সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের কাঁচাবাজার গুলোতে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছে দুষ্ট সিন্ডিকেট চক্র এমন অভিযোগ সাধারণ ক্রেতাদের। গত কয়েকদিনে সাধারণ মানুষের বাজারে যাওয়া কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে। রয়েছে শেরপুরের ভয়াবহ বন্যার প্রভাবও। সবকিছু মিলিয়ে কাঁচা মরিচের দামে আগুন। কেজিতে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।
সোমবার (অক্টোবর) দুপুরে কাঁচামরিচের কেজি বিভিন্ন খুচরা বাজারেও ৩৫০-৩৮০-৫০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। সবজির বাজারেও আগুন জ্বলছে। সবগুলো সবজির দামই এক শ’ টাকায় ওঠানামা করছে। খুচরা বাজারের বিক্রেতারা জানান, হঠাৎ পাইকারি বাজারে আড়তদাররা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই তাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বাজার যেন কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যে যেভাবে পারে দাম বাড়ায়, আর কমায়। এসব দেখার আলাদা কোন বাজার মনিটরিংয়ে আলাদা টাস্কফোর্স নেই।
নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজারের মেসার্স মুক্তা বাণিজ্যলয়, মেম্বার আড়ত, বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স, মেসার্স খাজা বাণিজ্যলয় এর মালিকেরা জানান, কাঁচা মরিচের দাম বাড়ার কারণ হলো আগে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি হতো। এখন ভারত থেকে মরিচ আসছে না। আর ব্যবসায়িরাও দেশের পরিস্থিতির কারণে আমদানি করতে তেমন আগ্রহী না।
দেশেও চাহিদা মতো কাঁচা মরিচ নেই। কারণ বন্যার প্রভাবে।
রেয়াজউদ্দিন বাজারের মেসার্স সাথী বিতান, শাকিব ট্রেডার্স, মাইজভান্ডার ট্রেডার্স, বার আউলিয়া ট্রেডার্স, মেম্বার বাণিজ্যলয়, ময়নাবাতি বাণিজ্যলয়, কুমিল্লা বাণিজ্যলয়, মেসার্স পেয়ার বাবা প্রতিষ্ঠানের একাধিক সত্ত্বাধিকারি জানান, শুধু কাঁচা মরিচ কেজিতে ৩৫০, ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা টাকা বিক্রি হচ্ছে তা না। এর পাশাপাশি অন্য শাকসবজির দামেও আগুন। সবজি সর্বোচ্চ দেশ শ’ টাকা থেকে নিম্নে ৮০-৯০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। কারণ কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, সীতাকুণ্ড ও মীরসরাই বন্যার কারণে ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। তার প্রভাবে সবজি চাহিদা মতো বাজারে সরবরাহ খুবই কম।
এছাড়াও মেসার্স সাথী বিতান সত্ত্বাধিকারি মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভারতের উজানে টানা কয়েক দিন ভারী বৃষ্টিতে শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সবজির ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় বাজারে সবজির চাহিদা মেটাতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে আড়তে সরবরাহ কম আসছে, তাই সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে।’
রেয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তের দোকানগুলোতে টমেটো প্রতি কেজি ১৪০, শিম ১৭০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪৫, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৫০, ঢেঁড়স ৬০, ঝিঙে ৫০, কাঁকরোল ৬০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, মুলা ৭০, পটোল ৫০, বেগুন ৫০, শসা ৫০, গাজর ১০০, বরবটি ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সোমবার রেয়াজউদ্দিন বাজারের তরকারি বাজারসহ বিভিন্ন সবজি বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, ‘সব ধরনের পণ্যে এখন ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছা মতো দাম বাড়ান। আগে সিন্ডিকেট করে চাল, তেল, পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হতো। এখন সবজি ব্যবসায়ীরাও সিন্ডিকেট করে নিজেদের ইচ্ছামতো শাকসবজির দাম বাড়াচ্ছে। এদিকে পাইকারি বাজারেও সবজির দাম বেড়ে যাওয়া ও মুনাফা বেশি না হওয়ায় অনেক ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা এখন শাকসবজি বাদ দিয়ে ফল বিক্রি শুরু করেছেন।’
রেয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ ও সম্পাদক ফারুক শিবলী জানান, ‘উত্তর বঙ্গে অতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে শাক সবজির ফলনে ব্যাঘাত ঘটেছে। যার প্রভাব বাজারে পড়েছে। কাঁচা বাজারে কোন সিন্ডিকেট নেই। কারণ কাঁচা জিনিস দ্রুত বিক্রি করতে হয়। মজুদ রাখা কঠিন।’
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর বাজার পরিস্থিতি ও সরবরাহ চেইন তদারকি এবং পর্যালোচনার জন্য জেলা পর্যায়ে ‘বিশেষ টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়েছে।