চট্টগ্রামের পাঁচ পাট কল ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া

কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পাটজাত পণ্যের উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়াতে উদ্যোগ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের ৫টিসহ সারা দেশের ১৭টি পাট কলের কয়েকশ একর ভূমি এবং অবকাঠামো বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দেশীয় কোম্পানিও টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে। তবে সরকারের নীতি নির্ধারক মহল থেকে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে পাট কলগুলোতে পাট কল কিংবা পাটজাত পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করার শর্ত বাধ্যতামূলক রাখা হচ্ছে। এসব ভূমি কোনো ধরনের বন্ধক দেওয়ার সুযোগ থাকছে না। ফলে সরকার থেকে ইজারা নিয়ে ব্যাংকের কাছে বন্ধক দিয়ে টাকা নেওয়ারও সুযোগ থাকবে না।
সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন মিল রয়েছে ২৫টি। বছরের পর বছর লোকসান দেওয়া মিলগুলো গত বছরের জুলাই থেকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসব মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বিদায় করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি মিল তালাবদ্ধ। আনসার ও গুটিকয়েক অফিসার রেখে মিলগুলো পাহারা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি মিলের রয়েছে শত শত কোটি টাকার ভূসম্পত্তি। বিপুল পরিমাণ যন্ত্রপাতিসহ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে একেকটি মিলের। তালাবদ্ধ থাকা অবস্থায়ও এসব সম্পদের একটি অংশ লোপাট হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় ক্রমাগত লোকসান দেওয়া ২৫টি মিলের মধ্যে ১৭টি মিল সরকার দীর্ঘমেয়াদি ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চট্টগ্রামের ৫টি মিল হচ্ছে সীতাকুণ্ডের হাফিজ জুট মিলস, এম এম জুট মিলস, আর আর জুট মিলস, গুল আহমেদ জুট মিলস এবং রাঙ্গুনিয়ার কেএফডি জুট মিলস। মিলগুলো ৫ থেকে ২০ বছর মেয়াদে এবং পরবর্তীতে ইজারা বাড়ানোর শর্তে চট্টগ্রামের ৫টি মিলসহ ঢাকা এবং খুলনা অঞ্চলের ১৭টি মিল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআইয়ের ব্যাপারটিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। দ্রুত কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করতে মিলগুলো ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। মাসিক বা বার্ষিক ভাড়া ভিত্তিতে ইজারা দেওয়া হবে।
মিলগুলো বন্ধ হওয়ার সময় কাঁচা পাট প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে পাটজাত দ্রব্য উৎপাদিত হতো। বর্তমানে প্রতিটি মিলে হেসিয়ান, স্যাকিং, সিবিসি, ব্লাংকেট, এবিসি (জিও জুট), পাটের সূতা, ডাইভারসিফাইড জুট ব্যাগ প্রভৃতি উৎপাদনের যন্ত্রপাতি রয়েছে। তবে এগুলো এত পুরনো যে, উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যেত। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে যা দিয়ে টিকে থাকা কঠিন। এসব যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করে কিংবা আধুনিকীকরণের মাধ্যমে পাটজাত বিভিন্ন পণ্যের ব্যবহার করে মিলগুলোকে লাভজনক করার সুযোগ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগের বিষয় জড়িত। সরকার এই বিপুল বিনিয়োগের ঝুঁকি না নিয়ে মিলগুলো ইজারা দিচ্ছে, যাতে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দেশে পণ্য উৎপাদন এবং রপ্তানি বৃদ্ধি করার সুযোগ তৈরি হয়।
বিজেএমসি চট্টগ্রাম অঞ্চলের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজাদীকে বলেন, মিলগুলো বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তবে পুরো ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে ঢাকা থেকে। চট্টগ্রামে কোনো তথ্য নেই। এখানে তেমন লোকবলও নেই। চট্টগ্রামে বিজেএমসির অবস্থা নাজুক।
তিনি জানান, প্রতিটি মিলের কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। এখন টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে দেশি কিংবা বিদেশি কোম্পানি কীভাবে কী করে তা সময় বলে দেবে। দেশীয় কোম্পানির কাছে কয়েকটি জুট মিল দেওয়া হলেও তারা তা চালাতে পারেনি। উল্টো মিলগুলোর ক্ষতি করেছে।
উল্লেখ্য, স্বাধীন হওয়ার সময় দেশে পাট কল ছিল ৭৫টি। ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির এক আদেশে পাটকলগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য গঠিত হয় বিজেএমসি। ব্যক্তি মালিকানাধীন, পরিত্যক্ত ও সাবেক ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের আওতাধীন ৭৮টি জুট মিল বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণে দেওয়া হয়। ১৯৮১ সালে এই সংস্থার অধীনে মিলের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮২টি। ১৯৮২ সালের পর সরকার ৩৫টি পাটকল বিরাষ্ট্রীয়করণ, ৮টি মিলের পুঁজি প্রত্যাহার ও ১টি পাটকল একীভূত করে।
১৯৯৩ সালের পর বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে পাটখাতে সংস্কার শুরু হলে বিপর্যয় দেখা দেয় এই সেক্টরে। ওই সময় ১১টি পাট কল বন্ধ করে কোনো কোনোটি বিক্রি করে দেওয়া হয়। ২০০২ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয় আদমজী জুট মিল। এরপরও বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন ৩২টি জুট মিল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল। সর্বশেষ গত বছরের জুলাই মাসে দেশে সব পাট কল একযোগে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআগে ছিল বাগান, এখন জব্দ মালামালের ভাগাড়
পরবর্তী নিবন্ধআত্মহত্যাই করেন সালমান শাহ : আদালত