বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, এই চট্টগ্রামের মাটি অনেক বীর, আউলিয়ার দেহ রেখেছে। সাগরের মতো বিশাল মন চট্টগ্রামের মানুষের। ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী। চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন, গেটওয়ে। চট্টগ্রামের ওপর আমাদের নির্ভর করতে হয়। সেই চট্টগ্রামকে আরো গুরুত্ব দেওয়া দরকার। বন্দরকে আপগ্রেড করতে হবে। আশা করি ৬০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করতে পারব এবার। মহাসড়কে ১৩ টনের বাধা পণ্যের ওপর পড়বে। এক সময় চট্টগ্রাম এলে পাহাড়ের মাঝে শহর দেখতাম। সমুদ্রের হাতছানি দিত। এখন ঢাকা থেকে ট্রেন কক্সবাজার পর্যন্ত যাবে। ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে সেই চট্টগ্রাম চাই।
গত ৩১ মে বিকেলে নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে ২৯তম চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ আয়োজিত মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আসলে একবিংশ শতাব্দীর উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে চট্টগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ নগরীকে পেছনে রাখলে চলবে না। উন্নয়নের মহাসড়কে তীব্র গতিবেগে চলতে হবে। নানা সভাসমাবেশে কিংবা গোলটেবিল আলোচনায় চট্টগ্রামের নাগরিক সমস্যাগুলো অতি দ্রুত দূরীভূত করে উন্নয়নে গতিবেগ সঞ্চারের প্রণোদনাই উচ্চারিত হয়েছে বারবার। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে কাজ করবার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
আমাদের মাননীয় মন্ত্রীরা নানা সময়ে অঙ্গীকার করেন, প্রতিশ্রুতি দেন যে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন হয় না।
আমরা মনে করি, চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার।
নানা মহল থেকে অভিযোগ আসে যে, ‘অনেক কিছুই শুরু করা হয় সুন্দরভাবে, কিন্তু সেসব শেষ করা হয় না। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পরিকল্পনা ও চৌকস বাস্তবায়ন প্রচেষ্টার কথাও বলা হয়। সঠিক সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের তাগিদও দেওয়া হয়। জলাবদ্ধতা, যানজট, নদী–খাল দখল, পাহাড় কর্তন ইত্যাদি সমস্যার পেছনে অসাধু চক্র ও অবৈধ যানবাহনের তথ্যও আলোচনায় বের হয়ে আসে। মোটের উপর নাগরিক সমস্যা, সমন্বয়হীনতা ইত্যাদির পেছনে কার্যকর প্রায়–সকল কারণই উন্মোচিত হয় এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়ে সমন্বিতভাবে উন্নয়ন কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি বিশেষ তাগিদও দেওয়া হয়। তবু চট্টগ্রামের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি আমরা প্রত্যক্ষ করি না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সমন্বয়হীনতা, সঠিক সময়ে কাজ শেষ না করা, অনেক কাজ শুরু করে যথাসময়ে শেষ করতে না পারা ইত্যাদি নানা সীমাবদ্ধতায় বিদ্যমান নাগরিক সমস্যা লাঘব হচ্ছে না। ফলে উন্নয়নের মহাসড়কে চট্টগ্রামের গতিবেগও বৃদ্ধি পাচ্ছে না। বরং জলাবদ্ধতা ও যানজটে থমকে থাকছে মহানগরী। উন্নয়নের জন্য চট্টগ্রামে বিশেষ বরাদ্দ ও নানা প্রকল্প দেওয়া হলেও চট্টগ্রামের জনদুর্ভোগের শেষ হচ্ছে না।
ইতোপূর্বে চট্টগ্রামে এক সমাবেশে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু এই চট্টগ্রাম নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন। তারই কন্যা বিশ্বনেত্রী আজকের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাও এই চট্টগ্রাম নিয়ে আশাবাদী। চট্টগ্রামকে তিনি আলাদা চোখে দেখেন। যতবার তিনি চট্টগ্রামে এসেছেন ততবার তিনি উন্নয়নের বার্তা নিয়ে এসেছেন। এ কারণে চট্টগ্রামের প্রতিটি প্রকল্প তিনি পাশ করিয়ে দেন। চট্টগ্রামের একটি উন্নয়ন প্রকল্পও তিনি বাদ দেননি।
তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে চট্টগ্রাম এখন মাইলফলক। সঠিকভাবে অবকাঠামো উন্নয়ন হলে চট্টগ্রাম হবে সত্যিকার অর্থে আধুনিক নগরী। দেশের বৃহত্তম বন্দর চট্টগ্রামে। এ কারণে চট্টগ্রামকে বলা হয় বন্দরনগরী। বাংলাদেশের অর্থনীতি পরিচালিত হয় এই বন্দর দিয়ে। এই বন্দরকে বাঁচাতে হলে চট্টগ্রামে উন্নয়নের কোনও বিকল্প নেই। সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করলে চট্টগ্রাম দ্রুত এগিয়ে যাবে। দেশেরও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। মোট কথা, চট্টগ্রামের উন্নয়ন সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের সাথে কথা বলতে হবে। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নিতে হবে। খুঁজে নিতে হবে সমাধানের পথ। দেশজুড়ে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে। এই উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি তদারকি করেন। খোঁজ–খবর নেন। চট্টগ্রামের উন্নয়নেও সবাইকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। চট্টগ্রামকে অধিক গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ সরকারের উপরের পর্যায় থেকে যেভাবে অনুভব করা হচ্ছে, বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটুক– সেটাই আমরা প্রত্যাশা করি।