চট্টগ্রামে কোভিড-১৯ শনাক্তের ৬৩ শতাংশই তরুণ ও যুবক। যাদের বয়স ২১ থেকে ৫০ বছর। অর্থাৎ তরুণ ও যুবকরাই বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন করোনাভাইরাসে। অবশ্য তাদের মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে বয়স্কদের চেয়ে কম। তবে আক্রান্তের হার বেশি হওয়ায় তাদের মাধ্যমে বয়স্ক ও শিশুদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। তাই তরুণদের অধিক বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
তারা বলছেন, শ্রমজীবী জনগোষ্ঠির সিংহভাগই তরুণ ও যুবক। এদের কাজের কারণে বাসার বাইরে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্ক থাকা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে উল্টো স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে তরুণ ও যুবকদের। ফলে দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছেন তারা। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত বছরের মার্চেই তরুণদের বিষয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছিল। সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস ঘেব্রেয়েসাস বলেছিলেন, ‘বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তরুণরা যে নিরাপদ; তা নয়। তরুণদের প্রতি আমার একটি বার্তা রয়েছে। আপনারা সম্পূর্ণ নিরাপদ নন। ভাইরাস আপনাদের কয়েক সপ্তাহের জন্য হাসপাতালে থাকতে বাধ্য করতে পারে, এমনকি এর ফলে মৃত্যুও হতে পারে। আপনারা যদি অসুস্থ নাও হন, কিন্তু আপনারা আরেকজনের মৃত্যুর কারণ হতে পারেন।’
চিকিৎসকের বক্তব্য : চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) ও করোনা ইউনিটের চিকিৎসক ডা. এইচ. এম হামিদুল্লাহ মেহেদী দৈনিক আজাদীকে বলেন, গতবছরও তরুণরা বেশি আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু মৃত্যু হার এবং রোগীর জটিলতা বেশি ছিল বয়স্কদের। এবারও তরুণরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই বলে এমন না যে, তরুণদের অবস্থা খারাপ হচ্ছে না। তাদের অনেকের অবস্থাও খারাপ হচ্ছে এবং মারাও যাচ্ছেন। আসলে কোভিড সবার হতে পারে। সেখানে কার অবস্থা তীব্র হবে সেটা আগে থেকে বলা যাবে না। ফলে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
এ চিকিৎসক বলেন, তরুণদের কাজের জন্য বাইরে বেশি বের হতে হয়। তাদের চলাফেরা বেশি। জনসমাগম হয় এমন জায়গায় তারা বেশি যান। ফলে তাদের ঝুঁকি বেশি। কিন্তু তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা বেশি। এক্ষেত্রে তারা মনে করতে পারে, আক্রান্ত হলেও তীব্রতা কম হচ্ছে। কিন্তু সেটা ভুল। কারণ কখন কার অবস্থা কি হয় সেটা আগেভাগে বলা মুশকিল। তরুণদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকলেও তাদের মাধ্যমে পরিবারের বয়স্ক ও শিশুরা আক্রান্ত হতে পারেন। কাজেই অবহেলা করা ঠিক হবে না।
তরুণদের প্রতি কোনো পরামর্শ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবার জন্য যে নিয়ম সেটা ফলো করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা এবং ঘন ঘন হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজ করতে হবে।
মোট শনাক্তের ৬৩ শতাংশই তরুণ ও যুবক : চট্টগ্রামে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৪২ হাজার ৭১৫ জন কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২১ থেকে ৫০ বছর বয়সী আছেন ২৬ হাজার ৫১০ জন। যা মোট শনাক্তের ৬৩ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী আছেন ৮ হাজার ৪৩৮ জন। যা মোট শনাক্তের ২০ শতাংশ। ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী আছেন ১০ হাজার ৫১ জন। যা মেটি শনাক্তের ২৪ শতাংশ। ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী আছেন ৮ হাজার ২১ জন। যা মোট শনাক্তের ১৯ শতাংশ।
সর্বশেষ চারদিনের তথ্য : গত রোববার থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত সর্বশেষ চারদিনে এক হাজার ৪৪৭ জন শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৯০৩ জনই ২১ থেকে ৫০ বছর বয়সী। এর মধ্যে গতকাল বুধবার শনাক্তের ২৫৯ জনই ২১ থেকে ৫০ বছর বয়সী। যা মোট সংক্রমিতের ৬২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গতকাল মোট শনাক্ত হয়েছে ৪১৪ জন। এর মধ্যে এর মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৮৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৯৩ জন এবং ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী আছেন ৮১ জন। আগের দিন ৬ এপ্রিল শনাক্তের ৩০১ জন ছিল তরুণ ও যুবক। যা মোট শনাক্তের ৬০ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ওইদিন শনাক্ত হয় ৪৯৪ জন। এর মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৯৩ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ১১১ জন এবং ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী আছেন ৯৭ জন। ৫ এপ্রিল শনাক্তের ১৯৬ জন ছিল তরুণ ও যুবক। যা মোট শনাক্তের ৬৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ ২১ থেকে ৫০ বছর বয়সী। ওইদিন ৩০৭ জন শনাক্ত হয়। এরমধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৫২ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৭১ জন এবং ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী আছেন ৫৪ জন। ৪ এপ্রিল শনাক্তদের মধ্যে ১৪৭ জন ছিল তরুণ ও যুবক। যা মোট শনাক্তের ৬৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ওইদিন মোট শনাক্ত হয় ২৩২ জন। এরমধ্যে এরমধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৫৩ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৬৬ জন এবং ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী আছেন ২৮ জন।