বর্তমানে চট্টগ্রামের জনসংখ্যা ৯১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ জন। ১০ বছরে জেলায় জনসংখ্যা বেড়েছে ১৫ লাখ ৫৩ হাজার। এর মধ্যে অবিবাহিত নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা বেশি। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর জেলা রিপোর্ট প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।
দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ২০২২ সালের জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে মোট জনসংখ্যা ৯১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ জন। ২০১১ সালে চট্টগ্রামের জনসংখ্যা ছিল ৭৬ লাখ ১৬ হাজার জন। আরও জানানো হয়েছে, চট্টগ্রামে অবিবাহিত নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা বেশি। নারী ২৬.৫২ শতাংশের বিপরীতে পুরুষের হার ৪২.৪৩ শতাংশ। প্রতি ১০০ জন নারীর অনুপাতে পুরুষের সংখ্যা ৯৯.৩৭ শতাংশ। চট্টগ্রামে পুরুষের সংখ্যা ৪৫ লাখ ৭০ হাজার ১১৩ এবং নারীর সংখ্যা ৪৫ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৬ জন। সে হিসেবে চট্টগ্রামে নারী ২৮ হাজার ৮১৩ জন বেশি।
চট্টগ্রামে সাক্ষরতার হার ৮১.০৬ শতাংশ, এর মধ্যে নারী ৭৯.২৬ শতাংশ এবং পুরুষ ৮২.৮৮ শতাংশ। জেলায় ১৫–২৪ বছর বয়সী জনসংখ্যার প্রায় ৩০.৩৮ শতাংশ তরুণ–তরুণী পড়ালেখা, কাজ বা কোনো ট্রেনিং কার্যক্রমে যুক্ত নেই। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ৪৬.৬২ শতাংশ, পুরুষের সংখ্যা ১২.১৬ শতাংশ। এছাড়া চট্টগ্রামে কমছে কৃষিনির্ভর পেশার পরিমাণ। জেলায় কৃষি ক্ষেত্রে কাজ করা জনসংখ্যার পরিমাণ ১৭.৪৬ শতাংশ। এর বিপরীতে শিল্পখাতে ২৮.৭৪ শতাংশ এবং সেবাখাতে ৫৩.৮০ শতাংশ জড়িত। চট্টগ্রামে মুসলিম জনসংখ্যা ৮৭.৫৩ শতাংশ। হিন্দু জনসংখ্যা ১০.৭২ শতাংশ। বৌদ্ধ জনসংখ্যা ১.৬৩ শতাংশ।
১৫ বছরের ঊর্ধ্বে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭৭.০৭ শতাংশ। এর মধ্যে নারী ৬৮.৫০ শতাংশ। পুরুষ ৮৫.৯৮ শতাংশ। অন্যদিকে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ৫০.৮২ শতাংশ। এর মধ্যে নারী ৪২.৪৩ শতাংশ এবং পুরুষ ৫৯.৫৪ শতাংশ।
পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে অসংখ্য দেশ রয়েছে, যেগুলো আয়তনে বিশাল হলেও জনসংখ্যায় আমাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের যুবদের সংখ্যাও ইউরোপের অনেক উন্নত রাষ্ট্রের চেয়ে ঢের বেশি। অথচ মাথাপিছু আয়, সেবার মান প্রভৃতিতে বাংলাদেশের চেয়ে তারা অনেক এগিয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে দুর্বলতা কোথায়। মূলত তারুণ্যনির্ভর জনগোষ্ঠীকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে দুর্বল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত এবং প্রশিক্ষণের অভাবকে। আজকের এ বিশাল কর্মক্ষম ও উদ্যমী তরুণ জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করার এখনই সময়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে কর্মমুখী শিক্ষার অভাবে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কমছে না। কারিগরি ও বিশেষায়িত শিক্ষায় যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের চাকরির বাজারে ভালো চাহিদা আছে। কিন্তু চাহিদানুযায়ী দক্ষ জনবল সরবরাহে আমাদের বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা যথোপযুক্ত ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে আমাদের দেশের শিক্ষিত বেকারগণ ব্যর্থতা ও হতাশায় আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক সময় চেষ্টা ও সংগ্রামে বিফল হয়ে ধ্বংসাত্মক কাজে আত্মনিয়োগ করছে, যা কেবল তার নিজের বা পরিবারের জন্য নয়, গোটা সমাজের জন্য হয়ে উঠছে ভয়ঙ্কর। এমতাবস্থায় করণীয় হচ্ছে, এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় বের করা।
যে কোনো বিষয়ে তথ্যের সঠিকতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আদমশুমারি বড় ভূমিকা রাখে। দেশের জনসংখ্যার ভিত্তিতে ভোগ্যপণ্যের চাহিদার হিসাব করতে হয়। বর্তমান জনসংখ্যার সঙ্গে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকেও অন্তর্ভুক্ত করে হিসাব রাখতে হবে। পণ্যের চাহিদার সঙ্গে জনসংখ্যার হিসাবে মিল থাকা দরকার। যদি জনসংখ্যা কম ধরে হিসাব নিরূপণ করা হয়, তাহলে ভোগ্যপণ্যের চাহিদার বাইরে থাকবে আরো অনেক মানুষ। ফলে উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থায় উদ্বৃত্ত পণ্য থাকলেও বাস্তবে তার সুফল পাওয়া যাবে না। জনসংখ্যার তুলনায় চাহিদায় বরং ঘাটতি থেকে যাবে। এতে চাহিদার সংকট হলে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আদমশুমারির মাধ্যমে জনসংখ্যার সঠিক তথ্য নিশ্চিত হলে খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের প্রকৃত চাহিদা নিশ্চিত হওয়া সহজ। সেই চাহিদার অনুপাতে সমাধান করা সহজ হবে।