চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, সব সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমেই চট্টগ্রামকে একটি উন্নত, আধুনিক ও পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। গত ৩ সেপ্টেম্বর বুধবার টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে গঠিত কমিটির ৬ষ্ঠ সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। সভায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জনদুর্ভোগ কমাতে গৃহীত কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সভায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহের বিষয়ে আগে নীতিমালা ছিল না। তাই যে যার ইচ্ছামত টাকা নিত। এখন আমরা ফিক্স করে দিয়েছি বাসা প্রতি সর্বোচ্চ ৭০ টাকা। কেউ যদি সেখানে ১০০ টাকার কোন স্লিপও দেয় আপনারা প্রমাণ জমা দিবেন ওই প্রতিষ্ঠানের ওয়ার্ক অর্ডার আমরা ক্যান্সেল করে দিব। আর দোকান, শিল্প–কলকারখানা সেগুলোর একটা আলাদা রেট আছে। ওটা আমরা ফিক্সড করেছি। তবে ভাসমান দোকান থেকে টাকা আদায় করা যাবে না কারণ সেগুলো অবৈধ এবং এগুলোকে আমরা উচ্ছেদ করি। টাকা আদায় করলে সেগুলোকে এক ধরনের বৈধতা দেয়া হয়ে যায়।
চট্টগ্রাম বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শেখ ফজলে রাব্বি শিশুদের সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করলে মেয়র বলেন, শিশুদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা চসিক স্কুলগুলোতে হেলথ কার্ড চালু করেছি। শুধু পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা নয়, শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের মাধ্যমেই একটি পরিচ্ছন্ন, সুস্থ ও সচেতন শহর গড়ে তোলা সম্ভব। এজন্য এ কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা শিশুদের পার্সোনাল হাইজিন এবং নাগরিক দায়িত্বের বিষয়গুলো শিখাচ্ছি। পর্যায়ক্রমে চসিকের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ কার্যক্রম সম্প্রসারিত করা হবে। চসিকের স্বাস্থ্যখাতে ডাক্তারের স্বল্পতা পূরণের জন্য অমরা চিকিৎসক ও কনসালটেন্ট নিয়োগ দিবো। এছাড়া শিক্ষার ক্ষেত্রেও লেখাপড়া আরো জোরদার করার জন্য শিক্ষক–শিক্ষিকা নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত একজন স্বপ্নবান মানুষ। তিনি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন এবং তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেন। তাঁর কাজের মধ্যে আন্তরিকতা যেমন আছে, তেমনি আছে সততা ও জবাবদিহিতা। তবে মুখে যে–কথাই তিনি উচ্চারণ করেন, তার বাস্তবায়ন কিন্তু তাঁর একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাঁকে দ্বারস্থ হতে হচ্ছে অন্যদের। এরা তো তাঁর মতো আন্তরিক নন। ময়লা আবর্জনা বা পরিচ্ছন্নতার কথা তিনি বলেন। তাঁর নির্দেশনা কি সংশ্লিষ্টরা মানেন? যার কারণে রাস্তাঘাটে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে থাকে। নির্ধারিত ডাস্টবিন থেকে নিয়মিত ময়লা পরিষ্কার করা হয় না।
অন্যদিকে ডা. শাহাদাত হোসেন সব সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগের কথা বলেছেন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসলে চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য সেবাসংস্থাগুলোর সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যতটুকু জানি, ‘সমন্বয় সভাগুলোতে সেবাসংস্থার দায়িত্বশীল কেউ না এসে তাদের প্রতিনিধি পাঠানো হয়। ফলে অগ্রগতিও হয় না।’ বিশেষজ্ঞরা বলেন, সমন্বয় নিশ্চিত করার জন্য মেয়রকে অভিভাবকত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি হিসেবে মেয়রকে সেবা প্রদানকারী সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনের নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতাও দিতে হবে। শহরটা যেহেতু সিটি কর্পোরেশনের অধীনে, সেহেতু সিটি মেয়রকে এর দায়িত্ব দেওয়া শ্রেয়। নগরের ভেতরে যে কোনো উন্নয়ন কাজ করতে গেলে মেয়রকে অবহিত করতে হবে। সমন্বয় করতে হবে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি থেকে শুরু করে সবকিছুর জন্য সিটি কর্পোরেশনকে দায়ী করা হয়। বাস্তবে একাধিক সংস্থা কাজ করতে গিয়ে শহরে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি করে থাকে। সমন্বয়হীনতার কারণে নাগরিক দুর্ভোগ ও সমস্যা সৃষ্টি হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে যে সব দুর্ঘটনা ঘটে, তাতে কষ্ট পাওয়া ছাড়া গতি নেই। মেয়রের অভিভাবকত্ব থাকলে, জবাবদিহি করার সুযোগ থাকতো।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, চট্টগ্রামকে অবহেলিত রেখে বাংলাদেশের উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়। চট্টগ্রামকে দেশের দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে যা যা করণীয় তাই করা দরকার। সঠিকভাবে অবকাঠামো উন্নয়ন হলে চট্টগ্রাম হবে সত্যিকার অর্থে আধুনিক নগরী। কেননা দেশের বৃহত্তম বন্দর চট্টগ্রামে। বাংলাদেশের অর্থনীতি পরিচালিত হয় এই বন্দর দিয়ে। এই বন্দরকে বাঁচাতে হলে চট্টগ্রামে উন্নয়নের কোনও বিকল্প নেই। সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করলে চট্টগ্রাম দ্রুত এগিয়ে যাবে। দেশেরও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। সমস্যা যেখানে সমাধানও সেখানে।








