চট্টগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক মমিনুরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদকের অনুমোদন

সীতাকুণ্ডের সমুদ্র সৈকতকে ডোবা দেখিয়ে ইজারা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৫ মার্চ, ২০২৫ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমানসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ডের সমুদ্র সৈকতকে ডোবা দেখিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপকে ইজারা দিয়ে সরকারের ১৭৫ কোটি টাকা ক্ষতি করার অভিযোগ অনুসন্ধানের অনুমোদন পেয়েছে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম১।

সম্প্রতি দুদক প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এ বিষয়ে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম১ এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, অনুমোদন পেলেও আমরা এখনো অনুসন্ধান শুরু করিনি। অনুসন্ধান শুরু করার জন্য দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে আরো একটি নির্দেশনা প্রয়োজন। উক্ত নির্দেশনা পেলে অনুসন্ধান করা হবে। আদালতসূত্র জানায়, এর আগে ডোবা দেখিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে বসুন্ধরা গ্রুপকে ভূমি ইজারা অনিয়মের অভিযোগটি কমিটি গঠন করে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ভূমি সচিব, মন্ত্রি পরিষদ সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারসহ বিবাদীদের প্রতি এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ২০ জানুয়ারি রুলসহ এ আদেশ দেন। পাশাপাশি কমিটির কার্যক্রমের অগ্রগতি জানিয়ে তিন মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সমুদ্র সৈকতকে ডোবা দেখিয়ে বসুন্ধরাকে বরাদ্দ শিরোনামে গত বছরের ১০ অক্টোবর গণমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ওই বরাদ্দের বৈধতা নিয়ে এবং তদন্তের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে গত ডিসেম্বরে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ কাওছার।

আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই সেদিন শুনানি করেছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজ বিন ইউসুফ, শফিকুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার চর বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের তিনটি মৌজা থেকে সমুদ্রসৈকতের ৪৭০ একর জায়গা ইজারার জন্য সমুদ্রসৈকতের বালুচর শ্রেণির ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে বসুন্ধরা গ্রুপ আবেদন করে ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট। আবেদনে দীর্ঘ মেয়াদী বন্দোবস্তি চাওয়া ভূমির সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের ক্রয়কৃত সম্পত্তি আছে বলেও জানানো হয়। উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সমুদ্রসৈকতে পেট্রোকেমিক্যাল, রিফাইনারি কমপ্লেঙ, কনডেনসেট ফ্রাকশনেশন রিফাইনারি স্থাপনের কাজ শুরু করেছেন। এ জন্য তৎকালীন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়। জাতীয় স্বার্থে কর্মসংস্থান ও জাতীয় সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার প্রয়োজনে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্তের জন্য অনুরোধ করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি ভূমি মন্ত্রণালয়ের খাসজমি১ শাখা থেকে চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হয়। ঠিক পরের দিন দ্রুততার সঙ্গে সীতাকুণ্ড উপজেলার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় কানুনগো আর সার্ভেয়ার দিয়ে নড়ালিয়া, বোয়ালিয়া ও চর বাঁশবাড়িয়া মৌজার প্রতিবেদন ও মতামত নেন।

প্রতিবেদনে ২৫৫.৭৭ একর সমুদ্রসৈকতকে ডোবা শ্রেণিতে পরিবর্তন করা যেতে পারে বলে মন্তব্য দেন কানুনগো আর সার্ভেয়ার। ৯ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় সে প্রতিবেদন সুপারিশসহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠান। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক চর বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভূমি শ্রেণি পরিবর্তনের গণবিজ্ঞপ্তি দেন এবং এ বিষয়ে কারো কোনো আপত্তি আসেনি দাবি করে শ্রেণি পরিবর্তন করে নেন। আরো উল্লেখ করা হয়, ভূমি বরাদ্দ দিতে গিয়ে তড়িঘড়ি করে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়। এই কারণে জায়গাটির বাজারমূল্যের তিনগুণ কম দামে পায় বসুন্ধরা গ্রুপ। মৌজা রেট অনুযায়ী বালুচর শ্রেণির (সৈকত) ৪৭০ একরের বর্তমান মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২৩০ কোটি টাকা। শ্রেণি পরিবর্তনের কারণে সেটা মাত্র ৫৫ কোটি টাকায় দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত পায় বসুন্ধরা গ্রুপ। আর ভূমির এ শ্রেণি পরিবর্তন করায় সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয় প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিয়ের জন্য চাপ, প্রেমিকাকে গলা টিপে হত্যা
পরবর্তী নিবন্ধআইনজীবীসহ ৩ জন গ্রেপ্তার, কারাগারে প্রেরণ