প্রতারণার অভিযোগ তুলে নগরীর ফয়’স লেক মোড়ের অদূরে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অবস্থিত ইনস্টিটিউট অব কমিউনিটি অপথালমোলজি (আইসিও) নামের প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির ক্যাম্পাসে মানববন্ধন থেকে চার দফা দাবি জানান তারা। দাবিগুলো হচ্ছে– আইসিও’তে নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তির প্রসপেক্টাস (বিজ্ঞপ্তি) থেকে কেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্র্যাকটিস কথাটি উঠিয়ে দেওয়া হলো তার জবাবদিহিতা করতে হবে এবং তা পুনর্বহাল করতে হবে। অপটোমেট্রি বিষয়টিকে ‘ফ্যাকাল্টি অব হেলথ টেকনোলজি’ থেকে সরিয়ে ‘ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিন’–এ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে অথবা অপটোমেট্রির জন্য একটি পৃথক ও স্বতন্ত্র ফ্যাকাল্টি অব অপটোমেট্রি গঠন করতে হবে। এছাড়া কারিকুলাম পুনঃবিন্যাস–যেমন, এক বছর ইন্টার্নি অন্তর্ভুক্তি করতে হবে, কারিকুলাম মান উন্নীত করে আন্তর্জাতিকমানের করতে হবে, আমাদের ক্লিনিক্যাল সংযুক্তি তৃতীয় বর্ষ থেকে কোর্স কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
ইনস্টিটিউট অব কমিউনিটি অপথালমোলজি’র বিএসসি ইন অপটোমেট্রি কোর্সের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী উম্মে সাদিয়া ইসলাম বলেন, আমরা এখানে ভর্তি হয়েছি–অপটোমেট্রিস্ট হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার জন্য। ভর্তির আগে আমাদের প্রসপেক্টাসে লেখা ছিল– পাস করার পর আমরা স্বাধীনভাবে প্র্যাকটিস করতে পারবো। এখন দেখা যাচ্ছে, এবার ১৬তম ব্যাচের ভর্তির প্রসপেক্টাসে সেটি তুলে দেয়া হয়েছে। আমরা যখন কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করেছি–তারা বলেছেন, তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে ডাক্তারদের সহকারী হিসেবে কাজ করার জন্য। তখন আমরা বলেছি– তাহলে আমাদের প্রসপেক্টাসে কেন স্বাধীনভাবে প্র্যাকটিস করতে বলা হয়েছে। এখন যেহেতু প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হচ্ছে–তখন এবার সেটি তুলে দেয়া হচ্ছে। এটা বাকি ১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণার সামিল। এখন যদি স্বাধীনভাবে আমরা প্র্যাকটিস করতে না পারি, তাহলে আমরা বের হয়ে কি করব। আমরা সব সময় চেয়েছি– আমাদের কারিকুলামটা যেন আন্তর্জাতিকমানের হয়। যাতে ভবিষ্যতে মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি করার সময় সেই কারিকুলাম আমাদের সাপোর্ট করে। এখানে আমাদের কারিকুলামের মান অনেক কম। যা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সাথেও মিলছে না।
১৪ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাব্বির মিয়া বলেন, প্রাইমারি আই কেয়ারের কাজগুলো অপটোমেট্রিস্টরা করেন। কিছু বিষয় আছে যেমন, লো ভিশন, ভিশন থেরাপি, কন্টাক্ট লেন্সসহ নানাবিধ কাজ অপটোমেটিস্ট্রদের দায়িত্বে পড়ে। এখন আমাদের কথা হচ্ছে–আমরা যেনো বাইরের দেশের অপটোমেস্ট্রিস্টরা যেসব প্র্যাকটিস করেন আমরাও যাতে এগুলো করতে পারি। আরেকটা বিষয় হচ্ছে–আমাদের কারিকুলামটা যেন আন্তর্জাতিকমানের করা হয়। এছাড়া কারিকুলামে এক বছরের যে ইন্টার্নশিপ আছে সেটি যেন চালু করা হয়। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে–প্রথম ১৩ ব্যাচ পর্যন্ত ইন্টার্নশিপই ছিল না। ১৪ তম ব্যাচ থেকে এক বছরের জায়গায় ৬ মাসের ইন্টার্নশিপ চালু হয়েছে। এছাড়া তৃতীয় বর্ষ থেকে আমাদের ক্লিনিক্যাল সংযুক্তি দেয়ার কথা থাকলেও সেটি নিয়েও ঝামেলা করছে। গত কয়েকদিন ধরে আমাদের বেশ কিছু দাবির প্রেক্ষিতে সংযুক্তি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এটা তো নিয়ম হতে পারে না।
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের ছেলে হাসপাতালের মেডিকেল ডিরেক্টর এবং ইনস্টিটিউট অব কমিউনিটি অপথালমোলজির একাডেমিক কো–অর্ডিনেটর ডা. রাজীব হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে ইনস্টিটিউট অব কমিউনিটি অপথালমোলজির বর্তমান পরিচালক অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, শিক্ষার্থীরা বেশ কিছু দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। এরমধ্যে হচ্ছে, তারা মেডিসিন ফ্যাকাল্টিতে ফেরত যেতে চায় এবং ইন্টার্নশিপ ১ বছরের চায়। বিএসসি ইন অপটোমেট্রির এই কোর্সটা বাংলাদেশে আর কোথাও নাই। তাই অপটোমেট্রি কাউন্সিলও গঠিত হয়নি। কাউন্সিল থাকলে তারা রেজিস্ট্রেশন নম্বর পেত। এখন কাউন্সিল গঠন করার দায়িত্ব হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। বর্তমান ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে স্বাধীনভাবে প্র্যাকটিস করার কথাটি তুলে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি বড় কিছু নয়। শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়ার বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে।
এদিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গতকাল ইনস্টিটিউট পরিচালক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে– অপটোমেট্রি একটি স্বাধীন হেলথ কেয়ার প্রফেশন এবং এটি কোনো প্রযুক্তি বিষয় নয়। বরং এটি আইএসসিও কোড–২২৬৭ অনুযায়ী একটি স্বীকৃত স্বাস্থ্যসেবা পেশা যা দন্তচিকিৎসা (বিডিএস), ফিজিওথেরাপি বা ফার্মেসির মতোই মেডিকেল সায়েন্সের একটি শাখা। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অপটোমেট্রি বিষয়টি নিম্নলিখিত মেডিসিন অনুষদের অধীনে পরিচালিত হয়, এরমেধ্য রয়েছে–ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টো, ইউএনএসডব্লিউ অস্ট্রেলিয়া এবং হংকং পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি।