পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, চট্টগ্রাম জনসংখ্যায় বড় হয়েছে, সুযোগ–সুবিধায় বড় হয়নি। তিনি গত শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চট্টগ্রামের সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেলকে ‘শ্বেতহস্তী প্রকল্প’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এবং বলেন, টানেল নির্মাণ করা হলেও এখন তার রক্ষণাবেক্ষণ খরচও উঠছে না। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সমস্যা রয়েই গেছে। এ নগরকে আরো সুন্দর ও বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলা যেত। তবে তা করা হয়নি। অনেক সমস্যা ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় রয়ে গেছে।
এ কথা সত্য যে, উন্নয়নের জন্য চট্টগ্রামে বিশেষ বরাদ্দ ও নানা প্রকল্প দেওয়া হলেও চট্টগ্রামের জনদুর্ভোগের শেষ হচ্ছে না। সমন্বয়হীনতা, সঠিক সময়ে কাজ শেষ না করা, অনেক কাজ শুরু করে যথাসময়ে শেষ করতে না পারা ইত্যাদি নানা সীমাবদ্ধতায় বিদ্যমান নাগরিক সমস্যা লাঘব হচ্ছে না। ফলে উন্নয়নের সড়কে চট্টগ্রামের গতিবেগও বৃদ্ধি পাচ্ছে না। বরং জলাবদ্ধতা ও যানজটে থমকে থাকছে মহানগরী। তবে, একবিংশ শতাব্দীর উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে চট্টগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ নগরীকে থমকে থাকলে চলবে না। উন্নয়নে তীব্র গতিবেগে চলতে হবে। নাগরিক সমস্যাগুলো অতি দ্রুত দূরীভূত করে উন্নয়নে গতিবেগ সঞ্চারের প্রণোদনাই নানা সময়ে উচ্চারিত হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে কাজ করবার একটি পথও দেখানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, চট্টগ্রামকে অবহেলিত রেখে বাংলাদেশের উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়। চট্টগ্রামকে দেশের দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে যা যা করণীয় তাই করা দরকার। সঠিকভাবে অবকাঠামো উন্নয়ন হলে চট্টগ্রাম হবে সত্যিকার অর্থে আধুনিক নগরী। কেননা দেশের বৃহত্তম বন্দর চট্টগ্রামে। বাংলাদেশের অর্থনীতি পরিচালিত হয় এই বন্দর দিয়ে। এই বন্দরকে বাঁচাতে হলে চট্টগ্রামে উন্নয়নের কোনও বিকল্প নেই। সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করলে চট্টগ্রাম দ্রুত এগিয়ে যাবে। দেশেরও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। সমস্যা যেখানে সমাধানও সেখানে।
নগরীতে কাজ করছে সরকারের ডজনখানেক সেবা সংস্থা। উন্নয়নের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), পানি সরবরাহ করার জন্য ওয়াসা রয়েছে। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর, পিডিবি, পরিবেশ অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বিটিসিএল, ফায়ার সার্ভিস, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত, বিএসটিআই, বিআরটিসি, বিআরটিএ ছাড়াও আরও অনেক সেবা সংস্থা রয়েছে। যারা নগরজুড়ে নির্দিষ্ট সেবা নিশ্চিতে কাজ করে। যে যার মত দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকলেও সমন্বয়হীনতার কারণে সামগ্রিক উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরবাসী। এতে সরকারের উন্নয়ন ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে বার বার সমন্বয়ের কথা উঠে। বলা হয়, সমন্বয় সভার নামে কথার ফুলজুড়িও হয়। কিন্তু হাওয়ায় মিলিয়ে যায় সমন্বয় সভার পরিকল্পনাগুলো। এমন চিত্র থেকে বেরিয়ে যেকোনভাবে সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় আনতে হবে। কারণ নগরীর সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই। যেকোনভাবে সমন্বয়ে আসতে হবে। তার জন্য নগর সরকারের চেয়ে উত্তম সমাধান নেই। তাই আগে দাবিকে এক ছাতার নিচে আসতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নগরীর বেনিফিশিয়ারি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব আয় ও তহবিলের একটি অংশ বরাদ্দ নিশ্চিত হলে এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নীত করার সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। সর্বোপরি নাগরিক সুযোগ–সুবিধা এবং বিভিন্ন সেবাখাতগুলোর কার্যক্রম যথাযথভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে উঠবে।
জাতীয় অর্থনীতির ৮০ শতাংশের বেশি আয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এ কারণেই চট্টগ্রামকে বলা হয় জাতীয় অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। আমদানি–রফতানির ক্ষেত্রেও ৮০ শতাংশ কার্যক্রম পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম থেকেই। এই চট্টগ্রাম থেকে সরকার যে ট্যাক্স নিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে শতকরা ১ শতাংশ দিলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তি সুদৃঢ় হয় এবং চট্টগ্রামের উন্নয়নে অন্য কারোর উপর নির্ভরশীলতা আর দরকার পড়ে না।
মাতারবাড়ি টেকনাফ ও মিরসরাই–আনোয়ারাসহ চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যিক হাব। তাই চট্টগ্রামকে পিছিয়ে রাখার কোনো কারণ নেই।