চট্টগ্রাম থেকে ক্রিকেটার উঠছেনা এই অভিযোগটা অনেক পুরানো। কেন চট্টগ্রাম থেকে ক্রিকেটার উঠে আসছেনা তা নিয়ে আলোচনার যেন শেষ নেই। তবে নানা আলোচনার মাঝে বারবার একটা কথা উঠে আসে চট্টগ্রামের কয়েকটি ক্রিকেট একাডেমি কয়েকজন কোচের সিন্ডিকেটের কারণে চট্টগ্রামের ক্রিকেটাররা তাদের প্রতিভার বিকাশ করতে পারছেনা। তাছাড়া কোচদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব, কোচেস সমিতি ব্যবহার করে ব্যক্তিগত ফায়দা লুটার চেষ্টা, ব্যক্তিগত আক্রোশ, অর্থ লেনদেন সহ নানা অভিযোগ উঠে এসেছে ভুক্তভোগী ক্ষুদে ক্রিকেটারদের মধ্য থেকে। গত ৫ আগস্ট দেশের পট পরিবর্তনের ফলে বর্তমান সময়ের সবচাইতে পরিচিত শব্দ বৈষম্যের শিকার ক্ষুদে ক্রিকেটাররা তাদের মুখ খুলতে শুরু করেছে। বেশিরভাগ ক্রিকেটারেরই অভিযোগ কোচদের কারনে উন্নতি হচ্ছেনা চট্টগ্রামের ক্রিকেটের। গতকাল এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে চট্টগ্রামের তরুন ক্রিকেটার নামে এক ব্যানারে মানব বন্ধনের আয়োজন করে বেশ কিছু ক্রিকেটার এবং তাদের অভিভাবক। সেখানে অংশ নেওয়া ক্রিকেটাররা নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে বলেন চট্টগ্রামের কোচ বিশেষ করে বিভাগীয় কোচের কারণে চট্টগ্রামের অনেক মেধাবী ক্রিকেটার জেলা দল কিংবা বিভাগীয় দলে জায়গা পায়না। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রিকেট কোচের দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক ক্রিকেটার মোমিনুল হক। এছাড়া চট্টগ্রামের ভুক্তভোগী ক্রিকেটার নামে একদল ক্রিকেটার চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ছাড়াও বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীণ ফাহিমের কাছে তাদের অভিযোগ তুলে স্মারকলিপি দিয়েছে। সেখানেও জেলা কোচ এবং বিভাগীয় কোচকে দায়ী করা হয়েছে ভাল মানের ক্রিকেটাররা জেলা দলে জায়গা না পাওয়ার কারন হিসেবে। যদিও নানা সময় ক্রিকেটার এবং তাদের অভিভাবকরা চট্টগ্রাম জেলা দল এবং বিভাগীয় দল গঠনের ক্ষেত্রে কোচদের ন্যক্কারজনক হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলতেন। কিন্তু সে সময় নানা কারণে কেউ কিছু বলার সাহস পেতোনা। তবে এবার যেন তারা সোচ্ছার হতে শুরু করেছে। অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যখন চট্টগ্রাম জেলা দল গঠন করা হয় তখন সবচাইতে বেশি হস্তক্ষেপ করেন বিভাগীয় কোচ। এরপর জেলা কোচ সহ অন্য কোচরা মিলে যেন একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। যাতে তাদের একাডেমির বাইরের কোন খেলোয়াড় দলে আসতে না পারে। আবার যখন তাদের ভাগাভাগিতে বেশকম হয়ে যায় তখন একে অপরের বিরুদ্ধে কাঁদা ছোড়াছুড়ি করে। বিভাগীয় কোচ মোমিনুল হকের বিরুদ্ধে অর্থ নিয়ে দলে খেলোয়াড় নেওয়ার অভিযোগও করেছে ক্রিকেটাররা। এরপর দল গঠন করা হলে নাকি চলতো অন্য খেলা। বিসিবির চট্টগ্রাম জেলা কোচ মাহবুবুল করিম মিঠু জানিয়েছেন দল যখন বিভিন্ন জেলায় খেলতে যায় তখন এইসব একাডেমির কোচরা তাদের খেলোয়াড়দের ফোন করে বলে দেন যে, তোমার দলের চিন্তা করে লাভ নেই, ২০/৩০ রান করে আউট হয়ে চলে আসবা। বিভাগীয় দলে ঢুকানো কিংবা জেলা দলে রাখার দায়িত্ব আমাদের। আর এর ফলে দলে কোন শৃংখলা থাকতোনা বলে অভিযোগ করেন মিঠু। যদিও একাডেমি প্রীতির অভিযোগ রয়েছে মিঠুর বিপক্ষেও। এছাড়া চট্টগ্রামে এমন সব ক্রিকেট কোচ বা একডেমির মালিক রয়েছে যারা কখনো ক্রিকেটই খেলেনি। অথচ তারা ও কোচ। আর তারাই সবচাইতে বেশি চাপ দিয়ে থাকে নিজ একাডেমির ক্রিকেটারকে জেলা দল কিংবা বিভাগীয় দলে নিতে।
তবে প্রভাব খাটিয়ে দলে নিজের একাডেমির ক্রিকেটার নেওয়ার কথা অস্বীকার করে মোমিনুল বলেন আমি কাজ করি বিভাগের ১১টি জেলা নিয়ে। আমি কেন জেলা দল নিয়ে মাথা ঘামাব ? তার বিরুদ্ধে বিসিবির ইনডোরে নিজের ছেলেকে অনুশীলন করানোর অভিযোগও তুলেছেন বঞ্চিতরা। সে সংক্রান্ত ভিডিও এবং স্টিল ছবিও প্রকাশ করেছে তারা। তবে মোমিনুল তা অস্বীকার করে বলেন শুধু আমার ছেলে নয় বিভাগের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটর নিয়ে আমি অনুশীলন করাই। তবে প্রশ্ন উঠছে তাহলে কয়েকজন ক্রিকেটার কেন বিসিবির স্থাপনা ব্যবহার করতে হলে পুরো দল নয় কেন ? তিনি বলেন আমি জেলা দল নিয়ে কখনোই মাথা ঘামাইনা । পাশাপাশি অর্থ নিয়ে ক্রিকেটারকে দলে নেওয়ার কথাও অস্বীকার করেন তিনি। চট্টগ্রাম জেলা কোচ মাহবুবুল করিম মিঠু নিজের একাডেমির ক্রিকেটারদের দলে ঢুকানো প্রসঙ্গে বলেন যোগ্যতা ছাড়া আমার একাডেমির কোন ক্রিকেটার দলে জায়গা পেয়েছে তেমনটি প্রমান করতে পারলে ্আমি চাকুরি ছেড়ে দেব। তিনি বলেন আমরা যারা বোর্ডে চাকরি করি আমাদের একাডেমি করতে বাধা নাই। তবে দল গঠনে নিজের একাডেমিকে কখনোই প্রাধান্য দেইনি। অথচ দল গঠন করেন তারা একই সাথে কোচের দায়িত্বও পালন করেন তারা। মিঠু অভিযোগ করে বলেন জেলা দলকে হারাতে বিভিন্ন একাডেমির কোচরা তাদের ক্রিকেটারদের কুমন্ত্রনা দিয়ে থাকেন। চট্টগ্রাম থেকে কেন ক্রিকেটার উঠে আসছেনা তেমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় একাধিক কোচ বলেন চট্টগ্রামে ক্রিকেট শেখায় তারাই যারা কখনোই ক্রিকেট খেলেনি। হাতে গোনা দু চারজনের কথা বাদ দিলে বাকিরা কেউই ক্রিকেট খেলেনি। অথচ তারা জেলা দল নিয়ে খেলতে যায় বিভিন্ন টুর্নামেন্টে। আর সেখানে গিয়ে নানা অপকর্ম করে দলটাকে ডুবিয়ে আসেন। এদিকে প্রশ্ন উঠেছে ক্রিকেট কোচদের এসোসিয়েশন নিয়ে। কয়দিন আগে এই কোচেস এসোসিয়েশনের এক সভ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত একাধিক কোচ জানিয়েছেন সভায় আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত হয়েছে একরকম কিন্তু ফেসবুক কিংবা অণ্য মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে অণ্য রকম। যা সংগঠনকে ব্যবহার করে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন দু একজন। তেমন অভিযোগও করেছেন তারা। দেশের ক্রিকেট বোর্ড এখন বেশ সমৃদ্ধ। ক্রিকেটারের পাশাপাশি ক্রিকেট বোর্ড কোচ তৈরির কাজও করছে । বোর্ড থেকে প্রশিক্ষন নেওয়া দেশের অন্যান্য জেলার কোচরা জেলার জণ্য ক্রিকেটার তৈরির কাজটা নিরশসভাবে করলৌ চট্টগ্রামের কোচরা নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট করে চট্টগ্রামের ক্রিকেটকে ধ্বংস করছে বলে করছেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা। কখনো বিভাগীয় কোচ, কখনো জেলা কোচ আবার কখনো অণ্য কোচরা মিলে নিজেদের একাডেমির ক্রিকেটার ভাগবাটোয়ারা করে জেলা কিংবা বিভাগীয় দল গড়ে চট্টগ্রামের ক্রিকেটকে পিছিয়ে দিচ্ছে। তবে সবচাইতে বেশি অভিযোগের তীল বিভাগীয় কোচ মোমিনুল হকের দিকে। যদিও তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগকে ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছেন। বঞ্চিতরা বলছেন সময় এসেছে এই সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়ে সত্যিকার অর্থে ভাল কোচ, (যারা কোন একাডেমির সাথে যুক্ত নয়) তাদের নিয়ে দল গঠনের কাজ পরিচালনা করলে হয়তো আবারো ফিরে পাবে চট্টগ্রামের ক্রিকেট তারা হারানো গৌরব।