চট্টগ্রামের ৮৫ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে আশার আলো

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

গত আড়াই বছর ধরে আটকে থাকা চট্টগ্রামের ৮৫ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে অবশেষে আশার আলো দেখছে। ইতোমধ্যে পুরোনো ভেন্ডর টাইগার আইটির রেখে যাওয়া সারাদেশের প্রায় সাড়ে ১২ লাখ লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড প্রিন্টিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস্‌ ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) লিমিটেডকে। আগামী নভেম্বর থেকে শুরু করে পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে এসব স্মার্ট কার্ড গ্রাহকদের সরবরাহ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)।
নগরীর হালিশহর এলাকার আবদুল হালিম। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য চট্টগ্রাম বিআরটিএতে আবেদন করেন। জুন মাসে বিআরটিএ’র পরীক্ষায় কৃতকার্য হন। জুন মাসের শেষের দিকে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে আবেদন করার পর ফিঙ্গারপ্রিন্টও নেওয়া হয়। এসময় তাকে অস্থায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়। বিগত দুই বছর তিন মাসে অস্থায়ী লাইসেন্সটির প্রায় ছিন্নভিন্ন অবস্থা। এ পর্যন্ত ৬ বার মেয়াদ বাড়াতে হয়েছে তার লাইসেন্সের। এসব তথ্য জানিয়ে আবদুল হালিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘দালালের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকায় কন্ট্রাক্টে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলাম। পরীক্ষায় পাসও করি। কিন্তু প্রিন্টিং লাইসেন্সটি এখনো পাইনি। গত সপ্তাহেও নতুন করে মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়েছি। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন সময় দেওয়া হয়েছে। এখন আশায় আছি পাই কি না।’
সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের জন্য টাইগার আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় বিআরটিএ। ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে তাদের ১৫ লাখ কার্ড ছাপানোর চুক্তি হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত চুক্তির তিন বছরের মধ্যেই সাড়ে ১৪ লাখের কাছাকাছি কার্ড ছাপিয়ে বিআরটিএকে সরবরাহ করে। চাহিদার কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই বেশি কার্ড ছাপাতে হয় তাদের। দিন দিন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পুরোনো ঠিকাদার টাইগার আইটির সাথে জটিলতাও তৈরি হয় বিআরটিএ’র। পরবর্তীতে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান
মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সাথে নতুন ভেন্ডর হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয় বিআরটিএ। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির অপারেশন শুরু এবং গ্রাহকদের স্মার্ট কার্ডও সরবরাহ করতে শুরু করেছে। গত মার্চ থেকে তারা ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়ার কাজ শুরু করে।
বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, ডুয়াল ইন্টারফেস পলিকার্বনেট স্মার্ট কার্ডে ছাপা ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের জন্য ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সাথে গত বছরের ২৯ জুলাই চুক্তি হয়েছে। পাঁচ বছরে ৪০ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। চট্টগ্রামেও গত ১৮মে থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামে প্রতিদিন প্রায় দেড়শ মানুষের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম বিআরটিএ’র এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পুরোনো সার্ভারে চট্টগ্রামের ৮৫ হাজার লাইসেন্সের তথ্য রয়েছে, যেগুলো এখনো প্রিন্ট হয়নি। এখন পুরোনো সার্ভারের ড্রাইভিং লাইসেন্সগুলো প্রিন্টের জন্য বিএমটিএফের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বিআরটিএ। তাদের কাছে পুরোনো সার্ভারের ডাটাও হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।’
এ ব্যাপারে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘১২ লাখ ৪৪ হাজার পেন্ডিং ড্রাইভিং লাইসেন্স বিএমটিএফকে দেওয়া হয়েছে। তারা আগামী মাস থেকে প্রিন্টিংয়ের কাজ শুরু করবেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব স্মাট কার্ড সরবরাহ শুরু করা সম্ভব হবে। আশা করছি, প্রিন্টিং শুরুর ৬ মাসের মধ্যে তারা লাইসেন্সের এসব স্মার্ট কার্ড প্রিন্টিং শেষ করতে পারবেন।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধমেরিটাইম অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করলেন সুফী মিজানুর রহমান
পরবর্তী নিবন্ধফলের বাজার চড়া