সারা দেশের ন্যায় চট্টগ্রামেও শুরু হয়েছে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নামে বিশ্রামাগার নির্মাণ কাজ। তবে কোর্ট হিলের দুটি ভবনের মাঝখানে থাকা চলাচলের জায়গায় এই ন্যায়কুঞ্জ নির্মাণে আপত্তি জানিয়েছেন আইনজীবীরা। গত ১৯ জুন প্রধান বিচারপতি বরাবর আপত্তি জানিয়ে চিঠিও দিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি।
সমিতির নেতৃবৃন্দ বলছেন, চলাচলের জায়গা ব্যতীত অন্য কোথাও ন্যায়কুঞ্জ নির্মাণে আইনজীবীদের আপত্তি নেই। সুবিধাজনক স্থানে এটি নির্মাণ করা যায়। আদালতসূত্র জানায়, বিচারপ্রার্থীদের কথা চিন্তা করে চট্টগ্রামসহ দেশের ৬৪ জেলার আদালতপাড়ায় ন্যায়কুঞ্জ নামে স্থাপনার (বিশ্রামাগার) জন্য ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ‘ক’ শ্রেণির ন্যায়কুঞ্জের আয়তন হবে এক হাজার বর্গফুট। আর ‘খ’ শ্রেণির ন্যায়কুঞ্জের আয়তন হবে ৮০০ বর্গফুট। এই বিশ্রামাগারে বিচারপ্রার্থীদের বসার জন্য আসন, নারী–পুরুষ শৌচাগার, সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও একটি করে দোকান থাকবে। গত মাসের শুরুতে চট্টগ্রামে এর কাজ শুরু হয়।
এদিকে প্রধান বিচারপতি বরাবর আইনজীবী সমিতির পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, কোর্ট হিলের নতুন ও পুরাতন আদালত ভবনের মাঝখানের একমাত্র চলাচলের পথে জেলা ও দায়রা জজের তত্ত্বাবধানে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নামক একটি স্থাপনার নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। যা একটি প্রয়োজনীয় ও প্রসংশনীয় উদ্যোগ। আশা করি বিচার প্রক্রিয়ার পক্ষগণ এ থেকে উপকৃত হবেন। কিন্তু স্থাপনাটি যে স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে তা বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীসহ আদালত সংশ্লিষ্ট লোকজনের চলাচলের একমাত্র উন্মুক্ত পথ। যার ফলে এ বিষয়ে সমিতির সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ইতোপূর্বে জেলা ও দায়রা জজের সাথে সাক্ষাৎ করে উক্ত স্থানে স্থাপনা নির্মাণ না করে অন্যত্র সুবিধাজনক স্থানে নির্মাণের জন্য সমিতির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়। নতুন আদালত ভবনের নীচ তলায় জেলা নেজারত শাখার সম্মুখস্থ পর্যাপ্ত খোলা জায়গায় ‘ন্যায়কুঞ্জ’ স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয় উল্লেখ করে জেলা ও দায়রা জজ স্থানটি পরিদর্শন করে সমিতিকে অবগত করবেন মর্মে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, পূর্বের নির্ধারিত স্থানে অর্থাৎ নতুন ও পুরাতন আদালত ভবনের মাঝখানের চলাচলের রাস্তায় ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নামক স্থাপনাটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি বরাবর দেওয়া চিঠিতে আরো বলা হয়, নতুন ও পুরাতন আদালত ভবনের মাঝখানের উক্ত পথটি জরুরি মুহূর্তে অর্থাৎ অগ্নিনির্বাপণ, ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন জরুরি অবস্থায় আদালতগুলোর কার্যালয়, মালখানা, জেলা প্রশাসকের রেকর্ডরুম ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলোতে যাতায়াতের একমাত্র পথ। নির্মাণ কাজ হয়ে গেলে উল্লেখিত দপ্তরগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকবে। এমতাবস্থায় উক্ত নির্মাণ কাজ স্থগিত করে আলোচনার মাধ্যমে সুবিধাজনক কোনো স্থানে স্থাপনাটি নির্মাণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়।
এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, ন্যায়কুঞ্জ নামের স্থাপনা নির্মাণ করা অবশ্যই প্রয়োজনীয় ও প্রসংশনীয়। আদালত সংশ্লিষ্টরা, বিশেষ করে বিচারপ্রার্থীরা অবশ্যই এ থেকে উপকৃত হবেন। কিন্তু স্থাপনাটি করা হচ্ছে চলাচলের জায়গায়। এতেই আমাদের আপত্তি। আমরা জেলা জজের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি এবং সুবিধাজনক অন্য কোনো জায়গায় এটি করার জন্য অনুরোধ করেছি। জেলা নেজারত শাখার পাশে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। সেটির কথাও বলেছি। তিনি উক্ত জায়গা পরিদর্শন করে আমাদের জানাবেন বলেছেন। প্রধান বিচারপতি বরাবর চিঠি দেওয়া ও জেলা জজের সাথে সাক্ষাৎ পরবর্তী উক্ত বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কোনো অগ্রগতি নেই। তবে স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে।
এ বিষয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তবে জেলা ও দায়রা জজ আদালত সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ন্যায়কুঞ্জ নামের স্থাপনা প্রধান বিচারপতির নির্দেশনায় হচ্ছে। জেলা ও দায়রা জজ, কয়েকজন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং গণপূর্ত অধিদপ্তর এ বিষয়ে অবগত আছেন।