৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ছুঁয়েছে চট্টগ্রামের তাপমাত্রা। চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা এলাকার তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস উল্লেখ করা হলেও নগরীর আশপাশের উপজেলা ও পার্বত্য জেলা রাঙামাটির তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী রোববার চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় ৩৮.৫ ডিগ্রি, সীতাকুণ্ডে ৩৯.৬ ডিগ্রি, রাঙামাটিতে ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। রোববার দেশের মধ্যে যশোরে সবোর্চ্চ ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়।
রোববার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল স্বাক্ষরিত স্থানীয় পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১০-১৫ কি.মি. বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। গতকাল চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৪.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ১.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এতে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া এবং খুলনা অঞ্চলের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরণের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এদিকে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে নাগরিক জীবনে ভোগান্তি তৈরি হয়েছে। রোববার বিগত ৭ বছরের মধ্যে যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এদিন ঢাকার তাপমাত্রা ছিল আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৪ সালে যশোরের তাপমাত্রাই দেশে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, “দেশজুড়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে বৃষ্টিহীন বৈশাখে সবচেয়ে গরম দিন গেল রোববার। ২০১৪ সালের পর এটা সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।”
এর আগে ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। একই বছর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও ৪০ ডিগ্রিতে উঠেছিল। গত দুই যুগে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠেছিল যশোরে। তার আগে ১৯৯৫ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠেছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে রেকর্ড ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয়েছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে আবহাওয়াবিদরা তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলেন। উষ্ণতা বেড়ে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়।
হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে চলমান তাপমাত্রা অস্বাভাবিক তাপমাত্রা নয়। বৈশাখে বৃষ্টি না থাকায় এমন আবহাওয়া। চলমান এ তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে; রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।’