স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে চলমান চারটি প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার পাশাপাশি নাগরিকদের সচেতন করার ওপর জোর দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি জলাবদ্ধতা নিরসনসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজে সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্টদের ‘প্রাতিষ্ঠানিক ইগো’ দূর করে সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। এমনকি নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। নদীতে ৬ থেকে ৭ মিটার পলিথিন ব্যাগ ও প্লাস্টিক ইত্যাদি দিয়ে জমাট বেঁধে গেছে। এসব বর্জ্য তো সিটি কর্পোরেশন ফেলে নাই। আমি, তুমি বা আমরা ফেলেছি। এই জায়গায় জনগণকে সচেতন করতে হবে, যেন বর্জ্যের প্রপারলি ম্যানেজমেন্টের মধ্যে তারাও অংশীদার হয়। গত ১৬ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে জানা যায় যে গত রোববার বিকালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এলাকায় জলাবদ্ধতা, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ও চসিকের সার্বিক কর্মকাণ্ড নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ এসব কথা বলেন। টাইগারপাস চসিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে পুরনো সমস্যা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। বহু বছর ধরে এটা নিরসনের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। তার অগ্রগতি আপাত দৃষ্টিতে চোখে পড়ছে না। বাস্তবে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। কাজ করতে গিয়ে যে সমস্যাগুলো উঠে আসছে সেগুলো কিভাবে সমাধান করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। তিনি বলেন, পদে পদে সমন্বয়ের কিছুটা অভাবের কারণে এটা হচ্ছে। সেখানেও একটা ভালো সাজেশন আছে। সমস্ত মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত যে মিটিংগুলো করা দরকার বা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত মিটিংগুলো করা হয় সেটা যাতে আরো ত্বরান্বিত হয় এবং সুষ্ঠুভাবে হয়। এর আগে সভায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামে চলমান চারটি প্রকল্প দ্রুত শেষ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলোকে চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে সংশ্লিষ্ট সবগুলো সংস্থাকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। শুধু প্রকল্পের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান সম্ভব না। এজন্য প্রয়োজন জনগণের সহযোগিতা। জনগণকে সচেতন করতেও কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সভায় তিনি জলাবদ্ধতা নিরসন চট্টগ্রামের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ মন্তব্য করে বলেন, চট্টগ্রামের সাথে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি জড়িত। এজন্য এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংস্থাগুলোকে ইগো ত্যাগ করে জনস্বার্থে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়, গত মার্চ মাসে জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্ষাকালীন প্রাক্প্রস্তুতিমূলক সমন্বয় সভায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়েছিলেন এই বলে যে, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের কাজ ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী বর্ষাকে সামনে রেখে ৩১ মার্চের পূর্বে প্রকল্পের আওতায় খালে চলমান রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজের সব উপকরণ সরিয়ে ফেলা হবে। এরপর বর্ষার আগে খালগুলো খনন ও পরিষ্কার করা হবে। তাই প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন আগামী বর্ষায় নগরে জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। কিন্তু এরপর তার কোনো অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করেনি নগরবাসী।
জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখগাথা হয়ে আছে। বর্ষা মৌসুমে ভারী কিংবা অল্প বৃষ্টিতে নগরের অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে, এই নিয়তি একপ্রকার মেনে নিয়েছে নগরবাসী। এমনকি বৃষ্টি না থাকলেও অনেক সময় জোয়ারের পানিতেও ভোগ্যপণ্যের বড় পাইকারি বাজার, হাসপাতালসহ বসতবাড়ি ডুবে যাওয়ার ঘটনা এখানে নৈমিত্তিক। বিশেষজ্ঞরা বলেন, জলাবদ্ধতার মূল কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ণ। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সময় জলপ্রবাহের যে রাস্তা ছিল তা বন্ধ করে দেয়া হয়। সে কারণেই জলাবদ্ধতার সমস্যা হচ্ছে। এর বাইরে এলাকা ভিত্তিকও নানা কারণ থাকতে পারে।
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতার বাইরের খাল–নালাগুলো সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে নিয়মিত পরিষ্কার করা ছিল অন্যতম কাজ। নগরীর ছোট–বড় নালাগুলোর আবর্জনা অপসারণ না করায় সামান্য বৃষ্টিতে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ বিশেষজ্ঞদের। নালা পরিষ্কার না করার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) দায়ী করছেন তাঁরা। চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখিও কম হয়নি। কর্তৃপক্ষের নানামুখী উদ্যোগ, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পরামর্শ কোনোটাই যেন কাজে আসছে না। আমরা মনে করি, জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামের খালগুলো ভূমিকা রাখতে সক্ষম। মেগা প্রকল্পে জলাবদ্ধতা নিরসনে যে সুপরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, তার বাস্তবায়ন জরুরি।