করছে কৃষকরা। কৃষি বিভাগ জানায়, ধান কাটার পর কৃষকেরা স্বল্প মেয়াদি আমন চাষের একই জমিতে আগাম জাতের আলু, শীতকালীন সবজি ও অন্যান্য রবি ফসল রোপণ শুরু করেছেন। ফলে মাঠজুড়ে কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অসংখ্য কৃষি শ্রমিকের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। খবর বাসসের।

চট্টগ্রাম কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (শস্য) মো. ওমর ফারুক গতকাল সোমবার জানান, চলতি মৌসুমে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৭৯ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমি। তবে লবণাক্ততার কারণে উপকূলীয় উপজেলা গুলোতে চাষাবাদ কিছুটা কম হয়েছে। চাষ হয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৮০৯ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান লাগানো হয় ৭৮০০ হেক্টর জমিতে। আর উফশী জাত এক লাখ ৪৯ হাজার ৬৬৫ হেক্টর ও স্থানীয় জাত ২২ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪৩৬ মেট্রিক টন। তবে অনুকূল আবহাওয়া এবং কৃষকদেরকে সরকারের সার ও বীজ সহায়তাসহ কৃষি বিভাগের সময়োপযোগী পরামর্শে ফসল ভালো হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে।

ইতোমধ্যেই একই জমিতে স্বল্প ও মধ্যম মেয়াদি আমন ধান কেটে হেক্টরপ্রতি প্রায় ৩.১২ টন পরিচ্ছন্ন চাল উৎপাদনের ফলন পাওয়া গেছে। তবে কৃষকদের আগ্রহে আবাদ বেড়ে লক্ষ্যমাত্রার ১০০.১২ শতাংশেরও বেশি ফলন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, এবারের চাষের অবস্থা খুবই ভালো। নভেম্বর মাসের শেষ দিকে দীর্ঘমেয়াদি আমন ধান কাটার কাজ শুরু হলে গড় ফলন আরও বাড়বে। এতে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে বাম্পার উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। এ বছর বন্যা, পোকামাকড় বা অন্যান্য প্রাকৃতিক ক্ষতি তুলনামূলক কম হওয়ায় আমন ধানের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

মো. ওমর ফারুক আরও জানান, জেলার মোট আমন আবাদি জমির প্রায় ১৪ শতাংশ ধান কাটা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। স্বল্প ও মধ্যম মেয়াদি আমন ধান কাটার অগ্রগতি ১২ শতাংশ হলেও গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৩.১ টন, পরিচ্ছন্ন চালযা শুকনা ধানের হিসেবে ৪.১১ টনহিসেবে পাওয়া যাচ্ছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঠ পরিদর্শন শেষে কর্মকর্তারা জানান, যথেষ্ট রোদ ও নিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে ধান গাছে দানা ভালোভাবে এসেছে। কৃষকরাও উচ্চ ফলন ও ধানের মান নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বলে তিনি জানান।

চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে পাকা আমন ধান কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। ধান ঘরে তুলতে কাটা, মাড়াইয়ে শুরু হয়েছে উৎসবের আমেজ। গ্রামজুড়ে এখন পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা। গুমাই বিলের কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্ষেতে ক্ষেতে চলছে ধান কাটা, মাড়াই ও ঘরে তোলার ব্যস্ততা। বছরের পর বছর নিজের জমিতে চাষ করছি। আল্লাহর রহমতে এবার আমন ধানে ভালো ফলন হয়েছে।

বাঁশখালী উপজেলার কৃষক শামসুল আলম জানান, তিনি প্রায় ৮ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমন ধান আবাদ করেছেন। এবার প্রতি একর জমিতে ৪২ থেকে ৫৬ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়ার আশা করছেন বলে জানান তিনি। একই কথা বলেছেন, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা। পটিয়ার রতনপুরের কৃষক মো. জাবের, চন্দনাইশের নুর আলম ও সাতকানিয়ার মঈনুদ্দিন এবার আমনে উচ্চ ফলনের কথা জানিয়েছেন। এদিকে বাজারে নতুন আমন ধান মনপ্রতি (৪০ কেজি) ১ হাজার ১৮০ থেকে ১ হাজার ২৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পটিয়ার কৃষক কবির আহমেদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধ৬০ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আজ নানা আয়োজন