একটা সময় চট্টগ্রামের ফুটবলে দাপট ছিল আবাহনী এবং মোহামেডানের। পরে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আসে রিজেন্সি স্পোর্টস ক্লাব। পরবর্তীতে আবাহনী এবং মোহামেডান চলে যায় জাতীয় লিগে। যা বর্তমানে বি লিগ হিসেবে পরিচিত। আর রিজেন্সি অনেকটাই নিস্ক্রীয় হয়ে পড়ে। ফলে চট্টগ্রামের ফুটবলে নতুন নতুন শক্তির আবির্ভাব ঘটতে থাকে। সিটি কর্পোরেশন একাদশ, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, মোহামেডান ব্লুজ নিজেদের শক্তির জানান দিতে থাকে। আবার দুই বছর আগে এদের সবাইকে পেছনে ফেলে চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ফুটবলের শিরোপা জিতে অফিস দল কাস্টমস এসসি। তবে এবারে নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভুত হলো মাদারবাড়ি উদয়ন সংঘ। যদিও ২০০৮ সালে প্রথম প্রিমিয়ার লিগে আসার পর থেকে প্রতিবারই নিজেদের জায়ান্ট কিলার হিসেবে প্রতিষ্টা করেছে ক্লাবটি। শেষ পর্যন্ত ১৬ বছর পর এসে জিতল প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের শিরোপা। তাও বাঘা বাঘা সব দলকে পরাজিত করে। যেখানে দুই জায়ান্ট ব্রাদার্স এবং মোহামেডান ব্লুজকে হারিয়েছে বড় ব্যবধানে। গতকাল বিসিআইসি ক্রীড়া সংসদকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে প্রথমবারের মত শিরোপা উৎসব করে মাদারবাড়ি উদয়ন সংঘ।
একটা সময় জেলা ক্রীড়া সংস্থায় পাড়া ভিত্তিক ক্লাব নিবন্ধন দেওয়া হতো। সে সুযোগে জেলা ক্রীড়া সংস্থায় আসে মাদারবাড়ি উদয়ণ সংঘ। তবে দীর্ঘদিন টানা খেলে গেছে ক্লাবটি চট্টগ্রামের ফুটবল সহ বিভিন্ন ইভেন্টে। তবে ফুটবলে তাদের সাফল্য ধরা দিতে থাকে ২০০০ সাল থেকে। সেবারই দ্বিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ন হয় মাদারবাড়ি উদয়ণ সংঘ। ২০০২ সালে খেলে প্রথম বিভাগে। ২০০৪ এবং ২০০৫ সালে হয় রানার্স আপ। ২০০৮ সালে রানার্স আপ হয়েও মিলে প্রিমিয়ার লিগে খেলার সুযোগ। আর সেটা সম্ভব হয়েছে তখন আবাহনী এবং মোহামেডান জাতীয় লিগে খেলতে চলে যাওয়ায়। এরপর থেকে আর অবনমন হয়নি দলটির। এরই মধ্যে অনেক বড় দলের মাথা ব্যথার কারন হয়ে দাড়িয়েছিল দলটি। এরই মধ্যে ২০১৮ সালে লাভ করে তৃতীয় স্থান। আর এবারে একেবারে অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জণ করে।
এবারের লিগে শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলে শিরোপা জয়ের শেষ হাসি হেসেছে উদয়ন সংঘ। শুরুটা হয়েছিল মোহামেডান ব্লুজকে ৩-০ গোলে হারিয়ে। আর শেষটা হয়েছে বিসিআইসিকে ৫-০ গোলে হারিয়ে। মাঝখানে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবকেও হারিয়েছিল ৫-০ গোলে। মাঠে এবং মাঠের দারুন জমাট একটি দল হিসেবে প্রথমবারের মত প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতেছে উদয়ন সংঘ। এ যেন বড় দল হিসেবে দাবি করা দল গুলোর বলয় ভেঙ্গে নতুন নতুনের কেতন উড়ানো। যদিও দল হিসেবে বেশ পুরানো উদয়ন সংঘ। কিন্তু প্রিমিয়ার ফুটবলের বড় সাফল্য ধরা দিয়েছে দীর্ঘ দিন পর। দল গঠনে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের সাংগঠনিক দক্ষতার মাধ্যমে দারুন সাফল্য নিয়ে ঘরে ফিরেছে উদয়ন সংঘ।
একটা সময় এই দলটি নিয়ে মাঠে আসতে দেখা যেতো ঈসা মোঃ দুলাল, শাহীন সরওয়ার, একরামুল হক, কোচ নুরুল কুদ্দুসদের। এদের মধ্যে দুলাল এবং একরাম নেই পৃথিবীতে। নুরুল কুদ্দুস সাহেবও নেই এখন দলের সাথে। তবে আছেন বর্ষীয়ান কোচ কবির আহমেদ বেবি। নিজে উদয়ন সংঘে খেলেছেন আবার কোচিংও করিয়েছেন। এখনও করছেন। শাহীন সরওয়ারও তেমন আসেন না স্টেডিয়ামে। তবে নতুন যারা দায়িত্ব নিয়েছে তারা যেন দলটাকে আরো সংগঠিত করে সেরা সাফল্যটা এনে দিয়েছে। এক সময় মোহামেডান ব্লুজের স্টেডিয়াম প্রতিনিধি থাকা মশিউল আলম স্বপন যোগ দেন উদয়ন সংঘে। আর সে সাথে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ জোবায়ের, সভাপতি মনির আহমেদ, ফুটবল চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন নোমান, ম্যানেজার মনির উদ্দিন, সাধারন সম্পাদক নুরুল আমিন, আবদুল হাই সহ তরুন এম এ মুছা বাবলু, কিংবা মোস্তাকিম আহমেদ গুড্ডুদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় আজ নতুন ইতিহাস রচনা করল উদয়ন সংঘ। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকলে একটি দল কিভাবে নিজেদের সেরা সাফল্য অর্জণ করতে পারে সেটাই যেন দেখিয়ে দিল উদয়ন সংঘ। দলের জন্য সেরা সব ফুটবলার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় ভুমিকা পালন করেছেন সাবেক জাতীয় ফুটবলার আনোয়ার হোসেন। তার সুদক্ষ পরিচালনায় দলটি হয়ে উঠে অপ্রতিরোধ্যে। আর দলটির হয়ে কয়েকটি ম্যাচ খেলেছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম। তার উপস্থিতি দলের অন্যদের যুগিয়েছে প্রেরনা। সব মিলিয়ে দারুন প্রচেষ্টার ফলই যেন পেল মাদারবাড়ি উদয়ন সংঘ। আজ তারা চট্টগ্রামের ফুটবলের সেরা দল।