উচ্চ আদালতের আদেশ ‘অমান্য করায়’ চট্টগ্রামের তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতের বিচারক সরকার কবির উদ্দিনকে তলব করেছে হাই কোর্ট। আগামী ৩১ মার্চ তাকে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। আদালত অবমাননার অভিযোগ আনতে করা একটি আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার রুলসহ এ আদেশ দেয়। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আছরারুল হক। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আমিনুর রহমান চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। আইনজীবী মো. আছরারুল হক জানান, চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ এলাকার একটি জমির মালিকানা নিয়ে হাটহাজারীর ফরাহাদাবাদের হাজী ফারুক আহমেদের ছেলে মাহাফুজুর রহমানসহ চারজন চট্টগ্রামের আদালতে একটি ঘোষণামূলক (টাইটেল স্যুট) মামলা করেন। মামলাটি চট্টগ্রামের তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতের বিচারক সরকার কবির উদ্দিনের আদালতে বিচারাধীন।
এদিকে পাঁচলাইশের তাজুল ইসলামের ছেলে বেলাল হোসেনসহ কয়েকজন একই জমির মালিকানা নিয়ে অন্য একটি মামলা করেন, সেটিও বিচারাধীন। তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ সরকার কবির উদ্দিনের আদালতে বিচারাধীন মামলার তথ্য জানতে পেরে বেলালসহ অন্যরা এ মামলায় পক্ষভুক্ত করতে আবেদন করেন। কিন্তু ২০১৯ সালের ২৯ মে বিচারক সরকার কবির উদ্দিন এ আবেদন খারিজ করে দেন। পরে ২৭ আগস্ট ওই আদেশের বিরুদ্ধে তারা হাই কোর্টে রিভিশন আবেদন করেন। হাই কোর্ট গত ২ সেপ্টেম্বর তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে চলমান মামলার ওপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ দিয়ে রুল জারি করে। হাই কোর্টের এই আদেশের অনুলিপি বিচারক সরকার কবির উদ্দিনের আদালতে দাখিল করা হলেও গত ২৭ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট আদালত তা নথিভুক্ত করে মামলাটি পরবর্তী শুনানির জন্য রাখে। পরে ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর হাই কোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া আদেশের অনুলিপিও ওই আদালতে দাখিল করা হয়। কিন্তু বিচারক সরকার কবির উদ্দিন মামলার বিচারকাজ চালিয়ে যান বলে আইনজীবী আছরারুল হক জানান। তিনি বলেন, এরপর এক পর্যায়ে উচ্চ আদালতের আদেশ ‘অমান্য করায়’ বিচারক সরকার কবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনতে হাই কোর্টে আবেদন করা হয়। এই আবেদনের বিষয়ে জানালেও বিচারক মামলার কার্যক্রম চলমান রেখে উচ্চ আদালতের এ সংক্রান্ত আদেশ দাখিল করতে বলে মামলার পরবর্তী তারিখ দেন।
আছরারুল হক বলেন, হাই কোর্টের আদেশের বিষয়ে দরখাস্ত দিয়ে বার বার জানালেও মামলার কার্যক্রম চলমান রেখেছেন বিচারক সরকার কবির উদ্দিন। তিনি আদেশে বলেছেন, আবেদনকারীরা মোকাদ্দমার প্রয়োজনীয় কোনো পক্ষ না হওয়ায় দরখাস্ত নামঞ্জুর করা হল। আর মামলা স্থগিতের দরখাস্তটি আগের আদেশ অনুসারে গ্রহণযোগ্য নয় বলে নামঞ্জুর করেন। ফলে বাধ্য হয়েই আদালত অবমাননার অভিযোগ আনতে আবেদন করতে হয়েছে বলে জানান এই আইনজীবী।