চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও সমুদ্রের জোয়ারের পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়েছে লক্ষাধিক পরিবার। নদী ও খাল বিলে ঢলের পানি বাড়তে থাকায় ক্রমান্বয়ে ডুবছে ফসলি জমি, রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি। পানিতে ভেসে যাচ্ছে মৎস্য প্রকল্পগুলো।
সীতাকুণ্ড : সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় এলাকার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। টানা বর্ষণে পাহাড়ি ঢলের পানিতে পুরো এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। মুরাদপুর ইউনিয়নে সাগরের জোয়ারের পানি ও পাহাড়ি ঢলের পানি এক হয়ে জমিগুলোতে ঢুকে পড়ে। সীতাকুণ্ড আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. ইমরান জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬০ মিলিমিটার অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। বড় ধরনের কোনো ক্ষয় ক্ষতির সংবাদ পাওয়া যায়নি।
মীরসরাই : মীরসরাই প্রতিনিধি জানান, টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মীরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, সরকারতালুক, খিলমুরারী ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর, দক্ষিণ ওয়াহেদপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জোরারগঞ্জ–মুহুরী প্রজেক্ট ও জোরারগঞ্জ–আবুরহাট সড়ক, বড়দারোগাহাট–কমরআলী সড়ক। পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার অনেক রাস্তাঘাট, স্কুল, বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। কয়েকটি গ্রামে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ক্ষতি হয়েছে রোপা আমন ও সবজি ক্ষেতের। অনেক মৎস্য প্রকল্প থেকে পানিতে মাছ ভেসে গেছে।
দুর্গাপুর ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের কৃষক জসীম উদ্দিন বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আমার প্রায় এক একর জমির রোপা আমন তলিয়ে গেছে। এতে করে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। মৎস্যচাষি ইকবাল হোসেন বলেন, ইছাখালীতে কয়েকটি মৎস্য প্রকল্প থেকে পানির সাথে মাছ ভেসে গেছে। তবে বৃষ্টি আর না বাড়লে তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে রোপা আমন ডুবে গেছে। এছাড়া সবজির কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে বৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখনো ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
ফটিকছড়ি : ফটিকছড়ি প্রতিনিধি জানান, ভারী বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ফটিকছড়ির বিভিন্ন এলাকায় বন্যার শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। ইতোমধ্যে উপজেলার ধর্মপুর, নারায়ণহাট, খিরামসহ একাধিক নিচু অঞ্চলে পানি উপচে পড়ছে। বাড়ছে জলাবদ্ধতা, ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষি ও বসতবাড়ি। পানি বাড়তে শুরু করে উপজেলার বিভিন্ন নদ–নদী ও খালে। বিশেষ করে হালদা নদী, ধুরুং খাল এবং সর্তা খালে পানির প্রবাহ অনেক বেড়ে গেছে। এতে আশপাশের নিচু এলাকা দ্রুত প্লাবিত হওয়ার অশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে উপজেলার অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা নাজিরহাট ও নানুপুর বাজারে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র জলাবদ্ধতা। বাজারের নিচু অংশে দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়েছে ও যান চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও বাতাসের প্রভাবে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা দেখা দিয়েছে। গাছ ভেঙে পড়ায় প্রাথমিকভাবে কয়েকটি লাইনে সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফটিকছড়ি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। ফটিকছড়িতে এখনো বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি, যেটা হচ্ছে সেটা জলাবদ্ধতা। আবহাওয়া অফিস থেকে এখনো কোনো অফিসিয়াল নোটিশ পাইনি, তবে জানতে পেরেছি আগামীকাল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
হাটহাজারী : হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, হালদা নদীর ঢল ও জোয়ারের পানিতে উপজেলার আওতাধীন ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। হালদা নদীর সংযোগ খালে পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার আওতাধীন বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে বন্যা দেখা দিয়েছে। পাহাড়ি ঢলে ও হালদা নদীর জোয়ারের পানিতে মদুনাঘাট আকবরিয়া সড়ক, ফতেয়াবাদ দাতারাম চৌধুরী সড়ক, মেখল আজিজিয়া মজিজিয়া সড়ক, মেহেরনেগা সড়ক, ফতেয়াবাদ মদুনাঘাট সড়ক, আমান বাজার নজুমিয়া সড়ক, চারিয়া মুরাদ সড়কের পূর্বাংশ, চারাবটতল মোহাম্মদপুর সড়ক, মীর সড়ক, বটতল বালুখালী সড়ক, গুমানমর্দ্দন মুৎসুদ্দি সড়ক, কাটাখালী সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
রাউজান : রাউজান প্রতিনিধি জানান, বৃষ্টি, হালদা নদীর জোয়ারের পানি ও পাহাড়ি অঞ্চলের সাথে যুক্ত খালের পানিতে রাউজানের বিভিন্ন ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। হালদা নদী, সর্তা, ডাবুয়া খালের প্রবল স্রোত তীরবর্তী অনেক গ্রাম ডুবে গেছে। পৌরসভার ৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। হালদার পানির স্রোতে ভেসে গেছে একটি কাঠ ও বাঁশের তৈরি সেতু। এছাড়া রাউজানের উরকিরচর, পশ্চিম গুজরা, নোয়াপাড়া, বিনাজুরী, পশ্চিম গহিরা, নোয়াজিশপুরের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট, হাটবাজার ডুবে যাওয়ায় কোমর ও হাঁটু পানি মাড়িয়ে মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে।