চট্টগ্রামের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কী বার্তা দিলেন তারেক

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ১৬ আসনের বিপরীতে অর্ধশতাধিকের বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশী চট্টগ্রাম ১০-এ কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি প্রার্থী ঘোষণা শীঘ্রই

মোরশেদ তালুকদার | সোমবার , ২৭ অক্টোবর, ২০২৫ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী শীঘ্রই ঘোষণা করবে বিএনপি। এক্ষেত্রে প্রেস রিলিজ দিয়ে বা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে প্রার্থীদের নাম। যাকে দলের প্রার্থী ঘোষণা করা হবে তার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে দলের মনোনয়ন বঞ্চিতসহ সর্বস্তরের নেতাকর্র্মীদের। এক্ষেত্রে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যারা মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন তাদের পরবর্তীতে মূল্যায়ন করা হবে। আবার দলের মনোনয়ন পাওয়ার খবরে বিজয় মিছিল করতে পারবেন না কোনো প্রার্থী। পারবেন না এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করতে। বরং আসনে বঞ্চিত হওয়া মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে নিয়ে জনগণের কাছে যেতে হবে দলের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীকে। আগামী সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এ বার্তা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল রোববার বিকালে রাজধানীর গুলশান চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ বার্তা দেন। সভায় উপস্থিত মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

উপস্থিত মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জানিয়েছেন, তারেক রহমানের বক্তব্য ছিল আবেগময়। তার চোখ টলটল করছিল। বিগত ১৬১৭ বছরে আন্দোলনসংগ্রামে দলের নেতাকর্মীদের ত্যাগের কথা স্মরণ করে তিনি বলেছেন, ত্যাগ থাকলেও এক আসনে একাধিকজনকে মনোনয়ন দেয়া সম্ভব না, দেয়া যাবে একজনকে। তাই যারা মনোনয়ন পাবেন না তারা যেন দলকে ভালোবেসে এবং দলকে নিজের পরিবার মনে করে ধানের শীষকে নিজের সন্তানের মতো আগলে রাখেন সে আহ্বান জানিয়েছেন তারেক রহমান। একইসঙ্গে তারেক রহমান এটাও ইঙ্গিত দিয়েছেন, বৃহত্তর স্বার্থে কিছু কিছু আসন ছেড়ে দেয়া হতে পারে। তবে কাকে এ আসন ছাড়া হবে বা কোন কোন আসন ছেড়ে দেয়া হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি তারেক রহমান। এ সময় তিনি এখন পর্যন্ত প্রার্থিতার বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে কাউকে সবুজ সংকেত দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন সভায় উপস্থিত এক নেতা।

বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, চট্টগ্রামের ১৬ আসনের বিপরীতে অর্ধশতাধিকের বেশি নেতা দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে দলের হাই কমান্ডের কাছে তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে এক আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থীও রয়েছেন। ফলে একজনকে মনোনয়ন দিলে কোন্দল বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ডেকে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন তারেক রহমান। বার্তা দেন ঐক্যের। এর আগে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের কোন্দল মেটানোর দায়িত্ব দেয়া হয়।

এদিকে দলের চেয়ারপার্সনের সঙ্গে মতবিনিময় করার জন্য গতকাল গুলশান কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগের প্রায় শতাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। এতে দলের চেয়ারপার্সনের কার্যালয় চট্টগ্রামের শীর্ষ নেতাদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। তবে এদের কেউ বক্তব্য রাখার সুযোগ পাননি তারেক রহমানের সামনে। এমনকি সুনির্দিষ্ট করে কোনো প্রার্থীর নামও ঘোষণা করেননি তারেক রহমান।

জানা গেছে, সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসাইন।

সভায় চট্টগ্রামের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক, গোলাম আকবর খোন্দকার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মো. হেলাল উদ্দিনসহ মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এদিকে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম১০ আসনের কোনো মনোনয়ন প্রত্যাশীকে সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

কী বার্তা পেলেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা : সভায় উপস্থিত নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ আজাদীকে বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন বলেছেন, দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান শক্তি বিরোধিতা করছে, নানা ষড়যন্ত্র করছে। এ অবস্থায় দল যাকে মনোনয়ন দিবে তাকে বিজয়ী করার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন। মূলত তিনি মোটিভেশনাল বক্তব্য রেখেছেন। একেক আসনে ৪/৫ জন করে নমিনেশন প্রত্যাশী আছেন। কিন্তু দেয়া যাবে একজনকে। তাই যারা পাবেন না তারা যেন দলের জন্য কাজ করেন সে নির্দেশনা দিয়েছেন। দলকে ভালোবাসলে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে না যেতে বলেছেন। নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে বলেছেন, যেন গ্রুপিং না হয়। একইসাথে যাকে নমিনেশন দেয়া হবে তিনি যেন যাদের দেয়া হবে না তাদের সাথে নিয়ে কাজ করেন সে নির্দেশনা দেয়া হয়। একইসাথে যাদের নমিনেশন দেয়া হবে তারা যেন বিজয় মিছিল না করে, মিষ্টি বিতরণ না করে তার নির্দেশনা দিয়েছেন। মূলত এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যাতে যিনি নমিনেশন বঞ্চিত হবেন তিনি মনে কষ্ট পান।

সভায় উপস্থিত দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন মো. হেলাল উদ্দীন আজাদীকে বলেন, শীঘ্রই দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হবে এবং সবাইকে দলের প্রার্থীর জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে; এটাই মূল বার্তা ছিল। অন্যান্য যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী আছেন বা বাদ পড়েছেন এবং সিনিয়র নেতৃবৃন্দ আছেন তাদের ভবিষ্যতে মূল্যায়ন করা হবে।

দল ঘোষিত প্রার্থীকে অসহযোগিতা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সংক্রান্ত কোনো বার্তা দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করলে দল তো অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। তবে আমাদের নেতার (তারেক রহমান) বক্তব্য হচ্ছে, দলের প্রার্থীকে অসহযোগিতাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াটা মুখ্য নয়। বরং একে অপরের প্রতি দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে পারিবারিক বন্ধনের মতো ঐক্যবদ্ধ থেকে ধানের শীষের জন্য কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপি ও ধানের শীষকে এক পরিবারের সন্তানের মতো দেখতে বলেছেন।

কবে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হবে, এমন কোনো তথ্য দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, যেসব বিভাগ বাকি আছে ওইসব বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথেও সভা হবে। এরপর সহসা প্রার্থীর বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হবে।

সভায় উপস্থিত দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান আজাদীকে বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে করতে বলেছেন। যাকে নমিনেশন দেবেন তার জন্য কাজ করতে বলেছেন। যিনি নমিনেশন পাবেন তিনি নমিনেশন বঞ্চিতদের সাথে নিয়ে যেন কাজ করেন সেই নির্দেশনা দেন।

সভায় উপস্থিত উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সরওয়ার আলমগীর আজাদীকে বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন। যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তিনি যেন সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করেন। প্রার্থীর যোগ্যতা কেমন হবে জানতে চাইলে বলেন, শুধু দল করলে হবে না, জনগণের সাথেও সম্পর্ক থাকতে হবে। সামাজিক অবস্থান এবং অন্যান্য পারিপার্শ্বিক অবস্থানও দেখা হবে।

চট্টগ্রাম৯ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে সভায় উপস্থিত ছিলেন নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলম। তারেক রহমান কী বলেছেন জানতে চাইলে তিনি আজাদীকে বলেন, আবেগপ্রবণ হয়ে বক্তব্য রেখেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তার চোখের পানি টলটল করছিল। তিনি (তারেক রহমান) বলেছেন, সবাইকে তো মনোনয়ন দেয়া সম্ভব নয়। দল যাকে মনোনয়ন দিবে সবাই একসাথে তার জন্য কাজ করবেন। ধানের শীষ নিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তাহলে বিগত সময়ের চেয়েও অনেক দুঃসময় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। বিএনপিকে নিজের সন্তানের মতো আগলে রাখবেন।

সাইফুল আলম আজাদীকে জানান, তারেক রহমান সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দলের জন্য কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। দলের জন্য নেতাকর্মীরা যেভাবে গত ১৬১৭ বছর জীবন দিয়ে কাজ করেছেন, আগামীতেও যেন এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকে তার নির্দেশনা দেন। আমীর খসরু কী বলেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, দলের জন্য যারা বৃহত্তম ত্যাগ করবেন দলও তাদের প্রতিদান দেবে, এমনটি বলেছেন।

সভায় উপস্থিত বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা আজাদীকে জানান, তারেক রহমান বলেছেন, এখন অনেকগুলো ষড়যন্ত্রের মুখে পড়তে হচ্ছে দলকে। নমিনেশন সবাইকে দেয়া সম্ভব না, একজনকে দেয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে যাকে দেয়া হবে তার বিপরীতে অন্যান্য যারা ক্যান্ডিডেড, যারা দীর্ঘ ১৭ বছর কাজ করেছেন তাদের মন খারাপ করার কিছু নেই।

শাকিলা ফারজানা বলেন, আসলে তারেক রহমান বলেছেন, যাকে দিবে তার জন্য যাতে সবাই কাজ করে, সেই ম্যাসেজটা আমাদের দেয়া হয়েছে। সবাই যেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে নমিনেশন দেয়া হয়নি, যখন দেয়া হবে সবই জানবেন এবং প্রেস রিলিজের মাধ্যমে দেয়া হবে। কবে নাগাদ দলের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে, এমন কোনো আভাস দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কোনো আভাস আমরা পাইনি। তবে বলেছেন, অতি সত্বর প্রেস রিলিজের মাধ্যমে জানিয়ে দিব। যারা পাবেন তারা মিষ্টি বিতরণ করতে পারবেন না।

সভায় উপস্থিত চট্টগ্রাম১৪ (চন্দনাইশসাতকানিয়া আংশিক) মনোনয়ন প্রত্যাশী শফিকুল ইসলাম রাহী আজাদীকে বলেন, তারেক রহমান বলেছেন বিএনপি এখনো মনোনয়ন দেয়নি। কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। কাউকে সিগন্যালও দেয়নি। প্রেস রিলিজ দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেবে। যাকে দেবে তার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।

উল্লখ্য, চট্টগ্রাম১৬ আসন ছাড়াও কঙবাজারের ৪টি, তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ৩টি, নোয়াখালীর ৬টি, লক্ষ্মীপুরের ৪টি এবং ফেনীর জেলার ৩টি সংসদীয় আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও উপস্থিত ছিলেন সভায়। ছিলেন রংপুর বিভাগের সংসদীয় আসনের প্রার্থীরাও।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমালিকানা বন্দরের, শুধু বিদেশি অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে
পরবর্তী নিবন্ধউপদেষ্টা পরিষদের সভা নভেম্বরেই শেষ : তথ্য উপদেষ্টা