দীর্ঘদিন পর আজ চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ফৌজদারহাট বায়েজিদ বাইপাস রোডসহ চট্টগ্রামের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে সংসদীয় কমিটির বৈঠক বসছে। প্রায় সাত মাস পর আজ সকালে জাতীয় সংসদ ভবনে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর মানোন্নয়নে গৃহীত প্রকল্পগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। বৈঠকে প্রকল্পগুলোর সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনাও প্রদান করা হবে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একটি সূত্র এই খবর জানিয়ে বলেছে যে, করোনার ধাক্কায় প্রতিটি প্রকল্পই কমবেশি ব্যাহত হয়েছে। এই অবস্থা কাটিয়ে প্রকল্পগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সকলেই কমবেশি বিব্রত। প্রতিবছরই বর্ষায় নগরীর নিম্নাঞ্চল ডুবে যায়। বর্ষার পাশাপাশি জোয়ারের পানিতেও নিয়মিত প্লাবিত হয় নগরীর বিস্তৃত এলাকা। জলাবদ্ধতার নাকাল এ অবস্থা থেকে নগরীকে রক্ষা করতে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এই প্রকল্পটি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নানা প্রতিকুলতায় প্রকল্পটির কাজ প্রত্যাশিত গতিতে করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে অসংখ্য বহুতল ভবনসহ ৩১৫৫টি স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হয়েছে। ৩৬টি খালের প্রায় ৮৫ কিলোমিটার অংশ পরিস্কার করা হয়। প্রকল্পের আওতায় ৩০২ কিলোমিটার ড্রেনের ২৪০ কিলোমিটার পরিস্কার করা হয়। বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে প্রকল্পটির কাজ প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজও দ্রুততম সময়ে করার লক্ষ্য নিয়ে সেনাবাহিনী কার্যক্রম চালাচ্ছে। আজ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে জলাবদ্ধতা নিরসনের এই প্রকল্পটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প হচ্ছে আউটার রিং রোড। পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাসহ আনুষাঙ্গিক নির্মাণকাজের ইতোমধ্যে ৯২ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। অনানুষ্ঠানিকভাবে রাস্তাটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। রাস্তাটির দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ এবং ফিডার রোড নির্মাণের বিষয়ে বেশ কিছু প্রতিকুলতা তৈরি হয়েছে। বিষয়গুলো নিয়েও আজকের বৈঠকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের নির্মাণ কার্যক্রম নিয়েও আজকের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। পতেঙ্গার টানেলের কাছ থেকে শুরু হওয়া এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের কাজ চলছে। প্রথম ধাপের পতেঙ্গা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত এলাকায় গার্ডার স্থাপন শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তায় পিলার তৈরির কার্যক্রম চলছে। এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের কাজ ইতোমধ্যে ৩৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। তৃতীয় ধাপের বন্দরের নিরাপত্তাসহ বেশ কিছ্থ ইস্যুতে দেখা দেয়া সংকটেরও সুরাহা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ্যালাইমেন্ট তৈরির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সিডিএ এমওইউ স্বাক্ষর করে তৃতীয় ধাপের কার্যক্রম নিয়েও সিডিএ অগ্রসর হবে। এক্ষেত্রে গণপূর্ত মন্ত্রনালয় এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের মধ্যে আন্তঃমন্ত্রনালয় বৈঠকে বেশ কিছু বিষয়ে সুরাহা করতে হবে। আজকের সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
ফৌজদারহাট–বায়েজিদ বাইপাস রোডের ৯২ শতাংশেরও বেশি কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত শেষ করে রাস্তাটি চালু করার ব্যাপারেও বৈঠকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে।
আজ সকাল এগারটায় জাতীয় সংসদ ভবনে গণপূর্ত মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ, চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস এবং বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালকবৃন্দ বৈঠকে অংশ নেবেন বলেও সূত্র জানিয়েছে।
এই ব্যাপারে গতকাল সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের বৈঠকের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, বহুদিন বৈঠক করা সম্ভব হয়নি। করোনাকালে আজই প্রথম সংসদীয় কমিটির বৈঠক হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে অনুষ্ঠাতব্য বৈঠকে চট্টগ্রামের মেগা প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা এবং প্রয়োজনীয় দিক নিদের্শনা দেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।