রাজনীতির মাঠে সংঘাত আর সহিংসতার মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের ধারণা, আগামীকাল ১৪ নভেম্বর মঙ্গলবার অথবা বুধবার তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। ভোটগ্রহণ হতে পারে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের ৪ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই গন্তব্যের পথে যাত্রা শুরু করবে নির্বাচনী ট্রেন। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোট, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএফ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশসহ একাধিক রাজনৈতিক দল নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া, অন্যান্য দলগুলো শুধুমাত্র তাদের যে সব সংসদীয় আসনে শক্ত অবস্থান আছে সে সব আসনে প্রার্থী দেবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে ওইসব আসনে প্রার্থীদের নামও ঘোষণা করেছে। এদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তফসিল ঘোষণার পর সিলেটের হযরত শাহ জালাল ও হযরত শাহ পরানের পবিত্র ভূমি থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন জেলায় মেগা প্রকল্প উদ্বোধনে যাচ্ছেন। সেখানে বর্তমান সংসদের যেসব এমপিকে আবারো আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন–সেখানে তাদেরকে জনসভায় হাত তুলে জনতার সামনে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। গত শনিবার কঙবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে জনসভায়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্যের এক পর্যায়ে আগামী নির্বাচনের জন্য ওই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিককে উপস্থিত জনতার সামনে পরিচয় করিয়ে দেন। এরকম আরো অনেক জেলায় যাদের ক্লিন ইমেজ আছে তাদেরকে আগামী নির্বাচনের জন্য আবারো পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের অভাবনীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুফলের পাশাপাশি নিজস্ব ইমেজে জয়ী হয়ে আসতে পারবেন এরকম প্রায় ১শ’ থেকে দেড়শ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই তালিকায় চট্টগ্রামের ৬ মন্ত্রী–এমপির নামও আছে বলে জানা গেছে।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের ১৬ আসনের বর্তমান ৬ মন্ত্রী ও এমপিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে দলীয় হাই কমান্ড বলে দিয়েছে। চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে এক এক আসনের প্রার্থীরা পাচ্ছেন দলীয় হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত। এই ৬ আসনের বাইরে আরো দুই সংসদীয় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য চিন্তা মুক্ত হতে যাচ্ছেন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে এই দুই আসনের সংসদ সদস্যও মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন বলে বিশ্বস্ত একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত এক বছরে সারাদেশে একাধিক জরিপ চালিয়েছেন অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে। একাধিক জরিপে এলাকায় বর্তমান মন্ত্রী–এমপিদের একাধিক বিষয় যাচাই করা হয়েছে। এসব জরিপে চাওয়া হয়েছে–নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীদের জনসমর্থন বা এলাকায় মানুষের সাথে তাঁর সম্পর্ক বা গ্রহণযোগ্যতা (যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু) কতটুকু, দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে বর্তমান সংসদ সদস্যের সম্পর্ক কেমন? প্রার্থীর আচার–আচরণ কেমন? সর্বশেষ চাওয়া হয়েছে প্রার্থীর অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আছে কিনা? এই বিষয়গুলো নিয়ে জরিপে যারা ৭০ শতাংশের উপরে নম্বর পেয়েছেন তারা গ্রিণ বা সবুজ তালিকায় যুক্ত হয়েছেন।
একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া আসন থেকে তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মীরসরাই আসন থেকে বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, আনোয়ারা থেকে তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, পটিয়া থেকে তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, রাউজান থেকে চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, কোতোয়ালী আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আগামী নির্বাচনে আবারো দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন তা অনেকটা নিশ্চিত। এই ৬ আসনের বর্তমান মন্ত্রী–এমপিরা অনেকটা মাঠ গুছিয়ে নির্বাচনী কাজে মনোনিবেশ করেছেন। এছাড়াও দক্ষিণ চট্টগ্রাম, উত্তর চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর অন্যান্য আসনের সংসদ সদস্যরাও আগামী নির্বাচনের জন্য সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। একেএকে দলীয় হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেতে পেতে শুরু করেছেন। তাদেরকে সরকারের সকল সাফল্য জনগণের কাছে তুলে ধরতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এলাকায় এলাকায় সরকারের একাধিক ভাতার উপকারভোগীদের কাছে যেতে বলা হয়েছে।












